মোংলায় টর্নেডোর ছোবলে ৭ গ্রাম লন্ডভন্ড: দুই শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত

টর্নেডোর ছোবলে লন্ডভন্ড হয়েছে মংলার সাতটি গ্রাম। সুন্দরবন সংলগ্ন পশুর নদীর তীরবর্তী চিলা ইউনিয়নের ওই গ্রামগুলোতে সোমবার বিকাল সাড়ে ৪ টায় এ টর্নেডো আঘাত হানে। এতে দুই শতাধিক কাঁচা ও পাকা ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ পালা ও বৈদ্যুতিক পিলার উপড়ে পড়েছে। এ সময় বজ্রপাতে ২ জন আহত এবং নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া এক জেলে নিখোঁজ হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সোমবার সকাল থেকে প্রচন্ড তাপদাহে পুড়ছিলেন সবাই। দুপুরে তাপদাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বস্তির জন্য ঘরের বাইরে বিভিন্ন গাছের নিচে অবস্থান নেয় এলাকার বাসিন্দারা। বিকাল সাড়ে ৪ টায় হঠাৎ মেঘাছন্ন হয়ে পড়ে সুন্দরবন সংলগ্ন পশুর নদীর তীরবর্তী এলাকা। স্থানীয়রা কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রলয়ংকারী টর্নেডো আঘাত হানে জয়মনির ঘোল এলাকায়। একই সাথে প্রায় ৩০মিনিট বৃস্টি ও একের পর এক বজ্রপাতে কেঁপে ওঠে আশপাশের এলাকা। আর টর্নেডোর ছোবলে মুর্হুতেই একে একে লন্ডভন্ড হয়ে যায় চিলা ইউনিয়নের জয়মনির ঘোল,গিলার খালকুল,কাটা খালী,খাপড়া,পশ্চিম পাড়া গ্রাম। মাত্র ৪৫ সেকেন্ডের স্থায়ীত্ব এ টর্নেডোর আঘাতে মসজিদ, মাদ্রাসা, কাঁচা-পাকা ঘর বাড়ি, দোকান পাট উড়িয়ে নেয়।

টর্নেডোর পর পরই উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রবিউল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান আকবর গাজী সহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ দলীয় নেতৃবৃন্দ ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রবিউল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, টর্নেডোর আঘাতে দুই শতাধিক কাঁচা-পাকা বাড়ি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে শতাধিক বাড়ি-ঘর। তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্থ এসব পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য বাগেরহাট জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার ক্ষয়ক্ষতির সঠিক সংখ্যা নিরুপনসহ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পাশে দাড়াবে উপজেলা প্রশাসন।

মংলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, সরকারের প্রতিশ্রুতি একটি লোকও খোলা আকাশের নিচে থাকবেনা। সোমবার চিলা ইউনিয়নে যে টর্নেডো হয়েছে তাতে যারা পুরো বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ এদের প্রত্যেককে সরকারের তহবিল থেকে সহায়তা করা হবে। পাশাপাশি যাদের ঘর উড়িয়ে নিয়েছে তাদের নতুন ঘর তৈরী করার ব্যাবস্থা করা হবে। মঙ্গলবার জেলা প্রসাশকের দপ্তরে বৈঠক হবে, চিলার এ টর্নেডোর ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারেও আলাপ আলোচনা হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই এ ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

এ দিকে চিলা ইউপি চেয়ারম্যান ক্ষয়ক্ষতির প্রসঙ্গে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন-টর্নেডোতে ৩৫০টি পরিবার কমবেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। গাছ-পালা ও পল্লী বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পড়ে রাস্তাঘাট বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এতে বন্ধ রয়েছে ৭টি গ্রামের বিদুৎ সরবরাহ। পশুর নদীর তীরবর্তী অসংখ্য কাঁচা ঘর উড়ে নদীর স্রোতের টানে ভেসে গেছে। তিনি আরও জানান, গিলার খালকুল এলাকায় পশুর নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া শহিদুল (৪০) নামের এক জেলে নিখোঁজ রয়েছে। এ ছাড়া বজ্রপাতে আহত হয়েছে জয়মনিরঘোল গ্রামের দুলাল (৩৫) ও মুনসুর (৪০) নামের দুই ব্যক্তি। আহত ওই দুজনকে বিকালে মংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।