নিলামের জন্য দরপত্র জমা হচ্ছে নামি-দামী ১০২টি রিকন্ডিশন গাড়ী

নিলামের অপেক্ষায় মোংলা বন্দরে প্রায় সাড়ে ১৫শ বিলাশ বহুল গাড়ী

মাসুদ রানা, মোংলা 

আপডেট : ১১:২৫ পিএম, মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০২২ | ৫৪৪

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরেই মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ী আমদানী বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন। তাই বন্দরে গাড়ী রাখার জায়গা খালি করা ও শুল্ক জটিলতা দূর করে রাজস্ব আদায়ের লক্ষে নামি-দামী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১০২টি রিকন্ডিশন গাড়ী মঙ্গলবার নিলামে তুলছে মোংলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন নিলামের অপেক্ষায় সেডে পরে থাকা প্রায় এক হাজার ৫৩০টি গাড়ীর মধ্য থেকে ১০২টি গাড়ী নিলামে তোলা হচ্ছে। বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, ঢাকার সাথে এ বন্দরের দুরত্ব কম ও যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভাল হওয়ায় মোংলা বন্দর ব্যাবহারে আগ্রহী হচ্ছে দেশ-বিদেশী আমদানী-রপ্তানীকারক ব্যাবসায়ীরা।


মোংলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যবসায়ীদের আমদানী করা রিকন্ডিশন গাড়ী মোংলা বন্দর দিয়ে খালাস করে তা জেটির ইয়ার্ড ও সেডে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়। এসব গাড়ি আমদানীকারকরা ৩০ দিনের মধ্যে বন্দর জেটি থেকে ছাড় করানোর নিয়ম থাকলেও ব্যবসায়ীরা তা করেননি। ফলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিয়মানুযায়ী (৪ অক্টোবর) মঙ্গলবার নামি-দামী রিকন্ডিশন এ গাড়ীগুলো বিক্রির জন্য নিলামে তুলছে।

মোংলা বন্দরের ইয়ার্ড ও সেডে দীর্ঘদিন পরে থাকা এক হাজার ৫শ ৩০টি গাড়ী শুল্ক জটিলতার কারনে নিলামের অপেক্ষায় বন্দরের পরে ছিল। তাই শুল্ক সংক্রান্ত কাগজ পত্র ও আইনী জটিলতা শেষে নিলামের অপেক্ষায় থাকা ১৫শ ৩০টি গাড়ী থেকে ১০২টি গাড়ী নিলামের জন্য গত ২৯ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহবান করে মোংলা কাষ্টমস হাউজ। এর মধ্যে রয়েছে নিশান, টয়োটাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সেডান, এসইউভি ও মাইক্রোবাস, ডাম্পট্রাক ও কংক্রিট মিক্সচার মেশিন ট্রাক। এ ছাড়া খালি গ্যাস সিলিন্ডারসহ ১১২টি লটের অনুকুলে আমদানি করা পণ্যও নিলামে তোলা হচ্ছে।


২ থেকে ৪ অক্টোবর সকাল ৮টার মধ্যে ই-অকশনের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে নিলামে অংশ নিতে পারবে নিলাম ক্রেতারা। অনলাইনে অংশ নিতে দরপত্র কেনার প্রয়োজন নেই বলে জানায় কাস্টমস তবে সিল করা টেন্ডারের ক্ষেত্রে গত ২ অক্টোবর পর্যন্ত ২০০ টাকা অফেরতযোগ্য দরপত্র কিনে অংশ নিয়েছে নিলাম ক্রেতা অনেকেই। মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মোংলা, খুলনা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম কাস্টমসে রাখা টেন্ডার বাক্সে দরপত্র জমা দিতে পারবে। ১১ অক্টোবর সকাল ১০টার সময় খুলে সকলের সামনে ১০২টি বিলাশবহুল গাড়ী নিলামের জন্য জমা দেয়া দরপত্র উম্মুক্ত করা হবে। পরে সর্বোচ্চ দরদাতাকে তাদের নিলামে ক্রয় করা গাড়ী পরবর্তীতে বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে জানায় মোংলা কাস্টমস’র নিলাম শাখা কর্তৃপক্ষ।

মোংলা বন্দরের পণ্য আমদানীকারক ব্যাবসায়ী এইচ এম দুলাল জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকার সাথে মোংলা বন্দরের দুরত্ব অনেক কমেছে তাই গাড়ী আমদানীকারকরা মোংলা বন্দর দিয়ে আগের তুলনায় দ্বিগুন গাড়ী আমদানী করছে। ফলে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে, যার কারণে ব্যবসায়ীরাও লাভবান হচ্ছে, আর বৃদ্ধি পাচ্ছে বন্দরের রাজস্ব।


মোংলা বন্দরের সদস্য হারবার ও মেরিন কমডোর আব্দুল ওয়াদুদ তরফদার বলেন, দেশে যতগুলো গাড়ী আমদানী হয় তার ৬০ ভাগ মোংলা বন্দর দিয়ে খালাস হচ্ছে। আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান যদি সময় মতো এ গাড়ীগুলো ছাড় করিয়ে নেয় তাহলে বন্দরের অভ্যান্তরে নতুন করে গাড়ী রাখার জায়গা হবে, পাশাপাশী রাজস্বের সাথে বন্দরের ব্যবসা-বানিজ্যের সম্ভাবনা আরো বৃদ্ধি পাবে।

মোংলা কাস্টমস হাউজ’র যুগ্ন কমিশনার মুহাম্মদ মাহফুজ আহমদ বলেন, মোংলা কাস্টমস হাইজের রাজস্ব আয়ের একটি বড় অংশ আসে গাড়ী আমদানীর মাধ্যমে। তাই আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান তাদের আমদানী করা গাড়ীগুলো সময় মতো ছাড় করিয়ে নিলে তারাও লাভবান হবে, তার সাথে সরকারের রাজস্ব ক্ষাতও আরো তরান্নিত হবে। তবে মোংলা বন্দরে কোন জাহাজ জট নাই, বন্দর কর্তৃপক্ষ সব সময় ব্যবসায়ীদের সহযোগীতা ও উৎসাহ যোগান দিচ্ছে। দেশ-বিদেশী ব্যবসায়ীদের মোংলা বন্দর ব্যবহারের আহবান জানান মোংলা কাস্টমস’র এ যুগ্ন কমিশনার।

গত অর্থ বছরে মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি হয় ২০ হাজার ৮০৮টি। আর পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় পর জুলাই-আগষ্ট এ দুই মাসে এ বন্দরের গাড়ী আমদানী হয়েছে ৪৩২৪টি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত