নারী সহ আহত-৬

সুন্দরবনে রেঞ্জ কর্মকর্তার প্রভাব খাটাতে জেলে বহরে হামলার অভিযোগ

মাসুদ রানা,মোংলা

আপডেট : ০৭:২১ পিএম, বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩ | ৩৩৯

মোংলা জয়মনি এলাকায় জেলে বহরে হামলা, মারধর ও জোর পুর্বক জাল দড়ি কেটে নৌকা ডুবিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুর্ব সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহবুব হাসান সহ কয়েক বন রক্ষিদের বিরুদ্ধে।

বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় এ হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটছে বলে ভুক্তখোগীরা জানিয়েছেন। এতে নারী সহ ৬ জেলে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। কেটে দিয়েছে জাল, ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে অসহায় জেলেদের নৌকা সহ অন্যান্য মালামাল। জেলেরা বলছেন, আসল ঘটনা উল্টোদিকে ঘুরাতেই বনকর্মকর্তা ভিন্ন নাটক সাজিয়েছেন।

তবে উল্টো অভিযোগ করেছে বন বিভাগ। তারা বলছে, বনের অভয়ারণ্য এলাকায় অভিযানে গেলে বন রক্ষিদের উপর হামলা করেছে স্থানীয় জেলেরা। এর ফলে একজনকে আটক করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।


প্রত্যাক্ষদর্শী ও স্থানীয় জেলেরা জানায়, প্রায় ৪/৫ যুগ ধরে পশুর ও সাইলো সংলগ্ন শ্যালা নদীতে মাছ ধরে আসছিল স্থানীয় জেলেরা। ইতি পুর্বে কোন সময়ই সুন্দরবনের বন বিভাগ এতে কোন কর্নপাত না করলেও চাদঁপাই রেঞ্জে সদ্য যোগদান করা রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহবুব হাসান এর পক্ষ থেকে জেলেদের কাছে পুর্নিমা ও অমাবশ্যার গোন প্রতি মোটা অংকের টাকা দাবী করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে রেঞ্জ কর্মকর্তা ও লঞ্চ চালক রাজা সহ কয়েক বন রক্ষিদের বিরুদ্ধে।

জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, বন রক্ষিদের দাবীকৃত টাকা না দিলে তাদের নদীতে মাছ ধরতে দেয়া হবে না বলে নতুন যোগদান করা রেঞ্জ কর্মকর্তার নিদের্শেই এমন ঘটনার সুত্রপাত। বন বিভাগের এমন দাবীতে জেলেরা রাজী না হওয়ায় বুধবার সন্ধ্যায় হঠাৎ রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বন প্রহরী রাজার নেতৃত্বে কয়েকজন বনরক্ষী অভিযানের নামে জয়মনি সাইলো সংলগ্ন এলাকায় জেলে বহরে হামলা ও মারধর চালানো হয়। প্রথমে সাইলোর পাশ থেকে মান্নান হাওলাদারের ছেলে মাসুম হাওলাদার (৩৫) কে নৌকা থেকে জোর পুর্বক তুলে নেয় বন রক্ষিরা। এতে প্রতিবাদ করলে দ্বিতীয় বার জেলে বহরে হামলা চালিয়ে শয়ন নামের এক জেলেকে বেধরক মারধর করা হয়। এসময় দুই নারী এবং জেলে মোঃ নয়ন খাঁ, শয়ন খাঁ, মিরাজ হাওলাদার, এনামুল খাঁ সহ ৬জন জেলেকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। এতেও খ্যান্ত না হয়ে জেলেদের জাল কেটে দেয়া ও কয়েকটি নৌকা নদীতে ডুবিয়ে দেয়ারও অভিযোগ বন রক্ষিদের বিরুদ্ধে।

পরে জেলেরা প্রতিবাদ করলে এলাকাবাসীর তোপের মুখে কয়েক রাউন্ড ফাকা গুলি ছুড়ে দ্রুত চলে যায় বন রক্ষিরা বলে দাবী স্থানীয় জেলেদের। এ নিয়ে জেলে পল্লিতে উত্তেজনা ও আতংক বিরাজ করছে।

এদিকে, বন বিভাগ বলছে, বনের সম্পদ রক্ষায় টহলে গেলে তাদের উপর হামলা করা হয়েছে। এতে কয়েকজন বন রক্ষি আহত হয়। নিজেদের প্রান রক্ষার্থে ফাঁকা গুলি চালিয়ে মাসুম নামের এক জনকে আটক করে মামলা দায়ের শেষে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

চাদঁপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহবুব হাসান বলেন, নিয়মিত টহলে গেলে জেলেরা বন রক্ষিদের উপর হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করেছে। এঘটনায় মামলাও দেয়া হয়েছে। তবে জেলেদের কাছে কোন টাকা চাওয়া হয়নি। সরকারী দায়িত্ব পালনকালে যদি কোন ঘটনার সুত্রপাত হয় তবে এর দ্বায়ভার আমরা বহন করবোনা। সরকারের নিয়মেই বন বিভাগ চলবে, বনজ সম্পদ রক্ষায় যতটুকু করার তা পালন করে যাবো বলে জানায় রেঞ্জ কর্মকর্তা।


স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চিলা ইউনিয়ন জয়মনি এলাকার ইউপি সদস্য রীনা পারভেজ বলেন, চাদঁপাই রেঞ্জে কয়েকজন বন রক্ষি রয়েছে যারা ১০/১৫ বছর একই ষ্টেশনে চাকরী করছে। কিন্ত এক বছরের মাথায় অন্যাত্র বদলীর নিয়ম থাকলেও তারা ক্ষমতার বলে একই ষ্টেশনে থাকার সুবাদে অসহায় গরিব জেলেদের উপর কর্তৃত্ব বহাল রাখার কারনেই এমন হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বন রক্ষিদের টাকা না দিলে পাশ-পারমিট দেয়া হয়না। প্রতিবাদ করলে তাদের অহেতুক হামলা ও মামলার স্বীকার হতে হয়। নতুন এসিএফ যোগদান করার পর থেকেই এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। অসহায় জেলে বহরে বন বিভাগের হামলা ও মারধরে সুবিচারের দাবী এ জনপ্রতিনিধির।

বন রক্ষীদের অন্যায় দাবী মেনে না নিলে হামলা ও মারধরের স্বীকার হতে হয় অসহায় জেলেদের। তাই এর থেকে পরিত্রান পেতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানায় সহস্রাধিক জেলে পরিবার

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত