বাগেরহাট টুয়েন্টিফোর ডটকম এ সংবাদ প্রকাশের পর

নেতাকর্মীদের দখলে থাকা হোজির  নদীর বাঁধ অপসারণ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ০৭:৩৫ পিএম, সোমবার, ৪ জুলাই ২০২২ | ৬০৫

দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দখলে থাকা বাগেরহাটের হোজির নদীর অবৈধ বাঁধ ও নেট-পাটা অপসারণ শুরু হয়েছে। সোমবার (০৪ জুলাই) দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলামের নেতৃত্বে হোজির ব্রীজের নিচের বাঁধ অপসারণ শুরু করা হয়। এসময় সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদাউস আনছারি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি, জেলা পুলিশের সদস্য, ডেমা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রামপুলিশসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। পর্যায়ক্রমে এই নদীর সব বাঁধ ও নেটপাটা অপসারণ করা হবে। দীর্ঘদিন পরে নদীটি অবমুক্ত হওয়ায় খুশি স্থানীয়রা।

বাগেরহাটের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম বাগেরহাট টুয়েন্টিফোর ডটকম এ “বাগেরহাটে হোজির নদী দখল করে ২০ নেতাকর্মীর মৎস্য ঘের” শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ায় বঙ্গবন্ধু পরিবারের তৃত্বীয় প্রজন্ম শেখ তন্ময় এমপির নজরে আসে। এলাকার সাধারন মানুষের ভোগান্তির অবসানের জন্য বাঁধ অপসারণের নির্দেশ দেন।


স্থানীয়রা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই নদীটিতে বাঁধ দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাছ চাষ করতেন। আমরা এই খাল থেকে একটা মাছও ধরে খেতে পারতাম না। গ্রামবাসীর প্রয়োজনে এই খালে পানি ওঠানো নামানো হত না। এই নদীর পানি ব্যবহার করা হত মাছচাষীদের সুবিধার্থে। নদীটির বাঁধ অপসারণ হওয়ায় আমরা খুবই খুশি হয়েছি। তারা তারুণ্যে অহংকার শেখ তন্ময় এমপিকে ধন্যবাদ জানান।


মোঃ আব্বাস নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, নদীর বাঁধ কাটায় আমাদের খুব ভাল হয়েছে। এখন নদী থেকে মাছ ধরতে পারব, নদীতে গোসল করতে পারব, নদীতে নৌকা চালাতে পারব। নিজেদের প্রয়োজন মত এই নদী ব্যবহার করতে পারব।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ আরজু বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, সরকারি নদী এমপি সাহেবের নির্দেশে প্রশাসন অবৈধ দখলমুক্ত করেছে। এতে এলাকার মানুষের উপকার হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ করে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। উপজেলা প্রশাসন থেকে পাঁচ বছর আগেও একবার এই নদী দখলমুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু বাঁধ কেটে দেওয়ার কিছুদিন পরে আবারও বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু হয়, এটা দেখবে কে?।


তবে এই নদীতে মাছ চাষ করায় গ্রামের সবার উপকার হচ্ছে দাবী করে ডেমা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নকিব বিল্লাল হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, এই নদীতে মাছ চাষ করলে গ্রামের মানুষসহ স্থানীয় কৃষকরা বেশি উপকৃত হয়। কি ভাবে উপকার পায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন একটা সময় আসে যখন বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আবার লবণ পানির ফলে ইরি ধান নষ্ট হয়ে যায়। এগুলো যারা নদী দখল করে ঘের করতিছে তারা দেখাশুনা করে। ফলে বৃষ্টির পানির নেমে গিয়ে জলাবদ্ধতা হয় না আবার লবণ পানি ঢুকতি পারে না।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, বাগেরহাট টুয়েন্টিফোর ডটকম সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখেছি হোজির নদীতে মাটির বাঁধ, পাটা ও নেট দিয়ে মাছচাষসহ সব ধরণের অবৈধ কাজ হচ্ছিল। আমরা হোজির ব্রীজের নিচে দেওয়া বাঁধটি অপসারণ করেছি। এই নদীর অন্যান্য স্থানে যেসব বাঁধ, নেটপাটা রয়েছে, সেগুলোও অপসারণের কাজ চলছে। প্রয়োজনে আরও দুইএকদিন এই নদীকে অবৈধ দখলমুক্ত করতে কাজ করা হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে কেউ যদি এই খালে অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করতে চায় তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার হুশিয়ারী দেন উপজেলার শীর্ষ এই কর্মকর্তা।


উল্লেখ, ২০০৯ সাল থেকে বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নে অবস্থিত সাড়ে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের হোজির নদীর ৬ কিলোমিটারে বাঁধ দিয়ে সমন্বিত ভাবে মাছ চাষ করতেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ২০ থেকে ২৫ জন নেতাকর্মী। ৩০ জুন থেকে ৩ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে হোজির নদী দখল নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। এরপরেই এই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে নামলো প্রশাসন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত