শতাধিক টন খেজুরের গুড় উৎপাদন বন্ধ

চিতলমারীতে গাছি’র অভাব

এস এস সাগর, চিতলমারী

আপডেট : ০৬:১৮ পিএম, রোববার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১০৪৪

‘গাছ আছে। রসও আছে। কিন্তু গাছ কাটার গাছি নেই। তাই প্রতিবছর শীতের সময় নাতি-নাতিœদের দূর-দূরান্ত হতে রস কিনে এনে পিঁঠে-পায়েশ খাওয়াতে হয়। তার মধ্যে অর্ধেকটা থাকে জল। অথচ নিজের ভিটের পাশে রয়েছে পঁচিশটি খেজুর গাছ।’- রোববার দুপুরে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার টেকের বাজারের বৃদ্ধ রঞ্জিত রায় একটি দোকানের সামনে বসে আক্ষেপ করে এ কথা গুলো বলছিলেন।


তিনি আরও জানান, তার গ্রাম ও ইউনিয়নসহ চিতলমারী উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। আজ থেকে ১০-১২ বছর আগে শীত মৌসুমে গাছিরা (যারা খেজুর গাছ কাটেন) এ সমস্ত গাছ পরিস্কার করে কেটে তা থেকে রস আহরণ করতেন। প্রচুর রস হত। প্রতিদিন গাছিকে দিয়ে যে অর্ধেক টুকু পেতেন তা দিয়ে শীতের সময় পিঁঠে পায়েশ খেয়ে সারা বছরের গুড় বানিয়ে রাখতেন। সে ঘটনা গল্প হয়ে গেছে। এখন শীতের সময় নাতি-নাতিœদের দূর-দূরান্ত হতে প্রতি লিটার রস ৫০ টাকা দরে কিনে এনে পিঁঠে-পায়েশ খাওয়াতে হয়। তার মধ্যে অর্ধেকটা থাকে জল। তা দিয়ে পিঁঠে-পায়েশ বানালে আগের মত আর স্বাদ লাগে না।


কুরমনি গ্রামের বলরাম বিশ্বাস ও আবুল কালাম আজাদ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, নিজেদের গাছ থাকতেও তারা আর আগের মত পিঁঠে-পায়েশ খেতে পারেন না। গাছিরা কোন কিছুর বিনিময়ে এখন খেজুরগাছ কাটতে চান না।


এ ব্যাপারে কুরমুনি গ্রামের বাবু রাম বালা, সুরশাইলের চুবন মন্ডল ও পাটরপাড়া গ্রামের কালাচাঁদ গাছি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এখন গাছ কেটে যে রস ও গুড় পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চানানো সম্ভব নয়। কারণ যে হারে নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্য মূল্য বেড়েছে তাতে অন্য পেশায় না গিয়ে উপায় নেই।


চিতলমারী বাজারের প্রবীণ গুড় ব্যবসায়ী সুমন্ত বসু ও বাবুল শিকদার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এ উপজেলায় প্রতি বছর প্রায় দেড়শ’ টন খেজুরের গুড়ের চাহিদা রয়েছে। যা খুলনা ও যশোরর বিভিন্ন এলাকা থেকে এনে বিক্রি করতে হয়।


তবে বাগেরহাট বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা চিম্ময় মধু বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, চিতলমারী উপজেলায় কমপক্ষে ১০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। যা ঠিকমত গাছিরা পরিচর্যা করলে বছরে প্রায় শতাধিক টন খেজুরের গুড় উৎপাদন হত।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত