দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি মনিরুজ্জামানের নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত

ফকিরহাট প্রতিনিধি

আপডেট : ১১:৫৩ পিএম, শনিবার, ৫ আগস্ট ২০২৩ | ৪৫০

আত্নশক্তিতে বলিয়ান ব্যক্তি কখনো দেওলিয়া হয়না, যার জলন্ত প্রমান দিয়েছেন বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার টাউন নওয়াপাড়া (কাটাখালী) এলাকার মনিরুজ্জামান মনি নামের একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধি হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে স্বাবলম্বি ও পরিবারকে স্বচ্ছল করার জন্য ওর্য়াকশর্পের কাজ বেছে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেই চলেছেন। শুধু তাই নয়, ওর্য়াকশপের কাজ ছাড়াও তিনি মাটি কাটা, নদীতে মাছ ধরা সাতার কাটা এমকি গাছে উঠে নারকেল-সুপারি পাড়া ও গাছের ডাল কাটার মত ঝুকিপূর্ণ কাজ করে এলাকায় একটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।


জানা গেছে,ফকিরহাটের পিলজংগ ইউনিয়নের টাউন নওয়াপাড়ার কাটাখালী বাসস্ট্যান্ডের উত্তরপাশের্^ মহাসড়কের পূর্বপাশের্^ নদীর চরে (যাযাবর পল্লী) সরকারী একখন্ড জায়গায় এই মনিরুজ্জামানের বসবাস। স্ত্রী ফাতেমা বেগম ও তার দুই ছেলে দুই মেয়ে এই চারজনকে নিয়ে তার পরিবার। ৫বছর বয়সে তিনি যখন খুলনার দাকোপ থানার সুতারখালী ইউনিয়নের নলিয়ার গ্রামে বসবাস করতেন সেই সময় জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে তার দুটো চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তখন থেকেই তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এই ভাবে প্রায় ২২বছর আগে তিনি তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে কাটাখালী বাস্ট্যান্ডের পাশের্^ নদীর চরে ছোট্ট একটি কুড়েঘর বেধে সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করতে থাকেন।


বাগেরহাট সড়ক ও জনপদ বিভাগ যখন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতেন, সে সময় তিনি মহাবিপাকে পড়ে যেতেন। কিন্তু সরকারী নির্দ্দেশ কোন ক্রমেই উপেক্ষা করা যাবে না। তাই তিনি নিজের ঘর নিজেই ভেঙ্গে নদীর ওপারে রেখে পুনরায় আবারও চলে আসতেন পূর্বের স্থানে। এই ভাবে তিনি ২০টি বছর ঐ সরকারী জমিতে ছোট্ট একটি কুড়ে ঘর বেধে সেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। আজ তিনি ২০বছর এই টাউন নওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও পিলজংগ ইউনিয়নের নাগরিক।


মনিরুজ্জামান সরদার মনি বলেন, তিনি দীর্ঘ ১৬/১৭ বছর ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। কিন্তু এখন আর তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করেন না। শেখেরডাঙ্গা এলাকার আল্লারদান ওর্য়াকশপের মালিক মোস্তাক শেখ তাকে তার ওর্য়াকশপে কাজ দিয়েছেন, সেখানেই তিনি ৫বছর ধরে তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে সাথে নিয়ে কাজ করেই চলেছেন। স্বল্প বেতনে সারাদিন রোজগার করে যা আয় হয় তাই দিয়েই তাদের সংসার চলে। একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি হয়েও তিনি সেখানে চেয়ার-টেবিল আলমারি দরজা-জালনা ও নানাপ্রকার গ্রিল মেরামত ও ঘষা মাজার কাজ করছেন। ওর্য়াকশপের মালিক মোস্তাক শেখ জানান, সে চোখে দেখেনা তার পরেও সে বিচক্ষন বুদ্ধিমান একবার কোন কাজের কথা বললে সে মনে রাখতে পারে। অন্যান্য শ্রমিকদেরকে নিয়ে সমস্যা হলেও তাকে নিয়ে আমার কোন সমস্যা হয়না।


স্ত্রী ফাতেমার সহযোগীতা আর অনুপ্রেরনায় তিনি এসব কাজ করেন। তিনি নিজের চোখে কোন কিছু না দেখতে পেলেও স্ত্রীর চোখ দিয়ে তিনি সবকিছু দেখতে পারেন বলেও তিনি জানান। তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, ওশুধু ওর্য়াকশপের কাজ করে না, সে গাছে চড়া সাতার কাটা মাছ ধরা মাটি কাটা সহ বিভিন্ন ঝুকিপূর্ণ কাজও করতে পারেন। ফাতেমা বেগম বলেন, আমরা ভূমিহীন পরিবার সরকারী জায়গায় ছোট্ট্ একটি কুড়েঘর বেধে সেখানে দীর্ঘ ২০/২১বছর বসবাস করছি। সরকারী ভাবে ১টি প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড ছাড়া আমরা আর কোন সরকারী সহযোগীতা পাইনা। এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি মনিরুজ্জামান মনি সরকারী ভাবে জমি সহ ঘর পাওয়ার জন্য উর্দ্ধতন প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত