মেহেদীর রং মোছার আগে ঝরে গেল দিপ্তীর প্রাণ

চিতলমারী প্রতিনিধি

আপডেট : ০৬:৫৩ পিএম, রোববার, ৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ৯৫৪

ভালবাসা গলার ফাঁস হলো দিপ্তীর। মেহেদীর রং মোছার আগে অকালে ঝরে গেল তার প্রাণ। শাশুড়ী, ননদ ও স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে মারা গেল সে। এমন দাবি মৃতের পরিবার ও স্বজনদের। রোববার (৪ ডিসেম্বর, ২০২২) সকাল ১০ টায় পুলিশ দিপ্তী মন্ডলের (১৮) মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর, ২০২২) রাত ৯ টায় চিতলমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। দিপ্তী মন্ডল চিতলমারীর সরকারি বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের মেধাবী ছাত্রী ও বাগেরহাট সদর উপজেলার হালিশহর গ্রামের তারক মন্ডলের ছোট মেয়ে। সে চলতি (এ বছর) এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল।

পুলিশ, হাসপাতাল, কলেজ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ মাস আগে দিপ্তী মন্ডল পরিবারের অমতে ভালবেসে বাগেরহাট সদর উপজেলার সাজোখালী গ্রামের রণজিৎ পাত্রের ছেলে নয়ন পাত্রকে (২৬) বিয়ে করে। বিয়ের পর বাবা তাকে তেজ্যকণ্যা ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই শ্বশুর বাড়ি থেকে নেমে আসে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে সে সইতে না পেরে গত ৩০ নভেম্বর পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন সরকারি বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের লাইব্রেরীয়ান সুচিত্রা রাণী মল্লিকের বাসায়। সেখানে এসে তিনি ১ ডিসেম্বর পৌরনীতি পরীক্ষা দেন। শনিবার (৩ ডিসেম্বর, ২০২২) বিকেলে তিনি সুচিত্রা রাণী মল্লিকের চিতলমারী মহিলা কলেজ রোডের ভাড়া বাসায় সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। বিকেল ৫ টায় তাকে চিতলমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক মোঃ সুমন তালুকদার মৃত বলে ঘোষণা করেন।


দিপ্তী মন্ডলের মা কাঞ্চন মন্ডল ও দিদিমা পারুল বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, শাশুড়ী, ননদ ও স্বামী ওকে নির্মম ভাবে নির্যাতন করত। মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন সইতে না পেরে দিপ্তি ঘর ছেড়েছে এবং গলায় ফাঁস দিয়েছে।


সরকারি বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের লাইব্রেরীয়ান সুচিত্রা রাণী মল্লিক বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘দিপ্তী মন্ডল আমার প্রতিবেশী ও কলেজের মেধাবী ছাত্রী ছিল। শ্বশুর বাড়ির অত্যাচার-নির্যাতন সইতে না পেরে দিপ্তি এ পথ বেছে নিয়েছে। এছাড়া বাবা তেজ্যকণ্যা করায় এখানেও সে আশ্রয় পায়নি। তাই ভালবাসাই গলার ফাঁস হলো দিপ্তীর।’


নাম না প্রকাশ করার শর্তে দিপ্তি মন্ডলের গ্রামবাসিরা বলেন, ‘ভালবেসে ঘর ছেড়েছিল দিপ্তী। কিন্তু বাঁচতে পারেনি। যারা তাকে মরতে বাধ্য করেছে আমরা তাদের বিচারের দাবি জানাই।’

ঘটনার পর থেকে দিপ্তীর স্বামী নয়ন পাত্র ও তাঁর পরিবারের লোকজন পলাতক এবং নয়নের ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় তাঁদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক মোঃ সুমন তালুকদার বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, কলেজ ছাত্রী দিপ্তী মন্ডলকে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছিল।

চিতলমারী থানার পরিদর্শক এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, খবর পেয়ে কলেজ ছাত্রী দিপ্তী মন্ডলের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠোনো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত