পলিমাচিং পদ্ধতিতে বেগুন-১২ চাষ করে শাওন এখন চাষিদের অনুপ্রেরনা

পি কে অলোক

আপডেট : ১২:১২ এএম, বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩ | ৪৫৩

বাগেরহাট সদর উপজেলার রাখালগাছি ইউনিয়নের দরি-রসুলপুর গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবক মোঃ শাওন শেখ পলি মাচিং পদ্ধতিতে উচ্চফলনশীল বারি বেগুন-১২ চাষ করে তিনি এখন সকল চাষিদের অনুপ্রেরনা জুগিয়েছেন। একজন মেধাবী শিক্ষিত যুবক হয়েও নিরাপদ সবজী চাষে এধরনের অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়ে তিনি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাবলম্বি হয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তিনি যে মহতী উদ্যোগ গ্রহন করেছেন তা নিয়ে সকলের মাঝে রীতিমত সাড়া জাগিয়েও ফেলেছেন। শুধু তাই নয়, নিজ বাড়ীর আঙ্গিনায় যে টুকু জমি রয়েছে সেখানেও তিনি নানাপ্রকার সবজি চাষ করে নিজের ও পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করছে। তিনি একজন সফল চাষি হিসাবে ব্যপক পরিচিতি অর্জন করেছেন।

জানা গেছে, দরি রসুলপুর গ্রামের শেখ আবুল হোসেন এর অর্নাস দ্বীতিয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র মোঃ শাওন শেখ তার বাবার নিজ জমির মরে যাওয়া পানের বরজে তিনি সবজি চাষ করার পরিকল্পনা গ্রহন করেন। সে মোতাবেক রাখালগাছি ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দীপ্ত কুমার ঘোষের পরামর্শক্রমে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরির্বতন অভিযোজন প্রকল্পের সহায়তায় পলি মার্চিং সংগ্রহ করে মাত্র ১০কাটা জমিতে তিনি পলি মাচিং পদ্ধতিতে উচ্চফলনশীল বারি বেগুন-১২ চাষ করার পরিকল্পনা গ্রহন করেন। সে মোতাবেক নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি খুলনার দৌলতপুর হটিকালচার সেন্টার হতে বেগুনের চারা ক্রয় করে তা রোপন করেন। এই পলি মার্চিং পদ্ধতিতে বেগুনের চাষ করলে ক্ষেতে আগাছা জন্মে না, তাছাড়া সার কীটনাশক ও সেচ তুলনা মুলক ভাবে অনেক কম লাগে। তাতে করে ক্ষেতে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন তেমন একটা হয়না বললে চলে, যে করনে তিনি পলি মার্চিং পদ্ধতিতে বেগুনের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ফেব্রয়ারী মাস হতে তিনি ক্ষেতের বেগুন কাটা শুরু করেছেন, এক একটা বেগুনের ওজন প্রায় এক থেকে দেড় কেজির মত। ১০কাটা জমিতে এপর্যন্ত তিনি প্রায় ৮০মন বেগুন কেটেছেন। উপযুক্ত পরিচর্যা করতে পারলে ৭০/৮০মন ফলানো সম্ভব। সপ্তাহে তিনি দুইবার করে বেগুন কেটেছেন, সেই হিসাবে মাসে ৮বার কাটা সম্ভব। এপযন্ত তিনি প্রায় ৮০মন বেগুন কেটে বাজারে ৪০টাকা দরে গড়ে বিক্রয় করেছেন। কৃষক শাওন শেখ এর মাতা আনোয়ারা বেগম বলেন, সে যখনী সময় পাই তখনী ক্ষেতে গিয়ে বেগুনের পরিচর্যা করে, শুধু তাই নয়, বেগুন ক্ষেতের চতুন পার্শ্বে ও বাড়ির আঙ্গিনায় সে আরো নানা ধরনের পুষ্টিকর সবজির চাষ করেছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দীপ্ত কুমার ঘোষের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের বিষয়টি মাথায় রেখে ক্ষেতে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, ইয়োলো ট্রাপ ও আলোক ফাঁদ ব্যবহার করা হয়েছে। এই তিন ফাঁদ ব্যবহার করলে রোগ বালাই কম হয়। তাছাড়া ওষুধ সার ও সেচ কম লাগায় উৎপাদন খরচ অনেকাংশে কমে যাওয়ায় কৃষক লাভবান বেশি হচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদিয়া সুলতানা ও অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তন্ময় কুমার দত্তের সাথে আলাপ করা হলে তারা বলেন,পলি মাচিং পদ্ধতিতে উচ্চফলনশীল বারি বেগুন-১২ চাষ করলে কৃষকরা লাভবান হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। কারণ এই বেগুনের চাষ করলে উৎপাদন খরচ অনেকটা কম হয়। যাতে কৃষকরা বেশি লাভবান হয়, সেই বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কৃষকদের নানাধরনের প্রশিক্ষন ও প্রনোদনা প্রদান করছি। তারা আরো বলেন, এই উচ্চফলনশীল বেগুন-১২ চাষ করলে হেক্টর প্রতি গড়ে প্রায় ৫৫/৬০মন বেগুন উৎপাদন করা সম্ভব হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত