লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ৫০ মেট্রিক টন

গোলপাতা আহরণের জন্য সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন বনজীবিরা

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ১১:৫৩ পিএম, সোমবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৪ | ২১৫

পুর্ব সুন্দরবনের চাদপাই রেঞ্চ থেকে এবারের মৌসুমের গোলপাতা সংগ্রহের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে পাশ-পারমিট নিয়ে বনে যাত্রা শুরু করেছে বাওয়ালীরা। ২৯ জানুয়ারী সোমবার সকাল ১১টার দিকে ২ ও ৩ নম্বর গোল কুপের বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে পুর্ব সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্জ থেকে পাতা আহরণের যাত্রা শুরু করলেন তারা, যা চলবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এবারের মৌসুমে ৭ হাজার ৫০ মেট্রিক টন গোলপাতা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে বন বিভাগ।



পুর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ আনিসুর রহমান শেখ জানান, ছোট বড় মিলিয়ে এবার ২৮টি নৌকার আবেদন পাওয়া গেছে। অনেকে বনজীবিরা সোমবার (২৯ নভেম্বর) থেকে গোলপাতা সংগ্রহনের জন্য সুন্দরবনের প্রবেশ করেছেন। তারা এই সময়ের জন্য অগে থেকেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলো। বাকিরাও ২/৩ দিনের মধ্যে বনে প্রবেশ করবে বলেও জানায় তিনি।
চাঁদপাই রেঞ্জে দুটি কুপে ৭ হাজার ৫০ মেট্রিক টন গোলপাতা আহরণের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেপুর্ব বন বিভাগ। এর মধ্যে একটি হলো শ্যালা গোলপাতা কূপ-(২ নম্বর) ৪ হাজার ২শ মেট্রিক টন ও অপরটি চাঁদপাই গোলপাতা কূপ-(৩ নম্বর) ২ হাজার ৮৫০ মেঃ টন পাতা আহরণ করতে পারবেন বনজীবিরা। গোলপাতা সংগ্রকারী বাওয়ালিরা সুন্দরবনে যাতে নির্বিঘ্নে গোলপাতা আহরণ করতে পারে তার জন্য বনবিভাগ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা, তেমনি বন বিভাগের রয়েছে বেশ কিছু শর্তাবলীও। যেমন, গোলপাতা আহরণের সময় বনের অন্য কোনো ধরনের গাছপালা কাটা যাবে না। নৌকার ঝুল হিসেবে বনের অন্য কোন মুল্যবান কাঠ বা জ্বালানী কাঠ কাটা যাবে না। এছাড়া কোনো বাওয়ালী যদি গোলপাতার পাশাপাশি অন্য প্রজাতির গাছ কাটেন কিংবা বনের ক্ষতি করেন বা গোলপাতা মাইজ পাতা নষ্ট হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে জরিমানা সহ আইনী ব্যবস্থা নেওয়ারও বিধান রয়েছে।


এবারের গোলপাতা সংগ্রহকারী ভ্যাট ও অন্যান্য বিষয়দী সহ প্রতি কুইন্টাল রাজস্ব নেওয়া হচ্ছে প্রায় ৭১ টাকা। তবে দিনদিন গোলপাতার ব্যবহার কমে আসা ও রাজস্ব বৃদ্ধি হওয়ায় কূপ থেকে গোলপাতা আহরণের পরিমাণ আগের তুলনায় কমে আসছে। একটি পাশের অনুকুলে প্রতি নৌকায় সাড়ে ৪ থেকে ৫শ মন গোলপাতা সংগহ করতে পারবেণ বনজীবিরা, এ পাশের সময় সিমা থাকবে ২৬ দিন।


স্থানীয় বাওয়ালীরা জানান, গোলপাতা এখন ব্যবহার কম হওয়ায় হাজার হাজার কুইন্টাল গোলপাতা নষ্ট হচ্ছে সুন্দরবনে। যেসব স্থানে গোলপাতার কূপ (প্রজনন ক্ষেত্র) রয়েছে, সেসব স্থানে এক জায়গায় অধিক গাছ হওয়ায় মাইজ পাতা নষ্ট হয়ে গাছ মরে যাচ্ছে। এছাড়া না কাটার কারণে নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার টন গোলপাতা।



পরিবেশকর্মীরা বলছেন, আগে গোলপাতা দিয়ে এক ধরনের ছাতা, ঝুড়ি মাদুর, থলে, খেলনা প্রভৃতি তৈরি করা হতো। এছাড়া ঘরের চাল ও বেড়ার কাজে ব্যবহƒত হতো এ গোলপাতা। কালের বিবর্তনে আজ সেগুলো হারাতে বসেছে। ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায় গোলপাতা আহরণও কমে গেছে। প্রাকৃতিক এ সম্পদের বিকল্প ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে পারলে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থার পাশাপাশী অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন তারা।



চাঁদপাই ষ্টেশন কর্মকর্তা বলেন, সুন্দরবনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এক জায়গার গাছ নষ্ট হলে অন্য জায়গায় বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া সুন্দরবনের কোনো গাছ মানুষ লাগায়নি। ফলে এ বনের গাছও নিজস্ব নিয়মেই তার বংশ বিস্তার সহ এর পরীধি বৃদ্ধি পাবে। একসময় ১০ লাখ টন গোলপাতা আহরণ করা হতো। এখন তা কমে দুই কুপ মিলে ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। তাই গোলপাতা সংগ্রহের জন্য কি ধরণের ব্যাবস্থা নেয়া দরকার তা সরকাই নির্ধারণ করবে, যা আমরা লোকাল পর্যায় বাস্তবায়ন করবো মাত্র।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত