সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে সরকারী টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রধান শিক্ষক

মোংলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষমতা অপব্যাবহারের অভিযোগ

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ০৭:৫৪ পিএম, বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৫০৫

মোংলা উপজেলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সভাপতির স্বাক্ষর জাল সরকারী অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। টাকা আত্মসাতের বিষয় তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় দায় স্বিকার করে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইলেন প্রধান শিক্ষক ভবেষ চন্দ্র। মোংলায় খাসেরডাঙ্গা পুর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষমতাবান প্রধান শিক্ষক ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থ বছরের স্লিপ ও রুটিন মেন্টনেন্স’র টাকা তুলে নিয়েছে এমন অভিযোগ করেছে বিদ্যালয়ে পরিচালনা কমিটির সভাপতি। করোনা প্রাদুর্ভাবের পুর্বেও তিনি নিজের ক্ষমতার বলে স্কুলে না এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, অহেতুক ছাত্র/ছাত্রীদের শাস্তি দেয়া ও ইচ্ছেমত অতিরিক্ত নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ, পতাকা টাকানো অবস্থায় স্কুলে তালা লাগিয়ে বাড়ীর কাজ করাসহ বহু অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চাপা দেওয়া হয়েছে এ শিক্ষকের আরও বহু অন্যায় অনিয়ম। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিশু-কিশোরদের শিক্ষা নিয়েও চলাচ্ছে প্রতারণা।

উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের খাসেরডাঙ্গা পুর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক্ষ ভবেষ চন্দ্র হাওরাদারের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেছেন স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি, ছাত্র/ছাত্রী ও এলাকাবাসী। ১৯৯১ সালে ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়ীত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি অনিয়ম ও দুর্নিতীতে জড়িয়ে পরে।

অভিযোগ রয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চাপা দেওয়া হয়েছে এ শিক্ষকের আরও অনেক অনিয়ম-দুর্ণীতির। বাড়ী কাছে হওয়ার ফলে স্কুল ও শিশু-কিশোরদের পাঠদান নিয়েও করে আসছিল প্রতারণা। প্রায় সময় তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসের কাজের কথা বলে নিজের ব্যাক্তিগত কাজ করেন বাসায় বসে।

অভিযোগে জানা যায়, গত ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থ বছরে মোংলা উপজেলায় বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনার জন্য টাকা বরাদ্ধ করে সরকার। মিঠাখালী ইউনিয়নের খাসেরডাঙ্গা পুর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বরাদ্ধ হয় এক লক্ষ ১৫ হাজার টাকা।

সরকারের দেয়া এ টাকা স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যৌথ স্বাক্ষরে টাকা উত্তলনে নিয়ম থাকলেও প্রধান শিক্ষক প্রতারনার আশ্রয় নেয়। সভাপতি বিশ্বজিৎ কিত্তুনিয়ার স্বাক্ষর জাল করে সরকারী টাকা উত্তলনের সকল কাগজ পত্র ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকা তুলে নেয় প্রধান শিক্ষক ভবেষ চন্দ্র। বিষয়টি জানাজানি হলে টাকা উত্তলনে বাধা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন সভাপতি।

অন্যদিকে প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির আর প্রতারনা করে সরকারী টাকা আত্মসাৎ করার ব্যাপারে সাবেক সভাপতি ও ছাত্র/ছাত্রীদের অভিবাবকদের বিষয়টি জানায় তিনি। এর আগেও প্রধান শিক্ষকের বাড়ী কাছে হওয়ায় স্কুলে দেড়িতে আসা, অতিরিক্ত পরীক্ষার ফি আদায়, খেলাধুলার সামগ্রী না কিনে টাকা আত্মসাৎ, ২০১৯-২০ ও ২০-২১ অর্থ বছরে বরাদ্ধ পাওয়া এক লক্ষ পনের হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অথচ নির্বিকার উপজেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে প্রায় সময়ই প্রধান শিক্ষক স্কুলে না এসে বাড়ীর কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকতেন। স্কুল সংলগ্ন বাড়ী হওয়ায় দীর্ঘ ৩০ বছর তিনি অনিয়ম ও দুনির্থীর মাধ্যমে সময় পার করে আসছেন। এর আগে বহু অনিয়ম ও দুর্নিতীর অভিযোগ তদন্তে সত্যতা প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করেন উপজেলা শিক্ষা অফিস, কিন্ত কোন ব্যাবস্থাই নেয়নী কর্তৃপক্ষ।

সভাপতির দেয়া অভিযোগের সুত্রধরে তাকে সোকাজ করে এবং গতকাল সরেজমিনে তদন্তে জান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন্ত পোদ্দার। সহকারী শিক্ষকসহ সভাপতি, সাবেক সভাপতি ও উপস্থিত অভিভাবকদের কাছ থেকে লিখিত প্রমান সংগ্রহ করেন শিক্ষা কর্মকর্তা। এতে টাকা আত্মসাতের বিষয় সত্যতা পাওয়ায় অন্যান্য খরচ বাদে ৪৬ হাজার টাকা তার কাছে আছে বলে তার ভুল স্বিকার করে উপস্থিত সকলের সামনে ক্ষমা চান প্রধান শিক্ষক ভবেষ চন্দ্র।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ভবেষ চন্দ্র হাওলাদার সত্যতা স্বীকার করে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, সময় সল্পতার কারনে স্কুলের কাজের জন্য সরকারের দেয়া টাকার কাগজপত্রে সভাপতির সাথে অলোচনা করেই স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে। স্কুলের কাজে কিছু টাকা খরচ হয়েছে, বাকি টাকা আমার কাছেই রয়েছে, সভাপতি বাবু যখনই চাইলে দিয়ে দিবো।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিশ্বজিৎ কিত্তুনিয়া বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, প্রধান শিক্ষক ভবেষ চন্দ্র আমার স্বাক্ষর জাল করে স্কুল রুটিন মেন্টেনেন্স ও স্লিপের নামে সরকারী বরাদ্ধের টাকা আত্মসাতে ব্যর্থ হয়েছে, তবে তার ভুল স্বীকার করে জনসম্মুখে ক্ষমা চেয়েছেন এটাই স্বার্থকতা।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুমোন্ত সুমন্ত পোদ্দার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, প্রধান শিক্ষক ভবেষ চন্দ্রের বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযোগ পেয়েছি কিন্ত সভাপতির লিখিত অভিযোগে সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে সত্যতা পেয়েছি। সকলে অভিযোগ লিখিত ও মৌখিক ভাবে নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে অনুরোধ করা হবে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানায় তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত