মোংলা বন্দরের জন্য ৪৪৩ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সংগ্রহের প্রকল্প অনুমোদন

মাসুদ রানা, মোংলা 

আপডেট : ১১:৩৬ এএম, সোমবার, ৬ মে ২০১৯ | ৬১৯

মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। সেই সাথে যুক্ত হচ্ছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্রেন ও অন্যান্য সরঞ্জাম। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মংলা বন্দরের জন্য ৪৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে অত্যাবশকীয় যন্ত্রপাতি/সরঞ্জাম সংগ্রহ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সাতটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মোবাইল হারবার ও মাল্টিপারপাস ক্রেন, উচ্চক্ষমতার ফর্কলিফট, রিচ ট্রাক, লো-মাস্ট ফর্ক লিফট ট্রাক, রোড রোলার, ডাম্প ট্রাক ও এম্পটি কনটেইনার হ্যান্ডলার।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাতটি ক্রেনের মধ্যে ১৪ সারির কনটেইনার হ্যান্ডলিং উপযোগী তিনটি, পাঁচ মিটার ব্যাসার্ধের ৩০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি মোবাইল হারবার এবং দুটি ১০ মিটার ব্যাসার্ধের ৫০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টিপারপাস ক্রেন রয়েছে। পাশাপাশি ১০টি স্ট্রাডেল ক্যারিয়ার, দুটি ৩০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ফর্কলিফট ট্রাক, দুটি ৪০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ভেরিয়েবল রিচ ট্রাক, চারটি পাঁচ টন ক্ষমতাসম্পন্ন লো-মাস্ট ফর্কলিফট ট্রাক, ১৫টি তিন টন লো মাস্ট ফর্কলিফট ট্রাক, চারটি ১০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ডাম্প ট্রাক, ১০-১২ টন ক্ষমতাসম্পন্ন রোড রোলার এবং নয় টন ক্ষমতাসম্পন্ন এম্পটি কনটেইনার হ্যান্ডলার স্থাপন করা হবে।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে ঢাকা ও এর আশপাশের আমদানি-রফতানি পণ্য, বিশেষ করে গার্মেন্ট সামগ্রী মংলা বন্দরের মাধ্যমে পরিবহন সহজ হবে। মংলায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে নানা পণ্যের আমদানি-রফতানি বাড়বে। ভারত, নেপাল ও ভুটানে ট্রানজিট সুবিধা চালু হলে এ বন্দর ব্যবহারের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া মংলা বন্দর থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত পশুর চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানির মাধ্যমে বছরে ৪৫ লাখ টন কয়লা পরিবহনের সুযোগ থাকবে। ফলে মংলা বন্দরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গতি ত্বরান্বিত করার সুযোগ তৈরি হবে।


এ বিষয়ে মংলা বন্দর কর্তৃৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ঢাকা-মাওয়া-মংলা মহাসড়ক উন্নয়ন, পদ্মা সেতু নির্মাণ, খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ, রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, মংলা বন্দর এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, মংলা ইপিজেড সম্প্রসারণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি কাজ এগিয়ে চলছে। এজন্য বন্দরের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন করে যন্ত্রপাতি/সরঞ্জাম যুক্ত হলে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সময় সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমবে।


জানা গেছে, বর্তমানে মংলা বন্দরে ছয়টি নিজস্ব জেটি, ব্যক্তি মালিকানাধীন সাতটি জেটি এবং ২২টি অ্যাংকরেজের মাধ্যমে ৩৫টি জাহাজ একসঙ্গে হ্যান্ডলিং করা সম্ভব। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বন্দরের মাধ্যমে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৭৮৪টি। যেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে হয়েছিল মাত্র ১৩৯টি জাহাজ। এর মধ্যে অধিকাংশই আমদানিপণ্য। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আয় হয়েছে ২৬৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৯৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা।


প্রাথমিকভাবে মংলা বন্দরে জেটি নির্মাণের পর থেকে নাব্য সংকটের কারণে একটির অধিক জেটিতে জাহাজ হ্যান্ডল করা সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি ক্যাপিটাল ড্রেজিং সম্পন্ন হওয়ায় পাঁচটি জেটিতেই কাক্সিক্ষত নাব্যতা থাকায় একসঙ্গে একাধিক জেটিতে জাহাজ হ্যান্ডল করা সম্ভব হচ্ছে।


বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে ৪৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে অত্যাবশকীয় যন্ত্রপাতি/সরঞ্জাম সংগ্রহ প্রকল্প মংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।


উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালে ১১ ডিসেম্বর ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ ‘দ্য সিটি অব লায়নস’ সুন্দরবনের পশুর নদের জয়মনির গোল নামক স্থানে নোঙর করে। এটাই ছিল মংলা বন্দর প্রতিষ্ঠার শুভ সূচনা। এরপর ১৯৫১ সালের ৭ মার্চ জয়মনির গোল থেকে ১৪ মাইল উজানে চালনা নামক স্থানে এ বন্দর স্থানান্তরিত হয়। সেখানে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত এ বন্দরের কার্যক্রম চলে। পরবর্তীতে প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৫৪ সালের ২০ জুন এ বন্দরকে সরিয়ে বর্তমানের মংলা নামক স্থানে স্থানান্তর করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত