মোল্লাহাটে কোরবানীর পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারীরা

এস. কে. শাহীন মোল্লাহাট

আপডেট : ০৪:৫৮ পিএম, রোববার, ৪ জুলাই ২০২১ | ৭৩৯

করোনা মহামারির সময়ে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বাগেরহাটের মোল্লাহাটে এবার কোরবানীর পশু বিক্রি ও দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন গরুর খামারী ও ব্যবসায়ীরা। করোনায় যখন গোটা দেশ থমকে গেছে তখন কোরবানীর পশু বিক্রি বা দাম সঠিক ভাবে পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন মোল্লাহাটের ১৩ শত ৩০ টি গরু লালন পালন কারী খামারী। এছাড়া যারা বাড়িতে বেশী দামের আশায় গরু লালন পালন করছেন তারা গরু বিক্রি করতে পারবে কিনা অথবা সঠিক দাম পাওয়া নিয়ে ভুগছেন হতাশায় ।


তারা মনে করছেন অধিক মুনাফা লাভের আশায় যে গরু তারা লালন পালন করেছেন তারা তার সঠিক দাম না পেলে অনেক খামারীকে পথে বসতে হবে। আর অল্প আয়ের পরিবারের যারা অধিক মুনাফা পাবার আশায় গরু লালন পালন করছে এবার কোরবানিতে গরুর সঠিক দাম না পেলে নাভিশ্বাস উঠবে তাদেরও। করোনার এমন পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোরবানির গরু ব্যবসায়ী ও লালন পালনকারী পরিবার গুলো যাতে করে সঠিক দাম পায় সেদিকে সরকারের সাহায্য চান তারা। তারা আরো বলেন, মোল্লাহাটের দুইটি পশুর হাট উদয়পুর ও গাংনী হাটটি যদি স্বাস্থ্য বিধি মেনে প্রশাসন যদি খুলে দেয় তাহলে আমাদের গরু গুলো বিক্রি করতে পারবো।


উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের তথ্য মতে, কোরবানীতে অন্যান্য বারের চেয়ে একটু বেশী দাম পেয়ে কোরবানীর পশু বিক্রি করে অধিক মুনাফার আশায় মোল্লাহাট উপজেলায় ৪ হাজার ১ শত ৫২টি গরু, ছাগল ও ভেড়া লালন পালন করছেন ১৩ শত ৩০ টি খামারী ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু করোনার কারনে এবার কোরবানিতে পশু বিক্রি করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন খামারী ও ব্যবসায়ীরা, একদিকে গরু বিক্রি আর অন্য দিকে সঠিক দাম পাওয়া নিয়ে চিন্তিত গরুর খামারী ও গৃহস্থ পরিবার।


উপজেলার চরকুলিয়া গ্রামের গরুর খামারী রাজু সরদার বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, এ বছর আমার খামারে দেশী জাতের ১০ টি গরু আছে। কিন্তু করোনার কারনে কোন ক্রেতা আসছেনা, আবার খাবারের দাম ও খুব বেশী একটা গরু প্রস্তুত করতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এমত অবস্থায় যদি গরু বিক্রি করতে না পারি তাহলে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবো। আবার মোল্লাহাটে করোনার কারণে পশুর হাট গুলো বন্ধ রয়েছে। অনলাইনে কিভাবে গরু বিক্রি করতে হয় সেই বিষয়ে ভাল বুঝিনা। তাই প্রশাসন যদি পশুর হাট গুলো খুলে দেয় তাহলে গরু গুলো বিক্রি করতে পারবো।


উপজেলার চাঁদেরহাট এলাকার কাঁকড়ী গ্রামের গৃহস্থ্য খামারী মোঃ নাজমুল মোল্লা বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, আমার খামারে ১৩২৫ কেজি ওজনের একটি গরু রয়েছে। গরুটি আমি এবং আমার পরিবারের লোকজন মিলে ৩ বছর ধরে লালন পালন করছি। সখের বসে গরুটির নাম দিয়েছি হিমালয়, প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আমার গরু দেখতে বাড়িতে ভিড় জমান। আমার গরুর পেছনে প্রতিদিন ঘাস, ফলমূল, শাকসব্জির পাশাপাশি ৭শত -৮ শত টাকার দানাদার খাবার খাওয়াতে হয়। হিমালয়ের দাম ধরা হয়েছে ১৩ লক্ষ টাকা। তবে গরুটির যাতে ন্যায্যমূল্য পাই সেই জন্য সরকারের সহায়তা কামনা করছি।


উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ বিনয় কৃষ্ণ মন্ডল বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, মোল্লাহাট উপজেলা গরু রিষ্ট পিষ্ট করনে বিখ্যাত। গত বছরের এই গরু রিষ্ট পিষ্ট করনের জরিপ অনুযায়ী গরু ছাগল ও ভেড়া ছিল ৪ হাজার ৫ শত ৫৫টি এবার সেই সংখ্যা কমে ৪ হাজার ১ শত ৫২ টি। খামারীদের অতিরিক্ত দামে দানাদার খাদ্য ক্রয় করতে হয়েছে। গরু যখন বিক্রির সময় হয়েছে ঠিক তারা সেই সময়ই হতাশয় ভুগছে তারা গরুর ন্যায্য দাম পাবে কিনা। এসময় যদি স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে উপজেলার পশুর হাট গুলো যদি খুলে দেয় তাহলে খামারী ও ব্যবসায়ীরা তাদের গরু গুলো ন্যায্য দামে বিক্রি করে উপকৃত হবেন। তিনি আরো বলেন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের অনলাইন পেজে পশুর ছবি দিয়ে পশু বিক্রির জন্য খামারীদের সহযোগী ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত