যেভাবে কেটেছে রেশমাদের ঈদ !

এস এম সামছুর রহমান

আপডেট : ০৬:৩৩ পিএম, মঙ্গলবার, ১৯ জুন ২০১৮ | ২৩৭২

শরিরে ঈদের নতুন পোশাকের দেখা নেই, রসনার পুঁজার জন্য খাবারেও নেই কোন বাহারী আয়োজন। ঈদ আছে কিন্তু আনন্দ নেই তাদের। তবুও হাতে মেহেদী রাঙ্গিয়ে ঈদের স্বাদ নেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছে রেশমার (৭) মতো অবুজ শিশুরা। আর বহরের ভিতর নতুন কাউকে দেখলে একঝাঁক শিশু-কিশোর তাকে ঘিরে ধরে বলছে, “ বিশটা ট্যাহা দেন না দাদা।” এভাবেই কেটেছে বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কের পাশে সিএনবি বাজার এলাকায় অবস্থান করা একটি বেঁদে বহরে থাকা রেশমাদের ঈদ। তবে তাদের থাকার জন্য তৈরি করা ঝুপড়ির ( ছোট ঘর) সামনে কেউ গেলেই তাকে আপ্যায়ন করার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন তারা।


ঈদের দিন (শনিবার) বিকেলে এই বেঁদে বহরে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ শিশু-কিশোর খালী গায়ে ছোটাছুটি করছে। তাদের কারো শরীরে ঈদের কোন পোশাকের দেখ্ ামেলেনি। এদের কোন কোন পরিবারের ফার্মের মুরগী বা হাঁসের সামান্য মাংস রান্না করেছে। এরমধ্যেও মেয়ের বায়না পুরণ করতে মেয়ে রেশমার হাতে মেহেদী লাগানোয় ব্যস্ত সময় পার করছে ৪ সন্তানের জননী বাদরী বেগম।


কেমন ঈদ উদযাপন করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমাদের মতো গরিবের আবার ঈদ। ছেলে-সন্তান নিয়ে কোন রকমে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি। ঈদ তো বড়লোকের জন্য।


তিনি বলেন, এই পেশায় এখন আর আগের মতো আয় হয় না। তাই অভাব-অনটনের মধ্যে কাটে সারাটি বছর। কোন সহায়তাও পাই না আমরা। এক প্রকার অবহেলার ভিতর জীবন কাটছে আমাদের।


পাশে ঝুপড়িতে ( ছোট ঘর) থাকা আলেকজান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘ ঈদের আনন্দ করার মতো সামর্থ আমাদের নেই। তবুও যে যার মতো পেরেছে চেষ্টা করেছে। কেউ তাদের কোন প্রকার সহায়তা এগিয়ে আসেনি বলে তিনি অভিযোগ করেন।


লবনী বেগম তার কোলের ছোট্ট শিশুটিকে দেখিয়ে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, টাকার অভাবে এরজন্য একটি কাপড়ও কিনতে পারিনি। তাহলে ঈদেও আনন্দ কিভাবে আসবে ?


একটি ঝুপড়ির সামনে বসে মুরগীর মাংস দিয়ে খাবার খাচ্ছিল সোরাব-কাকলি দম্পতি। সাথে তাদের ৪ বছরের শিশু কণ্যা মারিয়া। খোলা আকাশের নিচে থাকা এই দম্পতির যেন ভালবাসার কোন কমতি নেই।


এই বেঁদে বহরের সরদার দেলোয়ার হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আগের মতো আমাদের আয় নেই। কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়। তারপরও মুসলমান হিসেবে ঈদ আমাদের একটি ধর্মীয় উৎসব। সামর্থ অনুযায়ী সবাই চেষ্টা করে পালন করার। যে যে ভাবে পেরেছে সে সেই ভাবেই পালন করেছে এই উৎসব। তারপরও সৃষ্টি কর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হয়। বলতে হয় ভাল ভাবেই কাটছে ঈদ।


এবিষয়ে সমাজসেবক আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ জামিল হোসাইন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, কোন উৎসবের সময় সমাজের অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষে পাশে দাড়ানো সকলের কর্তব্য। তাদের মুখে হাসি ফোটানোর ভিতরও একধরনের তৃপ্তি পাওয়া যায়। বিত্তবান, জনপ্রতিনিধি ও সমাজপতিরা যদি আরো আন্তরিক হয়ে এসব সুবিধা বঞ্চিতদের পাশে দাড়ান তাহলে এসব উৎসব আরো আনন্দ মুখর হয়ে ওঠে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত