কুকুরের কামড়ে আহত-৩০

জলাতঙ্কে আক্রান্ত গরুর দুধ পান করে হাসপাতালে ৯০ জন

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ০৬:১৪ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১৭ মে ২০১৮ | ১৭৫১

বাগেরহাটে কুকুরের কামড়ে নারী শিশুসহ ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২ জনকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে বৃহষ্পতিবার সকাল পর্যন্ত বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ও মির্জাপুর গ্রামে একটি কুকুরের কামড়ে এরা আহত হন। পরে এলাকাবাসী ওই কুকুরটিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।


অপরদিকে, আমাদের ফকিরহাট প্রতিনিধি পিকে অলক জানান, ফকিরহাটে কুকুরে কামড়ানো (জলাতঙ্ক আক্রান্ত) গরুর দুধ পানে অসুস্থ্য হওয়ার ভয়ে একটি গ্রামের নারী শিশুসহ অন্তত ৯০ জন বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বৃহষ্পতিবার দুপুরে ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের চাকুলি গ্রামের ওই ব্যাক্তিরা বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। তাদের কুকুরে কামড়ানো প্রতিষেধক ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন এতে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। ভ্যাকসিন নিলেই জলাতঙ্ক কেটে যাবে।


সদর হাসপাতালে কুকুরে কামড়ানো চিকিৎসাধীনরা হলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া গ্রামের আনিস হাওলাদার (১০),সুমন শেখ (১০),তাওহিদুল ইসলাম (১৩),সোভিক দে (১৪),মিরাজুন্নাহার লুসি (৩৮),ময়না বেগম (৬০),সাইদ শেখ (৩৫),আনোয়ারা বেগম (৩০),জাইমা বেগম (৬০),মো আলী শেখ (৪৫), হালিমা বেগম (৫৫) ও সবিতা পাল (৪৫)।


হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মো. আলী শেখ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমি রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এসময় পেছন থেকে আসা একটি কুকুর হঠাৎ করে আমার পেছনে কামড়ে ঝুলে থাকে। এসময় আমি চিৎকার শুরু করলে কুকুরটি আমার পেছনের মাংসে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে ছেড়ে দিয়ে দৌড় দেয়। পরে আমার স্বজনরা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।


জাইমা বেগম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় উঠতেই একটি কুকুর দৌড়ে এসে আমার ডান হাত কামড়ে ধরে। আমি জোরাজুরি করে তার হাত থেকে রক্ষা পাই। হাসপাতালে আসলে আমাকে প্রতিষেধক ভ্যাকসিন দিয়েছে।


কাড়াপাড়া গ্রামের বেল্লাল হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, গত দুদিনে কাড়াপাড়া ও মির্জাপুর গ্রামের অন্তত নারী শিশুসহ কমপক্ষে ৩৫ জনকে কামড়ায় ওই কুকুরটি। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে আমরা এলাকাবাসী সবাই মিলে কুকুরটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছি।


অপরদিকে, ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফোরকান শিকারী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ফকিরহাটের চাকুলি গ্রামের বেল্লাল শেখের পোষা গরুর দুধ ওই গ্রামের প্রায় দশটি পরিবার নিয়মিত পান করে আসছে। ওই দশটি পরিবারে সদস্য সংখ্যা একশ জনের উপরে। কয়েকদিন আগে ওই গরুটিকে কুকুরে কামড়ালে গরুটি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা না জেনে ওই কুকুরে কামড়ানো গরুর দুধ পান করতে থাকে। বৃহষ্পতিবার বিষয়টি জানাজানি হলে ওই পরিবারগুলোর সদস্যরা তাদের জলাতঙ্ক হতে পারে বলে আতংকিত হয়ে হয়ে পড়ে। তারা এই বিষয়টি আমাকে জানালে আমি প্রায় ৯০ জনকে চিকিৎসার জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি।


গরুর মালিক বেল্লাল শেখ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমার এই গাভীর থেকে হওয়া দুধ চাকলি গ্রামের দশটি পরিবারকে দিয়ে থাকি। বুধবার আমার পোষা গুরুটি গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে আমি প্রাণী চিকিৎসককে ডেকে গরুটিকে দেখাই। তিনি গরুটি দেখে বলে তাকে কুকুরে কামড়েছে বলে নিশ্চিত হন। তবে কবে কখন গোয়ালে থাকা গুরুটিকে কুকুরে কামড়েছে তা বলতে পারবনা। বুধবারও আমি এই গরুর দুধ আমার যোগানদাতাদের মাঝে সরবরাহ করি। আমি নিজেও প্রতিষেধক ভ্যাকসিন নিয়েছি।


বাগেরহাটের সিবিল সার্জন ডাঃ অরুন চন্দ্র মন্ডল বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার দুটি গ্রাম থেকে কুকুরে কামড়ানো নারী শিশুসহ অন্তত ১২জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুকুরে কামড়ানোর ক্ষত রয়েছে। তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই সুস্থ্য আছেন।


তিনি আরো বলেন, কুকুরে কামড়ানো গরুর দুধ পান করলে জলাতঙ্ক রোগ হবে এমনটা মনে করা যাবে না। কারণ দুধতো ফুটিয়ে পান করা হয়। তারপরও অসুস্থ হওয়ার আশংকায় শিশু নারীসহ প্রায় ৯০ জন হাসপাতালে আসে। আমরা তাদের প্রতিষেধক হিসেবে ভ্যাকসিন দিয়া হয়েছে। এক মাসের মধ্যে চারটি ভ্যাকসিন নিলেই তারা পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে যাবে। এতে আতংকিত না হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ওই চিকিৎসা কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত