হুমকির মুখে মিনি সুন্দরবনের বন্য প্রাণীরা

চিতলমারী সংবাদদাতা

আপডেট : ০৩:১৬ পিএম, রোববার, ২৭ আগস্ট ২০১৭ | ১৮৭৪

বন্য প্রাণী

চিতলমারী উপজেলার সীমান্তবর্তী চিত্রা নদীর দু’পাড়ে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠেছে বিশাল এক বনভূমি। এলাকায় এটি ‘মিনি সুন্দরবন’ হিসেবে খ্যাত। এখানে কোন হিংস্র প্রাণী না থাকলেও রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এ বন জুড়ে রয়েছে তাদের রাজত্ব। দিন-রাত বনের এদিক-ওদিক দাপিয়ে বেড়ায় তারা। সুযোগ পেলে আশপাশের লোকজনের বাড়িতে হানা দিয়ে হাঁস-মুরগি তুলে নিয়ে যায়। ক্ষোভে গ্রামবাসি এদের হত্যা করে নদীর পানিতে ভাসিয়ে দিচ্ছে। ফলে খাদ্য ও নিরাপত্তার অভাবে চিত্রা পাড়ের মিনি সুন্দরবনে মেছোবাঘ, গুইসাপ ও পাখিসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী এখন চরম হুমকির মুখে রয়েছে।


সুন্দরবনের মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় শত কিলোমিটার উত্তরে এ বনে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নিয়েছে সুন্দরী, কেওড়া, গরান, ওড়া এবং গোলপতাসহ সুন্দরবনের নানা প্রজাতির গাছপালা। আর এসব গাছপালা জন্ম নেওয়ার কারণে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে এখানকার নদীপাড়ের রায়গ্রাম, শুড়িগাতী, খিলিগাতী, ডুমুরিয়া,আরুলিয়া, খড়িয়াসহ আশপাশের প্রায় ১০-১৫ টি গ্রাম এখন বনাঞ্চলে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে বিলুপ্ত প্রজাতির অনেক প্রাণীর দেখা মেলে এ বনে। বনবিড়াল, মেছোবাঘ, খাটাশ এবং কুমির আকৃতির বড় গুইসাপের উপস্থিতি এখানে চোখে পড়ার মত। এসব প্রাণিরা দিনে-রাতে খাদ্যের অভাবে অনেকের বাড়িতে এসে হানা দেয়। ফলে গ্রামবাসির হাঁস-মুরগি তুলে নিয়ে যাওয়ায় অনেকে ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের হত্যা করছে।

এছাড়া এখানকার গাছ-পালায় ঘুঘু, শালিক, দোয়েল, বাঁদুর, বক, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির হাজার-হাজার পাখি এসে আশ্রয় নিয়েছে। পাশাপাশি শীত মৌসুমে অনেক পরিযায়ী পাখি এখানে আশ্রয় নেয়। আর সুযোগে এক শ্রেণীর অসাধু লোকজন ফাঁদ পেতে ও বন্দুক দিয়ে বিভিন্ন সময় এসব পাখি শিকার করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া চিত্রা নদীতে নাব্যতা হারিয়ে যাওয়ায় এবং উপযুক্ত আশ্রয়স্থলের অভাবে ডলফিনসহ অন্যান্য প্রজাতির প্রাণি এখন হুমকির মুখে।


চিত্রাপাড়ের এ বন রক্ষায় বনবিভাগ ও কর্তৃপক্ষ নানা উদ্যোগের কথা বললেও এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। প্রতিনিয়ত লোকজনের হাতে বিভিন্ন ভাবে মারা যাচ্ছে নানা প্রজাতির প্রাণি ও পাখি। বিষয়টি নিয়ে পরিবেশবিদরা ও সচেতন মহল হতাশা প্রকাশ করেছেন।


উপজেলার খিলিগাতী গ্রামের জলিল ফকির জানান, দিনে-রাতে মেছোবাঘ, খাটাশ, গুইসাপ এসে হানা দেয়। তারা ছাগলের বাচ্চা ও হাঁস-মুরগি ধরে নিয়ে জঙ্গলে চলে যায়। এতে হাঁস-মুরগি পালন করায় বিপাকে রয়েছে লোকজন।


এ বিষয়ে জেলা বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম জানান, চিত্রাপাড়ের মিনি সুন্দরবনে যাতে কেউ কোন প্রাণি হত্যা করতে না পারে সে ব্যাপারে তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনয় ব্যবস্থা নেবেন। এছাড়া এ বনকে রক্ষণাবেক্ষণসহ প্রাণি ও পাখিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে তোলা হবে বলে আশ্বাস দেন।


এ ব্যাপারে প্রাণি ও পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খান জানান, যেহেতু অনেক প্রাণিই এখন বিলুপ্তির পথে সেহেতু বন্যপ্রাণি রক্ষা করা খুবই জরুরি। এর জন্য সকলের সচেতনতা দরকার।
তবে জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস জানান, বন্যপ্রাণি ধরা এবং হত্যা করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ, কেউ যাতে এদের হত্যা করতে না পারে সে ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত