প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষমতা অপব্যাবহার

মংলায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ

মংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ১০:১৫ পিএম, রোববার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ২৭৯৩

মংলা উপজেলায় এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, নিজের মতার বলে স্কুলে ছাত্র/ছাত্রীদের রোদে দার করিয়ে শাস্তি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইচ্ছেমত অতিরিক্ত নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ করাসহ তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা মিঠাখালী ইউনিয়নের এটিসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদা খাতুনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেছেন স্কুলে ছাত্র/ছাত্রী ও এলাকাবাসী। অভিযোগ রয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চাপা দেওয়া হচ্ছে এ শিক্ষকের অনিয়ম। যার ফলে শিশু-কিশোরদের পাঠদানের নামে চলছে প্রতারণা।

অভিযোগে জানা গেছে, অতিরিক্ত পরীার ফি আদায়, স্কুল সংস্কারের নামে লাধিক টাকা আত্মসাৎ,খেলাধুলার সামগ্রী না কিনে টাকা উত্তোলনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে এটিসি মিঠাখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিকিা মাহমুদা খাতুনের বিরুদ্ধে।

চাউল্ড ফ্রেন্ড স্কুল (সিএফএস) আওতায় ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বরাদ্ধ পাওয়া ৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান এ শিকিা, অথচ নির্বিকার কর্তৃপ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সর্বশেষ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিকিা ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে বিভিন্ন মেরামত ও বিদ্যালয়ের উপকরণ ক্রয় করার জন্য গত জুন মাসে প্রায় ৫৪ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। অথচ এ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের কোনো কাজ ও কোনো উপকরণ ক্রয় করেননি। এসব টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এছাড়া স্কুলের সকল কাশের ছাত্র/ছাত্রীদের পুরাতন বই ফেরত না নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তিনি সকল বই ফেরত নিয়ে তা বিক্রি করে কয়েক হাজার টাকা আত্মসাৎ করে। প্রাক প্রাথমিক পরীক্ষায় কোন ফি নেয়ার নিয়ম না থাকলেও তিনি ১০ টাকা হারে শিশুদের কাছ থেকে আদায় করেছেন। ৩য় শ্রেনী থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত বিশেষ একটি প্রকাশনীর গাইড (নোট বই) কিনতে বাধ্য করা হয় সকল ছাত্র/ছাত্রীদের। এ প্রকাশনী থেকে তিনি বাৎসরিক মাসোয়ারা নিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সরকারের নিয়মানুযায়ী প্রজেক্টরের মাধ্যমে কাস নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তিনি তা মানছেন না। গত কয়েকদিন পুর্বে ৩য় শ্রেনীর ছাত্র লিজনকে সামান্য অপরাধে কানদরে রোদে দার করিয়ে রাখেন প্রধান শিক্ষিকা। এ নিয়ে লিজনের অভিভাবক ও এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যদের প্রধান শিকিার নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, যা রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেন স্কুল ছাত্র/ছাত্রীর অভিভাবক ও এলাকাবাসী।

এসব বিষয়ে প্রধান শিকিা মাহমুদা খাতুন কিছু অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমি যখন শ্রেনী কক্ষে কাশ নিতে যাচ্ছিলাম তখন লিজনকে দুষ্টামী করতে দেখে কান ধরতে বলি। পরে চলে আসার সময় তাকে ডেকে নিয়ে কাশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে অন্য অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি।

স্কুল কমিটির সভাপতি মোঃ আঃ সালাম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন,লিজননকে কানধরে রোদে দার করিয়ে রাখার ব্যাপারে তার অভিভাবদের ডেকে মিলমিশ করে দেয়া হয়েছে আর বই বিক্রি বা অন্য অভিযোগ তার জানা নাই।

মংলা সহকারী উপজেলা শিা কর্মকর্তা (এটিসি কাস্টার) মোঃ শাহিনুর রহমান মোড়ল বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, অভিযোগ গুলো তার কাছে বিস্তারিত জানা নেই তবে স্কুল কমিটি ও ছাত্র/ছাত্রীদের কাছে খোজ নিয়ে জানা হবে।

মংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্তে যদি দোষী হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা প্রাথমিক শিা কর্মকর্তা অশোক কুমার সমাদ্দার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, মাহমুদা খাতুনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বর্তমান সরকারের নির্দেশ কোন ছাত্র/ছাত্রীকে শাস্তি দেয়া যাবেনা বা শাস্তিমুলক ব্যাবস্থাও নেয়া যাবেনা। ৩য় শ্রেনীর ছাত্র লিজনকে কানধরে রোদে দার করিয়ে রাখার ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত