সুন্দরবন ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এন্ড প্রাইভেট হাসপাতালে

রামপালে ভুল অপারেশনে প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু

এম এ সবুর রানা, রামপাল

আপডেট : ০৫:১৬ পিএম, সোমবার, ২৭ মে ২০১৯ | ১৩৯৬

রামপালে সুন্দরবন ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এন্ড প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আবারো ভুল অপারশনে প্রসূতি ও নবজাতক মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা আইনগত প্রতিকার পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

উপজেলার চিত্রা গ্রামের ভ্যান চালক মোজাম্মেল শেখের স্ত্রী প্রসূতি মুসলিমা বেগম (২৪) কে ২৫ মে শনিবার সকাল ৬টায় সুন্দরবন ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এন্ড প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিছুক্ষন পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মাসুমা সুলতানা রাকা ও হাসপাতালের ম্যানেজার নাজমুল হোসেন রোগীর স্বজনদের বলেন, আপনাদের রোগীর অবস্থা আশংকাজনক এখনই রোগীকে বাঁচাতে হলে এখনই সিজার করতে হবে। তখন ১৪ হাজার টাকা চুক্তিতে ওই দিন সকাল সাড়ে ৮টায় প্রসূতিকে সিজার করা হয়। সিজারের এক পর্যায়ে ওটি থেকে অসুস্থ নবজাতককে বের করে রোগীর স্বজনদের উন্নত চিকিৎসার জন্য খুমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। তাৎক্ষনিকভাবে নবজাতককে খুলনা শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর, অপারেশনকৃত প্রসূতি মুসলিমার ব্যপক রক্তক্ষরণ শুরু হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে প্রসূতিকে ৬/৭ ব্যাগ রক্ত পুশ করে। সিজার অপারেশনে নিয়োজিত চিকিৎসক ওই অবস্থা দেখে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করেন।

এরপর আবারো তাকে ডেকে এনে ওই প্রসূতিকে পূণরায় ওটিতে নিয়ে দ্বিতীয়বার অপারেশন করা হলে রোগীর অবস্থার আরো অবনতি হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই দিন বেলা ২টার সময় রোগীকে খুমেক হাসপাতালে নিয়ে যান। খুমেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসকরা রোগীনিকে আইসিইউতে ভর্তি করেন। চিকিৎসকরা পূর্ব অপারেশনকৃত রোগীনির চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখতে চাইলে সুন্দরবন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র লুকিয়ে রাখেন। এতে খুমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এরপর সুন্দরবন হাসপাতালে ম্যানেজার নাজমুল হোসেন ও তার সহকারীরা রাত ৮টার দিকে খুমেক হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসে। ওই দিন রাত পৌনে ১২টায় প্রসূতি মারা যায় এবং পরদিন সকাল ৭টায় শিশু হাসপাতালে নবজাতক ও মারা যায়। ভিকটিমের স্বামী মোজাম্মেল হোসেন তার শশুরবাড়ী বটিয়াঘাটা উপজেলার কিসমত কুড়িঘাটা গ্রামে স্ত্রী ও সন্তানের লাশ রবিবার বেলা ১১টায় দাফন করে।

স্বামী মোজাম্মেল বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান আমরা অত্যান্ত গরিব মানুষ। আমার স্ত্রী মুসলিমার নাড়ি কেটে রক্তপাত ঘটিয়ে ডাক্তার মাসুমা রাকা ও ম্যানেজার নাজমুল মেরে ফেলে। তিনি এর যথাযথ বিচার দাবী করেন। এব্যাপারে হাসপাতালের ম্যানেজার নাজমুল হোসেনের মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমাদের এখানে সিজারিয়ান করা হয়েছে কিন্তু রোগী মারা গেছে খুমেক হাসপাতালে। তিনি সাংবাদিকদের ফোনে কথা না বলার পরামর্শ দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে বলেন। তার কাছে গাইনি চিকিৎসক ডাঃ মাসুমা রাকার ফোন নম্বর চাইলে তিনি নম্বর দিতে অস্বীকার করে ফোন কেটে দেন।

হাসপাতালের পার্টনার শেখ জুলফিকার আলীর কাছে জানতে চাইলে কমান্ডারের দোহাই দিয়ে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, সব কথা ফোনে বলা যাবে না। এ ব্যপারে রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কুমার পালকে প্রসূতি ও নবজাতক মৃত্যুর বিষয়টি অবহিত করা হলে, তিনি আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান।

প্রসূতি ও নবজাতক মৃত্যুর বিষয়টি রামপাল থানার ওসি শেখ লুৎফর রহমানকে অবহিত করা হলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। উল্লেখ্য অনুমোদনহীন সুন্দরবন ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এন্ড প্রাইভেট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ও বেশ কয়েকটি ভূল অপারেশন ও রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্র পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রকাশিত হলেও প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের টনক নড়েনি। এলাকাবাসি এই ভূয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জোরদাবী জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত