ড্রেজিং প্রকল্পের বালু ডাম্প্রিং এর প্রতিবাদে মানববন্ধনে বক্তারা

কৃষি জমি রক্ষায় প্রয়োজনে রক্ত দিব

মাসুদ রানা,মোংলা

আপডেট : ০৫:৩২ পিএম, শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৫০৪

কৃষি জমি রক্ষায় প্রয়োজনে রক্ত দিব, তার পরেও আমাদের বেঁচে থাকা ও পরিবার নিয়ে জীবন বাঁচানোর অবলম্বন কৃষি জমি, সেই জমিতে মোংলা বন্দরের ড্রেজিংয়ের বালু ফেলতে দেয়া হবে না। চিংড়ী ঘেরও ফসলি জমিতে বালু ফেলে বন্দরের অসাধু কর্মকর্তারা কৃষকদের সাথে জুলুম, অন্যায় ও অবিচার করছে। কৃষিজমি নষ্ট ও কৃষকদের জীবন জিবীকা ধ্বংস করে কথিত উন্নয়ন কর্মকান্ড মেনে নেয়া যায়না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষি জমি রক্ষায় মানববন্ধনে কেন্দীয় নেতারা।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি প্রকৌশলী নিমাই গাঙ্গোলী বলেছেন, শুধু বড় বড় জাহাজ এনে মানুষকে দেখালে হবে না, সুন্দরবনকে ধ্বংশ করে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরী করলে হবেনা। কৃষকদের বাঁচাতে হবে, তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনতে হবে। কৃষকরা প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে ঘেড়াও করে বলবে, দেখে যান কৃষকদের উপর কি জুলুম-অত্যাচার করছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে কৃষকদের জমির ক্ষতি পুরনের দিকে লক্ষ রেখে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছে মোংলা বন্দর।
"কৃষক বাঁচাও উপকূল বাঁচাও দেশ বাঁচাও" শ্লোগানে ৪ সেপ্টেরম্বর শনিবার দুপুরে মোংলা শহরের চৌধুরীর মোড়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি প্রকৌশলী নিমাই গাঙ্গোলী।
মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নে কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা মোঃ আলম গাজীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা ও খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই গাইন, এস এ রশিদ, কৃষক সমিতির খুলনা জেলার নেতা এ্যাডঃ রুহুল আমীন, বাগেরহাট জেলা কৃষক সমিতির নেতা ফরুখ হাসান জুয়েল, খান সেকেন্দার আলী, হুমায়ুন কবির, বানিশান্তা ইউনিয়ন কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা বিশ্বজিৎ মন্ডল, সত্যজিৎ গাইন, অশোক কুমার বৈদ্য, সঞ্জীব মন্ডলসহ আরো অনেকে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পশুর নদীর ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্পের বালু ডাম্প্রিং এর প্রতিবাদে বানিয়াশান্তা, চিলা ও জয়মনি এলাকায় কৃষকদের পক্ষে কৃষি জমি রক্ষায় স্মারক লিপি প্রদান, আন্দোলন সংগ্রামের ও মাবনবন্ধনের আয়োজনের সর্বাধিক সহায়তা করছে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুর আলম শেখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কৃষি জমি নষ্ট করে কৃষকদের জীবন-জীবিকা ধ্বংস করে কথিত উন্নয়ন করা ঠিক নয়। উন্নয়ন হলো মানুষের জন্য কোন গোষ্টির একার নয়। নামমাত্র ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে চিলা ও বানিশান্তা ইউনিয়নে ১৫শ একর ফসলি জমি পশুর নদী খননে ড্রেজিংয়ের বালু ফেলে নষ্ট করছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলে দাবী বক্তাদের।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শওকাত হোসেন বলেন, দেশের সমুদ্র বন্দর মোংলা। ৯০ দশকের মৃত মোংলা বন্দর এখন সচল ও লাভ জনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাই এ বন্দরকে বিশ্ব বানিজ্যিক বাজারে সুনাম ধরে রাখতে এবং বন্দরকে সচল করতে চ্যানেল ড্রেজিংয়ের কোন বিকল্প নাই। তাই সরকার বন্দরের উন্নয়নে প্রথম আউটারবার ড্রেজিংয়ের জন্য ৭শ কোটি টাকা ব্যায় করে ড্রেজিং সম্পুর্ন করেছে। এখন ইনারবার ড্রেজিং হলে বন্দর চ্যানেলে আর সমস্যা থাকে না। দেশী-বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজ সরাসরি আগমন-নির্গমনে কোন সমস্যা সৃষ্টি হবে না। তাই নদী ড্রেজিংয়ের জন্য কৃষকদের ক্ষতি পুরনের কথা মাথায় নিয়ে টাকা বরাদ্ধ রেখে কাজ করছে বন্দর। যা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কৃষকদের হাতে প্রদান করা হবে। তবে সরকারে উন্নয়ন মুলক কর্মকান্ডে ব্যাঘাত বা বন্দরের ক্ষতি ও সুনাম নস্ট করার ষড়যন্ত্র যারা করবে তাদের তালিকা তৈরী করে ব্যাবস্থা নেয়ারও বিধান রয়েছে।
উল্লেখ্য মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের ৭শ ৯৪ কোটি টাকা ব্যায়ে ইনাবার ড্রেজিংয়ের বালু ভরাটের জন্যে ১৫'শ একর জমির প্রয়োজন বন্দর কর্তৃপক্ষের। যার ১২শ একর মোংলার চিলা ও জয়মনি এলাকায় কৃষি জমি এবং বাকি ৩শ একর রয়েছে দাকোপের বানিয়াশান্তা ইউনিয়নে মালিকানাধীন কৃষি জমি। মোংলা উপজেলার চিলা ও জয়মনিতে জমির মালিকদের কিছু না জানিয়ে গত ১৩ মার্চ ড্রেজিংয়ের বালু ভরাটের কাজ শুরু করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত