দি ঢাকা আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন

গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দিয়ে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ১২:০০ এএম, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৭ | ১০৫৪

বাগেরহাটে দি ঢাকা আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড নামে আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাতের পর সেই অর্থ ফেরত না দিয়ে কর্মকর্তারা নানা রকম তালবাহান করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থানে ধর্ণাদিয়ে নিরুপায় হয়ে আমানতকারীরা বাগেরহাট প্রেসকাবে সংবাদ সম্মেলন করে।
এরপর কয়েকটি পত্রিকা ও অনলাইনে অর্থআত্মসাতের সংবাদ প্রকাশ হলে ওই শাখায় কর্মরত কর্মকর্তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়।

বুধবার বিকেলে তারা বাগেরহাট প্রেসকাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে তারা নির্দোষ দাবী করে। এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দি ঢাকা আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিঃ বাগেরহাট শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক মোঃ স্বাধীন শেখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের মৃত নিরোধ বিহারী হালদারের ছেলে নীহার রঞ্জন হালদার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় প্রায় পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের দুই কোটি ৫৩ লাখ টাকা আত্মসাত করে ভারতে পালিয়ে যায়। এরপর কর্তৃপক্ষ আমাকে শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্বভার দেন। আমি সাত মাস ধরে ৩শ গ্রাহকের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত বাকি গ্রাহকদের টাকা দেওয়ার জন্য প্রতিকুলতার মধ্যেও আমি প্রতিষ্ঠানটি চালু রেখেছি। আশা করি লগ্নিকৃত টাকা উত্তোলন করে বাকি গ্রাহকদের পরিশোধ করতে পারবো।

কিন্তু গ্রাহকদের অভিযোগ আইনী জটিলতা থেকে বাঁচতে তারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেদের নির্দোষ সাজানোর চেষ্টা করছেন। যাতে আমানতকারীরা তাদের বিরুদ্ধে কিছু না করতে পারে।

বাগেরহাট সাধনার মোড় এলাকার পত্রিকা পরিবেশক ও ওই প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক মোকাদ্দেস আলী বলেন, ব্যাংকের বর্তমান কর্মকর্তারাও এই অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িত। তারা সাবেক ম্যানেজার নীহার রঞ্জন হালদারের উপর দায় চাপিয়ে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাত করার চেষ্টা করছে। তারা সকলকে তাদের জমাকৃত অর্থ ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে নানা রকম ফন্দি আটছে। ইতিমধ্যে তারা তাদের অফিস পাল্টিয়ে দশানী এলাকায় নিয়ে গেছে।

এদিকে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাধনার মোড় এলাকায় ৫ বছর ধরে জনগনের সাথে প্রতারণা করে আসলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনটি গত ২৪ নভেম্বর ভুক্তভোগীদের বাগেরহাট প্রেসকাবের সংবাদ সম্মেলনের পর দেশের প্রথম সারির পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে নিউজটি প্রকাশ করলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। এতে গ্রাহকদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, বেসরকারি অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান বাগেরহাটের পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের অন্তত ২০ কোটি টাকা আতœসাত করেছে । প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম অব্যাহত থাকেলেও কর্তৃপক্ষ এসব গ্রাহকদের জমা রাখা টাকা ফেরৎ তো দিচ্ছেই না উল্টো তাদের বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দিচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে দি ঢাকা আরবান কো অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি তার ব্যবহৃত ফোন রিসিভ করেননি।

তবে বাগেরহাট শাখা ব্যবস্থাপক মো. স্বাধীন শেখ বুধবার সন্ধায় এই প্রতিবেদককে বলেন, ডিড শেষ হওয়ার কারনে অফিস পাল্টিয়ে দশানী এলাকায় নেয়া হয়েছে। বর্তমান দায়িত্বে থাকা কেউ কোন টাকা আত্মসাত করেনি।

উল্লেখ্য, দি ঢাকা আরবান কো অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড নামের এই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন চৌধুরী। তার বাড়ি পিরোজপুর জেলার শিকারপুর গ্রামে। ২০১২ সালে বাগেরহাট শহরের সাধনার মোড়ে সফি মার্কেটের তিন তলা ভাড়া নিয়ে দি ঢাকা আরবান কো অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেডের নামে একটি প্রতিষ্ঠান সাইবোর্ড ঝুলিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। তারা টাকা সঞ্চয়ের (এফডিআর, ডিপিএস) নামে বিভিন্ন লোভনীয় অফার দেখিয়ে গ্রাহকদের সঞ্চয় করতে প্রচারণা শুরু করে। এরমধ্যে ফিক্সড ডিপোজিটে এক লাখ টাকা জমা রাখলে মাসে দুই হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেয়। তাদের পাতা ফাঁদে পা দেয় বাগেরহাটের বিভিন্ন পেশার কয়েকশ গ্রাহক। পরে গ্রাহকরা তাদের জমা রাখা টাকা ফেরৎ চাইতে শুরু করলে ওই প্রতিষ্ঠানের তৎকালিন ব্যবস্থাপক নিহার রঞ্জন হালদার এলাকা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে চলে যান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত