সমুদ্র ও সুন্দরবনে চিরুনী অভিযান চালাচ্ছে কোস্টগাডের্র পাঁচ টিম

দুই সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা, নিহত ৮জেলের পরিবারে চলছে শোকের মাতম

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৫:১২ পিএম, রোববার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ১৩০৬

বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবিতে তিন ছেলের মধ্যে দুই ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে বাকরুদ্ধ বাবা ছোমেদ ফরাজী (৭০)। স্ত্রীদের জানানো হয়নি তাদের স্¦ামী আর বেঁচে নেই। সন্তানরা জানে তাদের বাবা ফিরে আসবে। তবুও পরিবার ও স্বজন সবার চোখেমুখে উৎকন্ঠা। কিন্তু বাবা ঠিকই বুজতে পেরে গেছেন ওরা আর ফিরে আসবেনা! মাঝে মাঝে দুই ছেলের নাম নিয়ে বিলাপ করে ফের অবার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছেন। আজ রবিবার দুপুরে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার কোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর গ্রামের নিহত জেলে আনোয়ার ফরাজী ও কামরুল ফরাজীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এমন শোকের চিত্র।

গত বুধরবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত ৩টার দিকে বঙ্গোপসাগরের ১ নম্বর ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছে ঝড়ে এফবি মারিয়া-১ নামের ট্রলারটি ডুবে যায়। ওই ট্রলারে ছোমেদ ফরাজীর তিন ছেলে শহিদুল ফরাজী (৩৫), আনোয়ার ফরাজী (৪৫) ও কামরুল ফরাজীসহ (৪২) ১৭ জন জেলে ছিলেন। এদের মধ্যে ৯জন জীবিত ফিরেছেন। বাকি ৮জনের সলিল সমাধি ঘটেছে। বেঁচে যাওয়া ৯ জনের মধ্যে শহিদুল ফরাজী নিজেই ট্রলার মালিক এবং প্রধান মাঝি। আপন দুই সহোদরকে হারিয়ে তিনি এখন সঙ্গাহীন। বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে তাঁর। নিহত অন্যরা হলেন, উপজেলার রাজৈর গ্রামের আশরাফুল গাজী, শহিদুল হাওলাদার, ডাবলু হাওলাদার, রাজাপুর গ্রামের মোদাচ্ছের হাওলাদার, নলবুনিয়া গ্রামের রিয়ারজ হাওলাদার এবং উত্তর তাফালবাড়ি গ্রামের আলমগীর হোসেন। শরণখোলার এফবি সাগর- ট্রলারে তাঁরা শনিবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে মোংলায় এসে পৌঁছায়। সেখান থেকে স্বজনরা তাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। নিহত এসব জেলে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ট্রলার ডুবির লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন বেঁচে ফিরে আসা ওই ট্রলারের দ্বিতীয় মাঝি রাজৈর গ্রামের আ. মজিদ হাওলাদারের ছেলে মো. কবির হাওলাদার (২২)। তাঁর মুখের বর্ণনা, মোরা সিগনাল পাইয়া কূলেআইতে ছিলাম (তীরে আসা)। বিষ্টি (বৃষ্ঠি) আর বাতাসে টেকতে (টিকতে) না পাইর‌্যা ওরা আস্টোজন (৮জন) বোডের (ট্রলারের) কেবিনে মইদ্যে(ভিতরে) হান্দে (ঢোকে)। বুধবার রাইত (রাত) ৩টার দিকে মোরা ট্রলইয়া যহন ১ নম্বর বয়ার কাছাকাছি আইছি, তহন বিশাল এক লাহরে (ঢেউ) বোড (ট্রলার) ফালাইয়া দেয়। মোরা উপরে থাকা ৯জন ট্রলারের প্লোট ধইর‌্যা (প্লাষ্টিকের ভাসনা/ফট) সাগরে ভাসতে থাকি। কিন্তু হেরা আর বাইরাইয়াতে (বের হতে) পারেনাই। তিনদিন পর শুক্রবার (২১সেপ্টেম্বর) রাইত সাড়ে তিনটা চাইট্টার দিক মোরা ভারতের সীমানায় কেতুয়ার চরে যাইয়া উডি। হতন ভারতের এফবি সূর্যসেন নামের একটা বোডে মোগো উডাইয়া নেয়। মোগো আতপাও (হাত-পা) পানিতে সাদা ওই গ্যাছে। ভারতের বোডের মাঝি রবীন দাস মোগো ওষুদ ও খাওন দিয়া সুস্থ বানায়।

ট্রলার মাঝি কবির আরো জানান, ঝড়ের কবলে পড়ে ভারতের ওই এলাকায় ভেসে যাওয়া শরণখোলার বিলাশ রায় কালুর এফবি সাগর-১ ট্রলারে তাদের ৯জনকে শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে উঠিয়ে দেন ভারতের ট্রলারের মাঝি রবীন দাস। এসময় তাদের আশ্রয়ে থাকা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নূরাবাদ এলাকার আরো ১৪ জেলেকে দেন শরণখোলার অপর ট্রলার তহিদুল তালুকদারের এফবি আজমীর শরীফ-১ এ।


এফবি সাগর ট্রলারের মালিক বিলাশ রায় কালু বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, তাঁর এবং তহিদুল তালুকদারের ট্রলার দুটি ঝড়ের কবলে পড়ে ভারতের কেতুয়া এলাকায় চলে যায়। সেখান থেকে মারিয়া- ট্রলারের ৯ জন ও চরফ্যাশনের ১৪ জেলেকে তাদের ট্রলারে নিয়ে আসে। এসব জেলেদের সবাই কমবেশি অসুস্থ বলে জানা তিনি।

অপরদিকে, নিখোঁজ জেলে ও ট্রলারের সন্ধানে কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার তৎপরতা আরো জোরদার করেছে। তাদের পাঁচটি টিম সুন্দরবন ও সমুদ্রের বিভিন্ন এলাকায় চিরুনি অভিযান পরিচালনা করছে।

এব্যাপারে মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লে. জাহিদ আল হাসান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় মোবাইল ফোনে জানান, তাদের সামর্থ অনুযায়ী চেষ্টা চলছে। সুন্দরবন ও সমুদ্রের কাছাকাছি শরণখোলা, সুপতি, কচিখালী, দুবল, কোকিলমনিসহ পাঁচটি কন্টিনজেন্টের প্রায় ৫০ জন সদস্য উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত রয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত