চিংড়িতে মার খাওয়ায় কাকড়ায় ঝুঁকছে চাষীরা

আলী আকবর টুটুল

আপডেট : ০৩:০৮ পিএম, বৃহস্পতিবার, ৯ আগস্ট ২০১৮ | ১০৫১

একসময়ে বাগেরহাটের প্রধান অর্থকরীর চালিকাশক্তি ছিল সাদাসোনা খ্যাত বাগদা ও গলদা চিংড়ি। আ্র এই চিংড়িতে রোগ-বালাইসহ বিভিন্ন কারনে মড়ক লেগে থাকায় পেশা পরিবর্তন করছেন চাষিরা। বিদেশী বাজারে চিংড়ির চাহিদা না থাকায় কাকড়া চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। কয়েক বছরে গলদা চিংড়ির দাম কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ।


চাষিদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, কাকড়ার রোগবালাই কম, মৃত্যুহার কম ও দাম বেশি হওয়ায় কাকড়া চাষে ঝুকছে চাষীরা। বাগেরহাটে সাধারণত কাকড়ার দুই ধরণের চাষ হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে পুরুষ কিশোর কাকড়া (ছোট কাকড়া) ছেড়ে বড় করে বিক্রি করা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক (প্রি ম্যাচিউরড) মা কাকড়া ঘেরে ছেড়ে পূর্ন বয়স্ক (পেটে বেশি ডিম হওয়ার পরে) করে বিক্রি করা। চাষীরা বক্স পদ্ধতি ও ঘেরে পাটা দিয়ে দুই পদ্ধতিতেই কাকড়ার চাষ করে থাকেন।


২০১৫ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কাকড়া ঘের গড়ে উঠেছে। অনেকে বাগদার ঘেরে কাকড়ার চাষ শুরু করেছে। এর মধ্যে রামপাল উপজেলায় সব থেকে বেশি কাকড়ার চাষ হয়ে থাকে। এ উপজেলায় ৪‘শ ৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১৫‘শ চাষী কাকড়া চাষ করছেন। কাকড়াকে সাধারণত স্থানীয়ভাবে সংগ্রহিত পুটি মাছ, তেলাপিয়া মাছ ও কিছু কম দামের সামুদ্রিক মাছ খাওয়ানো হয়ে থাকে।


রামপাল উপজেলার গিলাতলা ইউনিয়নের বাশতলী গ্রামের কাকড়া চাষী ভোজন ভান্ডারী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, প্রায় ১০ বিঘা জমিতে বাগদা-গলদার চাষ করতাম। ভাইরাসে বাগদায় মড়ক ও গলদার দাম কমে যাওয়ায় বিভিন্ন সময় অনেক লোকসানে পরেছি। পরে উপজেলা মৎস্য অফিসের পরামর্শে ৪ বছর আগে নিজের জমিতে কাকড়া চাষ শুরু করি। ২৪ শতাংশ জমিতে কাকড়া চাষ করে প্রতি বছর ৩ থেকে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকা আয় করি। এ জমিতে আমি বছরে ৮টি সার্কেল চাষ করি। বছরের অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বাগদার মৌসুম থাকে। এসময় বাগদার দাম অনেক ভাল থাকে। এছাড়া, বিদেশে ফেব্রুয়ারী মাসে চাইনিজ ডে নামে একটি উৎসব হয়ে থাকে এসময় কাকড়া প্রচুর চাহিদা থাকে। তখন আমরা ২৪‘শ থেকে ২৬‘শ টাকা দামে কাকড়া বিক্রয় করে থাকি।


রামপাল উপজেলার কাকড়া চাষী জাহিদুর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বাগদার চাষ করে বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত চিন্তায় থাকতে হয়, কখন ভাইরাসে আক্রমন করে। কিন্তু কাকড়া চাষে এ ধরণের তেমন কোন ঝুকি নেই। তাই ২০১৫ সালে কাকড়া চাষ শুরু করি। নিজের এক একর জমিতে দুই সার্কেল কাকড়া চাষ করে বছরে ভাল লাভ হচ্ছে।


রামপাল উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বিশ্ব বাজারে কাকড়ার দাম অনেক বেশি। ২‘শ গ্রাম ওজনের স্ত্রী কাকড়ার কেজি প্রায় ২৪‘শ থেকে ২৬‘শ টাকা বিক্রি করা যায়। কৃষকরা অল্প পূজিতে অনেক বেশি লাভ করতে পারে কাকড়া চাষ করে। এ জন্য রামপাল উপজেলায় অনেকেই কাকড়া চাষে ঝুকছে। কাকড়া চাষকে উৎসাহ যোগাতে উপজেলা মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় এদেরকে কাকড়ার পোনা ও খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া আমরা চাষীদের নিয়মিত প্রশিক্ষন ও পরামর্শ দিয়ে থাকি।


বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ জিয়া হায়দার চৌধুরী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাগদা চিংড়িতে রোগ বালাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বাগদা চাষে অনেক ঝুকি তৈরি হয়েছে। এছাড়া বহির্বিশ্বে বড় গলদা চিংড়ির দাম কমায় গলদা চাষীরাও লোকসানে পড়ছে। যার ফলে বাগেরহাটে অনেক চাষী বানিজ্যিকভাবে কাকড়া চাষ শুরু করেছে। ২০১৫ সালে কুচিয়া ও কাকড়া চাষ ও গবেষনা প্রকল্পের আওতায় চিংড়ির পাশাপাশি চাষীদের কাকড়া চাষে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করি। প্রকল্পের সহযোগিতায় প্রদর্শনী খামার, কাকড়া চাষ বিষয়ে চাষীদের প্রশিক্ষন প্রদান করে থাকি।


তিনি আরও বলেন, কাকড়া চাষ লাভজনক। কারণ রোগ বালাইয়ে কাকড়ার মৃত্যু হার কম, স্বল্প পূজিতে চাষের সুবিধা এবং চিংড়ির তুলনায় দাম বেশি। বর্তমানে বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কাকড়া ঘের গড়ে উঠেছে।


কাকড়া চাষের কিছু ঝুকির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাকড়ার পোনার জন্য প্রাকৃতিক উৎসের উপর নির্ভর করতে হয়। সুন্দরবন থেকে পোনা সংগ্রহ করে চাষ করা হয়। তবে চাহিদা অনুযায়ী সব সময় চাষীরা পোনা পায় না। এছাড়াও বর্তমানে কাকড়ার কিছু রোগ বালাই দেখা দিচ্ছে। আমরা কাকড়া নিয়ে গবেষনা করছি। চেষ্টা করছি এসব রোগ বালাইয়ের কারণ জানতে এবং রোগ বালাইয়ের ঔষধ আবিস্কার করতে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত