উদ্বোধন করবেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী

শনিবার শুরু হচ্ছে মোংলা বন্দরের ইনারবার ড্রেজিং কাজ

মো.মাসুদ রানা,মোংলা

আপডেট : ০৮:৫৭ পিএম, শুক্রবার, ১২ মার্চ ২০২১ | ৯৫৭

মোংলা বন্দরে দেশী-বিদেশী জাহাজের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলছে। এছাড়াও বর্তমান সরকারের বিদেশের সাথে বানিজ্যিক সম্পর্ক সুদৃর হওয়ায় নৌ-পথে পণ্য আনা-নেয়ার জন্য মোংলা বন্দর ব্যাবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে অনেক দেশের ব্যাবসায়ীরা। তাই নৌ-পথ দিয়ে নির্ভিগ্নে দেশী-বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজ আসা-যাওয়ার জন্য বন্দর চ্যানেলের নব্যতা ধরে রাখায় ইতি পুর্বে আউটারবার ড্রেজিং সম্পন্ন করেছে মোংলা বন্দর। আর বাকি ইনার বারে ড্রেজিং।

বর্তমানে ৭শ ৯৩ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে শুরু হতে যাচ্ছে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের সেই ইনারবার ড্রেজিংয়ের কাজ। ১৩ মার্চ শনিবার পশুর চ্যানেলের প্রায় ১৯ কিলোমিটার নদী পথের এ খনন কাজের উদ্বোধন করবেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। সাথে থাকবের কেসিসি মেয়র ও মন্ত্রনালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা।

এ ব্যাপারে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের নবাগত চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ইনারবারে (অভ্যন্তরীণ চ্যানেল) ড্রেজিং হলে বন্দরে সাড়ে ৯ মিটার থেকে ১০ মিটার গভীরতা সম্পন্ন বড় বড় জাহাজ অনায়াসেই বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে। বর্তমান বন্দরের চ্যানেল গুলোতে ৭ মিটার গভীরতা সম্পন্ন জাহাজ ভেড়ার সক্ষমতা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ইনারবার ড্রেজিংয়ের ফলে বন্দরের কার্যক্রমে গতিশীলতা আরো অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। বন্দরকে ঘিরে নানামুখী উন্নয়নের কারণে এ বন্দরে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে দ্বিগুন জাহাজের আগমন বেড়েছে। তাই বন্দরের সক্ষমতা আর বানিজ্য বাড়াতে চ্যানেল ড্রেজিংয়ের বিকল্প নাই।

বন্দর কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানায়, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মৃত বন্দরে পরিণত হয় এ মোংলা বন্দর। সে সময় বন্দরটি অচল হয়ে পড়ার মূল কারণ ছিল বন্দরের আউটার ও ইনারবার চ্যানেলে ড্রেজিং না করা। যার কারণে ওই সময়ে চরম নাব্যতার সংকট দেখা দেয়ায় জাহাজ আসতো না এ বন্দরে। মাসের পর মাস জাহাজ শূণ্য হয়ে অচলাবস্থা ছিলো বন্দর জুড়ে। বন্দরের আউটারবার (বহিঃনোঙ্গর) ও ইনারবারে (অভ্যন্তরীণ) নাব্যতা সংকটের কারণে কন্টেইনারবাহী ৯ দশমিক ৫০ মিটার গভীরতা সম্পন্ন জাহাজ মোংলা বন্দরে সরাসরি প্রবেশ করতে না পারায় কন্টেইনারাইজড মালামাল আমদানি-রপ্তানিতে ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হয়ে আসছেন। তাই বন্দরের জেটিতে স্বাভাবিক জোয়ারে ৯ দশমিক ৫০ মিটারের অধিক গভীরতা সম্পন্ন জাহাজ আনার জন্য পশুর চ্যানেলের জয়মনিরঘোল হতে বন্দর জেটি পর্যন্ত প্রায় ১৯ কিলোমিটার নৌপথ ইনারবারে ২১৬.০৯ লাখ ঘন মিটার ড্রেজিং করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।


বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক) ও ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্পের পরিচালক শেখ শওকত আলী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭শ ৯৩ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২০২২ সালের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

ড্রেজিং কার্যক্রমের ঠিকাদার হিসেবে চীনা কোম্পানি জেএইচসিইসি এবং সিসিইসিসি’র সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলার জন্য প্রায় ১৫শ একর জমির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পশুর নদীর তীরবর্তী অল্প গভীরতা সম্পন্ন প্রায় ৫শ একর জমিতে জিওটেক্সটাইল টিউব দ্বারা ডাইক নির্মাণ করে মাটি ফেলা হবে বলেও জানিয়েছে প্রকৌশলী শেখ শওকত আলী।

এদিকে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) মাধ্যমে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) করা হয়। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত সমীক্ষায় মোংলা বন্দরে ২০২৫ সালে ৮.৭২ লাখ টিইউজ কন্টেইনার এবং ২০৫০ সালে ৪৫.৩২ লাখ টিইউজ কন্টেইনার ও ৩০ হাজারের বেশী গাড়ি হ্যান্ডলিংয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়।

মূলত এরপরই প্রকল্পটি চুড়ান্তভাবে হাতে নেওয়া হয়। বন্দরে অধিক গভীরতা সম্পন্ন জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য পশুর চ্যানেলের ইনারবারে নাব্যতা বৃদ্ধি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা একান্ত জরুরি বলে মনে করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

বন্দর ব্যবহারকারী মেসার্স নুরু এন্ড সন্স এর সত্বাধিকারী (ইষ্টিভিডরস)আলহাজ্ব এইচ এম দুলাল বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ড্রেজিং প্রকল্পটি সুন্দর ভাবে বাস্তবায়ন হলে ২০২১ সালের পর ব্যাবসায়ীদের মোংলা বন্দরের ব্যবহার বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে যেসব কন্টেইনারবাহী জাহাজ আগমণ করে এসব জাহাজ পূর্ণ লোড অবস্থায় প্রায় ৯.৫০ মিটার ড্রাফটের হয়ে থাকে। নাব্যতা সংকটের কারণে সেসব জাহাজ মোংলা বন্দরে সরাসরি প্রবেশ করতে পারে না। আর ইনারবার ড্রেজিং সম্পন্ন হলে এ সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন বন্দর ব্যাবহারকারীরা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত