বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রে

করমজলে কুমির জুলিয়েট ডিম দিয়েছে ৩৪টি

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ০৫:৪৮ পিএম, সোমবার, ২০ মে ২০১৯ | ৫৯৮

এ পর্যন্ত ১৩ বার ডিম দিলেও প্রায় ৩৫ বছর বয়সী কুমির ‘জুলিয়েট’ গত দু’বছর ধরে মা হতে পারেনি। তাই এবার ডিম দেওয়ার পর সে যেন মা হতে পারে এ জন্য সংশ্লিষ্টরা ভিন্ন পস্থা অবলম্বন করেছেন। মা হওয়ার জন্য এবার তার পাড়া ডিম দিয়ে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দু’পদ্ধতিই ব্যবহার করা হচ্ছে। শনিবার তার দেয়া এবারের ৩৪টি ডিমের মধ্যে প্রাকৃতিক ভাবেই বাচ্চা ফুটানোর জন্য তার বাসাতে রাখা হয়েছে ৮টি ডিম। আর বাকী ২৬টি ডিম কৃত্রিম পদ্ধতিতে ফুটানোর জন্য রাখা হয়েছে ইনকিউভেটরে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে পন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের পুকুর পাড়ে শনিবার সকাল থেকে মা কুমির ‘জুলিয়েট’ তার বাসায় একে একে ৩৪টি ডিম পাড়ে। এরপর ডিমগুলোর কিছু পুকুর পাড়ে কুমিরের তৈরি বাসায় ও বাকীগুলো সরিয়ে কেন্দ্রের ইনকিউভেটরে রাখা হয়। সব ঠিক থাকলে প্রায় ৯০ দিন পর ডিম হতে বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে সুন্দরবন বিভাগ।

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ফরেষ্টার মোঃ আজাদ কবির বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, কুমির লালন পালন কেন্দ্রের বিলুপ্ত প্রায় লোনা পানি প্রজাতির মা কুমির ‘জুলিয়েট’ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুকুর পাড়ে তৈরিকৃত তার বাসায় ডিম দিতে শুরু করে। ঘন্টা খানেক সময়ের মধ্যে একে একে ৩৪টি ডিম দেয় সে। গত দু’বছর জুলিয়েটের ডিম থেকে কোন বাচ্চা না ফুটায় এবার ভিন্ন পস্থা অবলম্বন করা হয়েছে। প্রাকৃতিক ভাবেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য এবার কুমিরের বাসায় ৮টি ডিম রাখা হয়েছে। আর বাকী ২৬টি ডিম কৃত্রিম পদ্ধতিতে ফুটানোর জন্য রাখা হয়েছে ইনকিউভেটরে।

আজাদ কবির বলেন, আশা করছি এখন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রাকৃতিক ও সংরণকৃত এ ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হবে। যেহেতু বিগত দুই বছর জুলিয়েটের ডিম থেকে একটিও বাচ্চা ফোটেনি এ কারণে এবার প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দু’পদ্ধতিই ব্যবহার করা হচ্ছে। এ নিয়ে জুলিয়েট ১৩ বার ডিম দিল করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে। তবে মা কুমির জুলিয়েট গত বছর ৫০টি ও তার আগের বছর ৪৩টি ডিম দেয়। কিন্তু এ সবের একটি ডিম থেকেও গত দু’বছরে কোন বাচ্চা ফুটেনি। সবগুলো ডিম নষ্ট হয়ে যায়। তবে এবার সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে করমজলের কুমির জুলিয়েটের পরিবারে নতুন অতিথি আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের সূত্র জানায়, এক সময় বাংলাদেশে লবণ পানির কুমির, মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়াল এই তিন প্রজাতির কুমিরের অস্তিত্ব ছিল। এর মধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়াল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শুধু লবণ পানির কুমিরই কোন ভাবে টিকে আছে। তাই বিলুপ্ত প্রায় লোনা পানি প্রজাতির কুমির রায় পদপে নেয় বন বিভাগ। দেশের বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির নোনা পানির কুমিরের প্রজনন, বৃদ্ধি ও তা সংরণে জন্য সরকারিভাবে ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে বন বিভাগের উদ্যোগে সরকারীভাবে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি। বন বিভাগের বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন প্রকল্পের আওতায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয় কেন্দ্রটি। শুরুতেই জেলেদের জালে ধরা পড়া ছোট-বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কেন্দ্রটিতে নোনা পানি প্রজাতির ছোট বড় মিলিয়ে মোট ১৯৭টি কুমির রয়েছে। এদের মধ্যে ছয়টি কুমির বড়। যার মধ্যে স্ত্রী কুমির ‘জুলিয়েট’ ও ‘পিলপিল’ রয়েছে। বাকী ৪টি পুরুষ প্রজাতির। এদের বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে জন্ম নেয়া কুমিরগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত ৭/৮ বছর বয়সী ৯৭টি ছোট কুমির সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে অবমুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, পটুয়াখালী বন বিভাগের কাছেও কিছু কুমির অবমুক্ত করা হয়েছে । নোনা পানির কুমির সাধারণত ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। আর বেঁচে থাকে ৮০-১০০ বছর পর্যন্ত।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত