সামাজিক বনায়ন ধ্বংশ করে মাটি লুটের পায়তারা

শরণখোলায় বাঁধের মাটি কেটে বাঁধ নির্মান !

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ০৬:১৪ পিএম, মঙ্গলবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ | ৯৫৭

শরণখোলায় বাঁধের মাটি কেটে বাঁধ নির্মান করতে গিয়ে সামাজিক বনায়নের বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক হাজার গাছ ধ্বংশের অপতৎপরতায় মেতে উঠেছেন চায়নার একটি ঠিাকদারী প্রতিষ্ঠান। তবে স্থানীয় কিছু লোভী রাজনৈতিক নেতা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা জুড়ে মাটি বানিজ্যের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অপরদিকে, উপকুলীয় অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন রক্ষাকারী ভেরী বাঁধটির কাজের মান নি¤œ মুখী হলেও তা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছেন না কেউ।


খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপকুল বাসীকে ঝড়, জলোচ্ছাশ সহ নানা প্রাকৃতি দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষার্থে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ৬শ কোটি টাকা ব্যায়ে গত ৩ বছর পূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের ৬৩ কিলোমিটার ঝুকিপূর্ন ভেরী বাঁধ নির্মান কাজ শুরু করেন চীনের এইচ, সি, ডাব্লিউই নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। উক্ত বাঁধ নির্মানের জন্য মাটি সংগ্রহের কাজ করাতে গিয়ে বাঁধের পাশ থেকে বলেশ্বর নদী থেকে ব্যাপক গভীর করে স্থানীয় কিছু লোভী রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তায় উপজেলা জুড়ে মাটি লুটের মহোৎসব শুরু করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

১৮ ফেব্রুয়ারী (সোমবার) সকালে উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের মধ্য ও পূর্ব খোন্তাকাটার মধ্যবর্তী এলাকা থেকে উপকুলীয় সামাজিক বনায়নের রোপনকৃত নানা প্রজাতির কয়েক হাজার গাছ কর্তনের অপতৎপরতা শুরু করেন ওই প্রতিষ্টানটির পক্ষে মাটি সংগ্রহকারী এক ঠিকাদারী। ওই সময় স্থানীয় বাসিন্দা আঃ রহিম গাজী, আনসার হাওলাদার, নজরুল ইসলাম হাওলাদার, বাদল হাওলাদার, আলম তালুকদার, মোতালেব তালুকাদর, সুলতান তালুকদার, জলির তালুকদার, সোবাহান তালুকদার, বাচ্চু হাওলাদার সহ অর্ধশত গ্রামবাসী বনায়নের গাছসহ মাটি না কাটার জন্য বাঁধা দেয়। কিন্তু গ্রামবাসীর উপেক্ষা করে৩৫/১ পোল্ডারের ভেরী বাঁধটির ওই এলাকা ঘেষে প্রায় ১৫/২০ একর জমির বনায়নের শত শত গাছ মুহুতেই কেটে ফেলে। জবরদখল করে মাটি লুটের বিষয়টি পরবর্তীতে স্থানীয়রা খোন্তাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন ও সামাজিক বন বিভাগ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তাদের হস্তক্ষেপে ধ্বংসের হাত থেকে বনায়নটির রক্ষা মেলে।



এ ব্যাপারে, স্থানীয় যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন মধু বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বাঁধ নির্মানের কাজ শুরু হওয়ার কাজ থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কিছু লোভী রাজনৈতিক নেতা সরকারী জমি সহ অন্যের মালিকানা জমির মাটি জোর পূর্বক লুট করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এবং বাঁধের কোল থেকে মাটি কেটে চায়না কোম্পানী দায়সারা ভাবে বাঁধের কাজ করায় সরকারের এই বড় প্রকল্পের স্থায়িত্ব সহ কোটি কোটি টাকা পানিতে ভেঁসে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

এছাড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশের পক্ষে ৩৫/১ বাঁধের নির্মান কাজ দেখাশুনার দায়িত্বরত কর্মকর্তা প্রকৌশলী শ্যামল কুমার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে মাটি সংগ্রহের কাজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নয়। বাঁধের মাটি সরবারহের জন্য আলাদা ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে মাটি সংগ্রহের ব্যাপারে এলাকাবাসীর কোন অভিযোগ থাকলে উক্ত মাটি গ্রহন করা হবে না। এছাড়া পরিবেশের ক্ষতি করে বাঁধ নির্মান করা প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য নয়।

সামাজিক বনায়নের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা শেখ মোঃ মিজানুর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, একাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি ওই এলাকায় গিয়ে বিষয়টির খোঁজখবর নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগীতায় বনের গাছ টাকা সহ মাটি খননের কাজ বন্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ভেঁরী বাঁধ নির্মান কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, সামাজিক বনায়ন ধ্বংস করে মাটি খননের খবর তিনি এলাবাসীর মাধ্যমে অবগত আছেন। ইতোমধ্যে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও সামাজিক বন বিভাগ কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত