মরণ ঘাতক ভাইরাস থেকে বাঁচতে

সুন্দরবনে বন্যপ্রানীর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ শুরু

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ০৮:৩৭ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০২২ | ৩৬৪

সুন্দরবনে দেশ-বিদেশী পর্যটকদের সংষ্পর্শে আসা বন্য প্রানীর শরীরে বহনকরা বিভিন্ন ভাইরাস ও রোগ জীবানু নির্ণয়ের জন্য নমুনা সংগহ্র শুরু করছে বন্যপ্রানী বিশেষজ্ঞ একটি মেডিকেল টিম। চলমান বন্য প্রানীর শরীর থেকে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে মহামারী ছড়িয়ে পরার কারণেই এমন উদ্দ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। সুন্দরবনে প্রজনন কেন্দ্রটি সৃষ্টির ২০ বছর পর এই প্রথম বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটক ষ্পটগুলোতে খাচায় সংরক্ষিত এবং উম্মুক্ত ভাবে চলাচল করা বন্যপ্রানীদের রক্তের নমুনা নিয়েছে তারা। বন বিভাগ বলছে, বন্যপ্রানীর শরীরে বহনকরা বিভিন্ন মারণ ঘাতক ভাইরাস বনের সৌন্দার্য ঘুরে দেখতে আসা পর্যটকদের মাবনদেহে ছড়িয়ে পরতে পারে এমন সন্দেহে বন্য প্রানীদের পরিক্ষা-নিরিক্ষার জন্য এ উদ্দ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন বিভাগের সন্দেহ সঠিক হলে প্রয়োজনে সুন্দরবনের সকল বন্যপ্রানীদের পরিক্ষা ও চিকিৎসার আওতায় আনা হবে।

বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানায়, সুন্দরবনের মনোরম পরিবেশের সৌন্দার্য উপভোগ করার জন্য দেশ-বিদেশী পর্যটকরা ভ্রমনে এসে বনের সুন্দরী বন্যপ্রানীদের দেখলেই একটু ছুয়ে দেখতে মনে চায় অনেকেরই। কেউ বন্যপ্রানীর কাছে গিয়ে ছবি তুলে আবার কেউ ছোট ছোট শিশু-কিশোরদের নিয়ে নিজ হাতে খাবার খাওয়াতে পছন্দ করেন। তবে অনেকেই জানে না এ বন্যপ্রানীদের শরীরে বহন করতে পারে মরণ ঘাতক বিভিন্ন রোগের ভাইরাস ও জিবানু। তাই বন বিভাগের গ্রহন করা “সুফল নামের প্রকল্পের” মাধ্যমে দেশে যতগুলো বন্যপ্রানীর অভায়রণ্য, প্রজনন কেন্দ্র বা বিভিন্ন জায়গা থেকে সংরক্ষনকরা বন্যপ্রানী রয়েছে, সে সকল প্রানীদের শরীর থেকে রোগ বা রোগের ভাইরাস নির্নয় করার জন্য রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। অন্যান্য জায়গার ন্যায় গেল সপ্তাহে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্র থেকে এই প্রথম সরাসরী মানুষের সংষ্পর্সে আসা ১০টি হরিণ ও ১০টি বানরের রক্তের নমুনা নেয় ৫ সদস্যের বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম। চলতি বছরের জানুয়ারীতে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ চলবে আগামী ২০২৩ সালে জুন পর্যন্ত। আর পর্যাক্রমে নেয়া হবে সকল প্রানীর রক্তের নমুনা।


তারা বলছে, দেশের বেশ কয়েকটি বন্যপ্রানী অভায়রন্য রয়েছে, যেমন কেশপপুর হনুমানের অভায়রণ্য, মৌলভী বাজার শিপ পাঞ্জি ও উল্লুক’র অভায়রণ্য, মাদারীপুর বানর ও গাজীপুর সাফারী পার্ক সহ যে সকল জায়গায় বন্যপ্রানী বসবাস করছে, সেখান থেকে ওই সকল প্রানীর শরীর থেকে রক্তের নমুনা নেয়া হবে। তবে সুন্দরবনে সরকারী প্রজনন কেন্দ্রটির স্থাপিত হওয়ার পর এই প্রথম বন্যপ্রানীদের শরীর থেকে রক্ত নিয়ে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। আর যেগুলো প্রানীর নমুনা নেয়া হয়েছে তার প্রতিবেদন আগামী নভেম্বর শেষের দিকে প্রকাশ হবে। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পরার কারণে এবং এখানে প্রতিদিন শত শত দেশ-বিদেশী মানুষ সুন্দরবনে ভ্রমনে আসসে এবং বন্যপ্রানীর সংস্পর্সে আসে তাই এমন উদ্দ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ।


বন বিভাগের বেটানারী সার্জন ও বন্যপ্রানী রোগ নির্ণয় গবেষক ডাঃ নিজাম উদ্দিন চৌধুরী ও বন বিভাগের সুফল প্রকল্পের সরকারী গবেষনা কর্মকর্তা ডাঃ রচিউল হাসান বলেন, বন্যপ্রানীদের বহনকরা করোনা ভাইরাস, বার্ডফ্লু, নিপা ভাইরাস ও টিবি সহ বেশ কিছু বড় বড় রোগের ভাইরাস বা জিবানু বহন করতে পারে বন্যপ্রানী, আর এ ধরণের বন্যপ্রানীর সংষ্পর্সে আসলে মানবদেহে প্রবেশ করে বড় ধরণের রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ক কর্মকর্তা ফরেষ্টার হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ২০০২ সালে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রেটি সরকারী ভারে চালু করা হয়েছে। সে সময় থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত অনেক পর্যটকদের কুমির ও বানরে কামরে আহতও করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কারও কোন ক্ষতি হয়নী। আমাদের বন বিভাগের পক্ষ থেকে আহত ব্যাক্তিকে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা ও ওসুধ দেয়া হয়েছে, যাতে পরবর্তীতে কোন ব্যাদিতে আক্রান্ত না হয়। এছাড়া সংরক্ষন করা বা উম্মুক্ত অবস্থায় রাখা বন্যপ্রানীদের শরীরে এখন পর্যন্ত কোন রোগ বা ভাইরাসের সন্ধানও পাওয়া যায়নী। আর বন্যপ্রানীদের সংষ্পর্সে কোন পর্যটকদেরও কোন রোগ বা ক্ষতির সংবাদ পাওয়া যায়নী। তার পরেও সন্দেহ থাকায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে এ উদ্দ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।


বিলুপ্ত প্রজাতির বন্যপ্রানী প্রজনন ও বংশ বৃদ্ধি জন্য ২০০২ সালে সরকারীভাবে পূর্ব সুন্দরবনের করমজলে দেশের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি স্থাপিত হয়। যেখানে ১৯৫টি কুমির, ৯৬টি হরিণ ছাড়াও উম্মুক্ত ভাবে শহাস্রাধিক বানর সহ অন্যান্য বন্যপ্রানী রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত