প্রাকৃতিক দূর্যোগ আর দস্যু তৎপরতা সহ নানা শংকা

শুটকী মৌসুমকে ঘিরে সমুদ্র যাত্রায় সুন্দরবন উপকুলের হাজারও জেলে

মাসুদ রানা,মোংলা

আপডেট : ০৫:২৫ পিএম, সোমবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৮ | ৮৪৮

সাগরপাড়ে দুবলার চরে আলোর কোলে শুটকী মৌসুমকে ঘিরে সমুদ্র যাত্রা শুরু করেছে সুন্দরবন উপকুলের কয়েক হাজার জেলে। তবে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগ আর দস্যু তৎপরতা সহ বরাবরের মতোই নানা শংকা রয়েছে জেলে মহাজনদের মধ্যে। তাদের এ যাত্রা নির্বিঘœ করতে সুন্দরবনের অভ্যান্তরের নদী পথে র‌্যাব,কোস্টগার্ড-নৌ পুলিশ ও বনবিভাগের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় মোংলার চিলা খাল ও পশুর নদীর পাড়ে অপেক্ষমান জেলেরা সোমবার ভোরে নেমে পড়ে তাদের এ সমুদ্র যাত্রায়।


বনবিভাগ ও শুটকী ব্যবসায়ী সুত্র জানায়, মোংলা থেকে নদী পথে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোসাগরের দুবলার চরাঞ্চলের দূরত্ব প্রায় ১শ’২০ কিলোমিটার। প্রতি বছর অক্টোবর মাস থেকেই সাগর পাড়ে শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে এখানে জড়ো হয়ে থাকে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের উপকুলের হাজার হাজার জেলে। সাগরে মাছ শিকার আর শুটকী প্রক্রিয়া করনের জন্য জেলেরা অস্থায়ী বসতি গাড়ে তোলে দুবলা, মেহের আলী, আলোর কোল নারকেলবাড়ীয়াসহ সুন্দরবন সংলগ্ন সাগর পাড়ের বিভিন্ন চরে। আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত জেলে-মহাজন, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে থাকবে দুর্গম এ চরাঞ্চল। আর এ শুটকী খাতে একদিকে বনবিভাগের কোটি কোটি টাকার সরকারী রাজস্ব আয় ও অন্যদিকে কযেক লাখ লোকের জীবিকা নির্ভর করে সাগর চরের শুঁটকি ব্যবসার উপর।

শুঁটকি মৌসুমকে টার্গেট করে ৩/৪ মাস আগে থেকেই ব্যাংক বা এনজিওর কাছ থেকে ঋন নিয়ে জাল-নৌকা ঠিক করে সাগরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন জেলেরা। তবে এবার ইলিশ আহরনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় নির্ধারিত সময়ের অপেক্ষায় থাকতে হয় শুটকী মৌসুমি জেলেদের। আর এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আগ মুর্হুতে রোববার সকাল থেকেই উপকুলের বিভিন্ন এলাকার জেলেরা সাগরে যাওয়ার জন্য মোংলার চিলা খালে ও চিলা সংলগ্ন পশুর নদীর পাড়ে এসে জড়ো হয়।

দুবলার শুটকী ব্যবসায়ী জালাল আহম্মেদ বুলবুল বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ কিংবা দস্যুদের তৎপরতা না থাকলে এবার সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক ভাবে লাভবান হতে পারবেন বলে আশা করছেন দুবলার শুটকী ব্যবসায়ী ও জেলেরা।


এ ব্যাপারে সাগরপাড় মৎস্যজীবি দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, দুর্যোগ-ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও জলদস্যুদের উৎপাতের আতঙ্ক মাথায় নিয়েই সাগরপাড় উপকুলীয় অঞ্চলের শুটকী মৌসুমে জেলেরা লোকজন, জাল-নৌকা ও মৎস্য আহরণের সরঞ্জাম নিয়ে দুবলার আলোর কোলে সাগর পাড়ের জেলে পল্লীতে ছুটে যাচ্ছে। এসকল শুটকী আহরনকারী জেলেদের কঠোর নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলারাকারী বাহিনীর প্রতি জোড় দাবির আহবান জানায় তিনি।


পুর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, এবারে দুবলার চর বা অন্য চরে অবস্থানরত জেলেরা সুন্দরবনের গাছ এবং বনজ সম্পদ দিয়ে ঘর তৈরি বা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না। গত বছরে শুঁটকি মৌসুমেও সুন্দরবনের বনজ সম্পদ ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি এবারো দেয়া হবেনা।


বনবিভাগের খুলনা সার্কেলের বন সংরক আমির হোসাইন চৌধুরী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, জেলে ও মৎস্যজীবিরা পাস-পারমিট ছাড়া সুন্দরবনে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ও জেলেদের কাছ থেকে যদি সুন্দরবন বিভাগের কেউ অবৈধভাবে টাকা আদায় করে থাকেন এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া সরকারী রাজস্ব আদায়ের েেত্র দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে।


মোংলা উপজেলা চিলা খালে অবস্থান নেয়া জেলেরা জানান, সাগর ও সমুদ্র এলাকায় জলদস্যু ও বনদস্যুদের হামলা,লুটপাট সহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ নানা সমস্যা বরাবরের মতোই মাথায় চেপেছে। তবুও জীবন-জীবিকার সন্ধানে পিছু পা হওয়ার সুযোগ নেই তাদের। তাই প্রচলিত রীতি অনুযায়ী বন বিবি আর গাজী কালুর নামে বিশেষ প্রার্থনা শেষ করেন। পরে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে সমুদ্রে মৎস্য আহরনের জন্য রাতে বনবিভাগের অনুমতি আর পাস-পারমিট নিয়ে সোমবার ভোর হতে না হতেই বঙ্গোপসাগরের দুবলার চরাঞ্চলের উদ্যেশ্যে রওয়ানা হয় জেলেরা।

এ বিষয় পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদাপই স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ কামরুল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, জেলেদের সমুদ্র্র যাত্রা ঘিরে বনবিভাগের সকল টহল ফাঁড়িকে আগ থেকেই সতর্ক থাকার পাশাপাশি অবৈধ প্রবেশকারীদের ঠেকাতে টহল বৃদ্ধিসহ নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে রোববার রাত থেকেই চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। অপর দিকে সমুদ্র ও দুবলাগামী জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পশুর নদী সহ আশপাশের এলাকায় টহল দিচ্ছে নৌ পুলিশ।


কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন মোংলার অপারেশন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, সমুদ্র মোহনাসহ সুন্দরবন উপকুল জুড়ে দস্যুতা দমনে কোস্টগার্ডের নজরদারী সহ টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। যাতে জেলে ও ব্যবসায়ীরা নিরাপদে শুটকী প্রক্রিয়া করন সম্পন্ন করতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত