৪ হাজার রোগীকে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা প্রদান

এম, এ সবুর রানা, রামপাল ও মাসুদ রানা,মোংলা

আপডেট : ০৬:৩৫ পিএম, শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ | ১৪২৫

মোংলা-রামপাল সম্মিলিত ভাবে দিনব্যাপী চক্ষু শিবির ক্যাম্পিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০ টায় রামপালের বড়দিয়া গ্রামে ব্যারিষ্টার শেখ জাকির হোসেন ও ঢাকা মেগা সিটি লায়ন্স কাবের সভাপতি আলহাজ্ব লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম শান্তির প্রতীক পায়রা উঠিয়ে চক্ষু শিবির ক্যাম্পের এ চক্ষু শিবিরের উদ্ধোধন করেন। এক দিনের চক্ষু শিবিরে মংলা-রামপাল দুই ঊপজেলার পাঁচ হাজার চক্ষু রোগীকে চিকিৎসা ও ফ্রি ঔষধ দেয়া হয়। একই সাথে ছানী পড়া রোগীদের ঢাকায় ফ্রি লেন্স অপারেশন করা হবে আয়োজকদের অর্থায়নে।

দীর্ঘদিন যাবত তার নিজ উদ্যোগে বাগেরহাট জেলার মোংলা-রামপালসহ বিভিন্ন এলাকায় তিনি এ চক্ষু শিবির ক্যাম্প করে আসছে। এ এলাকায় লায়ন ফরিদ কেবল মাত্র চক্ষু শিবির নয় এলাকার দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সুখ দুখের সাথি হয়ে আছে। মোংলা-রামপালে অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির মুখেরদিকে তাকিয়ে ফ্রি চক্ষু চিকিৎসার ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন তিনি।

দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ এ এলাকার প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে পোষ্টার,ব্যানার ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে লোকজনকে জড়ো করেন ড. লায়ন ফরিদ। ঢাকা থেকে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এনে এদের পরিক্ষা নিরিক্ষার পর তাদের চোখের জটিল রোগের জন্য ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যাবস্থা করা হয়। সম্পুর্ন বিনা খরচে রোগিদের ঢাকায় নিয়ে অপারেশন,থাকার ব্যাস্থা,ঔষধের খরচ সবটাই বহন করা হয় ড. ফরিদের তরফ থেকে।

গত পনের দিন ধরে মোংলা-রামপালে প্রতিটি এলাকায় পোষ্টারের মাধ্যমে এ চক্ষু শিবিরের আয়োজন করে। শীতের কুয়াশার মধ্যেও ভোর থেকে চোখের সমস্যা নিয়ে রুগিরা এখানে আসতে শুরু করে। ঢাকা থেকে ৬জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ প্রায় ১৫জনের একটি টিম এ রুগিদের চিকিৎসা শুরু করে। মোংলা উপজেলার শেষ প্রান্ত জয়মনির ঘোল এলাকা থেকে চোখের সমস্যা নিয়ে আসা মোঃ জয়নাল আবেদীন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, চোখের ছানির ব্যাপারে গত বছর আমরা ৫জন ফরিদ ভাইয়ের আহবানে ঢাকায় গিয়েছি। তার নিজের খরচে আমাদের চিকিৎসা করিয়েছে। সেখানে থাকা অবস্থায় প্রতিদিন আমাদের খোজ খবর নিয়েছে। শুধু চিকিৎসা নয় তিনি আমাদের ঢাকা থেকে মোংলায় ঘড়ে পৌছে দিয়েছে।

হুকড়া ইউনিয়ন থেকে চোখ অপারেশনের জন্যে আসা জয়বুননেছা বেগম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, অনেক দিন ধরে আমার চোখের সমস্যা দেখা দিয়েছে। চোখ দিয়ে প্রতি নিয়ত পানি ঝগছে,ভাল করে দেখতে পারছিনা। টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছিনা। ড. ফরিদ খবর শুনে আমাকে লোকের মাধ্যমে এখানে নিয়ে এসেছে। ঢাকায় নিয়ে যাবে,আশা করি ভাল চিকিৎসা করিয়ে ভাল হয়ে ফিড়ে আসবো। আল্লাহ এনার দীর্ঘ আয়ু দান করুক, আমরা তার জন্য দোয়া করি।

রামপালের বড়দিয়া গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ব্যারিষ্টার শেখ জাকির হোসেন, দৈনিক সময়ের খবর পত্রিকার সম্পাদক মোঃ তরিকুল ইসলাম, আলহাজ্ব শেখ মোহাম্মাদ আলী, সরদার বোরহান উদ্দিন,মোঃ জাহিদুল ইসলাম,মোল্লা আবু তাহের ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ আজম শেখ, উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সরদার বোরহান উদ্দিন, বাঁশতলী ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি শেখ আব্দুল্লাহ আজমীর, বড়দিয়া হাজী আরিফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি শেখ আলী আজম প্রমুখ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ ক্যাম্পিংয়ে ভীড় জমে দৃস্টি শক্তিহীন হাজারও মানুষের। এখান থেকে রোগী বাছাই করে ঢাকায় পাঠানো হবে এবং যাতায়াত ব্যবস্থাসহ ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে লায়ন কাবের অর্থায়নে।

লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, সমাজে কিছু সুবিধাবঞ্চিত মানুষ আছে আমাদের উচিত তাদের এ সেবাটা দেয়া। আশপাশে অনেক গরিব ও অসহায় লোক আছে যারা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে চোখের চিকিৎসা করাতে পারছেনা, তাদের কাছে অনেক ব্যায়বহুল। আমাদের এই চক্ষু শিবিরের মুল উদেশ্য হচ্ছে, মানুষের যে চোখের ছানি সমস্যা এটা ধীরে ধীরে অন্ধত্বেরদিকে ধাবিত হয়। যারা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনা এ মানুষ গুলো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেন দেখতে পারে এটাই আমার লক্ষ্য এবং উদেশ্য। তিনি আরও বলেন, মোংলা ও রামপালের ২০০৯ সাল থেকে অসহায় গরীব মানুষদের অন্ধত্ব প্রতিরোধে প্রায় সাড়ে ৪হাজার রোগীকে ফ্রী চক্ষু শিবিরের মাধ্যমে নালী ও ছানী অপারেশন এবং ৬০ হাজারেরও বেশী চক্ষু রোগীদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা করে আসছি। এ এলাকা আমার জন্মভুমি, জীবনে যে কয়টি দিন আমি বেঁচে থাকবো মোংলা-রামপালের প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে আমাকে পাবে। যদি এ অঞ্চলের মানুষ তাকে সুযোগ করে দেন তবে এ কার্যক্রম অব্যহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত