ঢাবিতে সুযোগ পাওয়া বাগেরহাটের গরীব জমজ বোন সুরাইয়া ও সুমাইয়া দায়িত্ব নিলেন ডিসি

শওকত আলী বাবু

আপডেট : ০৪:১০ পিএম, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০১৯ | ৮৭৬

গত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে দুই যমজ বোনের ছবি। তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে অনুরোধ করেছেন অনেকে। জানা গেছে, অন্য কোনো মানবিক কারণে নয়, প্রাচ্যের অস্কফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান এই দুই তরুণী। সেই স্বপ্ন পূরণে নিজেদের দায়িত্ব যথাযথ পালনও করেছেন তারা।

ভর্তি পরীা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিা অনুষদের অধীন ‘গ’ ইউনিটে মেধা তালিকায় স্থানও করে নিয়েছেন দুজনেই। তবুও তাদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। স্বপ্ন পূরণের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে টাকা। জানা গেছে, এই দুই মেধাবী যমজ বোনের নাম সাদিয়া আক্তার সুরাইয়া ও নাদিরা ফারজানা সুমাইয়া।

বাগেরহাটের হরিণখানা গ্রামের মো. মহিদুল হাওলাদার ও শাহিদা বেগমের ঘরে জন্ম তাদের। বাবার আর্থিক অস্বচ্ছলতার মধ্যেও নিজেদের লেখাপড়া চালিয়ে নিয়ে গেছেন। বাগেরহাট আদর্শ বিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে সুরাইয়া ৪.৮৬, সুমাইয়া ৪.৯১ গ্রেড পেয়ে এসএসসি পাশ করে। পরে বাগেরহাট সরকারী পিসি কলেজে ভর্তি হয়ে এইচ এসসিতে যমজ এদুই বোনই গোল্ডেন এ-প্লাস পান। ভালো ফলাফল অর্জন করে গেছেন ঢাকায়। উদ্দেশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। গ ইউনিটের ভর্তি পরীা দিয়ে মেধা তালিকায় স্থানও করে নেন সুরাইয়া ও সুমাইয়া। তাদের ক্রম যথাক্রমে ১১৬৩ ও ৮৪৬। এখন অর্থাভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও পড়াশুনা চালিয়ে নেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তারা।

নিজেদের উদ্বেগের প্রকাশ করে সাদিয়া আক্তার সুরাইয়া এক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা চান্স পেয়েছি। তবে ভর্তি নিয়ে এবং পরের খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। বৃত্তির জন্য আবেদন করেছি, তবে এখনো গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়া ভর্তির টাকা ম্যানেজ হয়েছে কিনা তাও জানি না। ৩১ তারিখের মধ্যে আমাদের ভর্তি হতে হবে। অথচ হাতে কোনো টাকাই নেই।’এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছেন এ দুই বোন।

ফেসবুকে এ দুই বোন লিখেছেন, আমাদের বাবা একজন দরিদ্র দিনমজুর, মা গৃহিনী। বড় কোন ভাই নেই। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত টিউশনি করিয়ে পড়াশুনার খরচ জোগাড় করেছি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীায় আমরা দুই বোনই জিপিএ-৫ (গোল্ডেন অ+) পেয়েছি। আমাদের দুই বোনের স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা। আমরা ভর্তি পরীায় জয়ী হয়েছি।

ভর্তির শেষ তারিখ ৩১ অক্টোবর। বর্তমানে ভর্তির জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা জোগাড় করা আমাদের পে সম্ভব নয়। এছাড়া পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে এখানে পড়া শোনার খরচ চালিয়ে যাওয়াও প্র্রায় অসম্ভব। এজন্য বৃত্তির আবেদন করেছি। তবে এখন পর্যন্ত বৃত্তির ব্যবস্থা হয়নি।

জানা গেছে, ফেসবুকে বিষয়টি প্রকাশের পর তাদের ভর্তির জন্য সহায়তা করতে অনেকেই যোগাযোগ করছেন।

এদিকে গরীব মেধাবী বাগেরহাট শহরের হরিণখানা এলাকার জমজ বোন সাদিয়া আক্তার সুরাইয়া ও নাদিরা ফারজানা সুমাইয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। শনিবার দুপুরে বাগেরহাট সার্কিট হাউসে ওই দুই শিার্থী ও তার মা সাহিদা বেগমের সাথে কথা বলে তিনি এই আশ্বাস দেন। এসময় বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান, মোহাম্মাদ শাহজাহান, রাহাত উজ্জামান, বাগেরহাট পৌর সভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোল্লা নাসির উপস্থিত ছিলেন।

পৌর কাউন্সিলর মোল্লা নাসির উদ্দিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, আমার ওয়ার্ডের হরিনখানা এলাকার এই দ্্্্্্ুই মেধাবী শিার্থী ঢাবিতে সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি প্রথমে ফেসবুকে পোষ্ট দেয়। বিষয়টি অবগত হবার পর শুক্রবার তাদের বিষয়ে আলোচনার সুত্রপাত হয়। একপর্যায়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মানুনুর রশীদ দেখতে পেয়ে তাদের শনিবার সার্কিট হাউজে ডেকে নিয়ে সহায়তার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এছাড়া বাগেরহাট পৌরসভার তহবিল থেকে মেয়র খান হাবিবুর রহমানও এ দুই শিার্থীর পড়াশোনার জন্য ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন। আমরা পৌর সভার কাউন্সিলর সকলের সর্বসম্মতিক্রমেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বলে জানান কাউন্সিলর নাসির।

তিনি আরও জানান, শনিবার সার্কিট হাউজে উপস্থিত হলে বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন মেধাবী ওই দুই শিার্থীকে দু’টি সিমফনী আলফা মোবাইল ফোনও উপহার দেন।

বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের আহবায়ক সরদার নাসির উদ্দিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে আমি বাগেরহাট-২ (সদর ও কচুয়া উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়কে জানিয়েছি। তিনি মেধাবী এই দুই ছাত্রী নির্বিগ্নে যাতে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেন সে ব্যবস্থা গ্রহন করতে বলেছেন। আমরা তাদের সহযোগীতার জন্য পাশে রয়েছি।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, তাদের মায়ের সাথে কথা বলেছি তাদের ভর্তির জন্য কত টাকা প্রয়োজন এবং তাদের আরকি সাহায্য দরকার সেটা জানতে চেয়েছি। এ বিষয় সাহিদা বেগম আমাকে বলেছেন দ্রুতই খোজ নিয়ে জানাবে । আমরা তার দুই কন্যার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতার কথা নিশ্চিত করেছি তাকে।


মেধাবি জমজ দুই কন্যার মা সাহিদা বেগম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, অর্থকষ্টে থাকার পরও সাধ্যমত তাদের পড়ালেখা করার জন্য চেষ্টা করেছি। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর অনেক চিন্তিত ছিলাম, কি করব তাদের বিষয়ে। তারা ফেসবুকে প্রথমে বিষয়টি সকলের দৃস্টি আর্কষনের জন্য চেষ্টা করেছে। তাতে সাড়া দিয়ে জেলা প্রশাসক, পৌর মেয়র , উপজেলা চেয়ারম্যানসহ যারা ইতিমধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকবো।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত