সমন্বিত পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষে কৃষক ইনছান এখন অনেক স্বাবলম্বী

নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে বেতাগা আরো একধাপ এগিয়ে

পি কে অলোক,ফকিরহাট থেকে

আপডেট : ০৪:৫০ পিএম, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ | ১২৭৮

ফকিরহাট উপজেলার বেতাগায় সমন্বিত পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ করে কৃষক ইনছান উদ্দিন এখন অনেক স্বাবলম্বী হয়েছেন। নিজের প্রচেষ্টা ও কৃষি বিভাগের পরামর্শ এবং ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগীতার কারণে এই সফলতা অর্জন করতে সম হয়েছেন। তার দেখাদেখি অনেক কৃষক একই সমন্বিত পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করে তাদেরও ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন বলেও তিনি দাবী করেন।

সমন্বিত পদ্ধতির এধারা অব্যাহত রাখলে বিষমুক্ত সবজির চাহিদা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে বলেও কৃষিবিদদের ধারনা।


জানা গেছে, বেতাগার মাসকাটা বিলের মৎস্য চাষি ইনছান উদ্দিন, ২০১৪ সালে নিজ ইচ্ছায় তার মালিকানাধীন ৫বিঘা জমিতে ভেড়িবাধ দিয়ে মৎস্য চাষ শুরু করেন। শুরুতে মৎস্য ঘেরে মাছ চাষে ভাল সফলতা আসলেও পরবর্তিতে মন্দা যেতে থাকে। এঅবস্থায় তিনি হতাশ হলেও হাল ছাড়েনী। তাই পরের বছর ২০১৬ সালে তিনি ঘেরের পাড়ে ভেড়ি বাধের উপর কয়েকটি সবজির চাষ শুরু করেন।

শুরুতে তিনি বুঝতেই পারেনি যে এত অল্প খরচে অধিক মুনাফা পাবেন। তাই পরের বছর অর্থাৎ চলতি বছর তিনি ঘেরের পাড়ে সমন্বিত পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ শুরু করেন। সবজি চাষ শুরু করার পর ফলন ভাল দেখে তার উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। সে অনুযায়ী তিনি উপজেলা কৃষি অফিস ও ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগীতায় বড় আকারে ঘেরের পাড়ে লাউ, শিম বেগুন ও মরিচের চাষ শুরু করেন। তার মধ্যে লাউ এর ফলন এতই সন্তোষ জনক হয়েছে, যা নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা অসম্ভব।

চলতি বছর তিনি ৫বিঘা ঘেরের পাড়ের উপর রোপনকৃত জমিতে শুধুমাত্র লাউয়ের চাষ করে প্রায় আড়াই ল টাকা আয় করেছেন। এখন চলতি শীত মৌসুমে ভেড়ির উপর যে পরিমান ঘি-কাঞ্চল সিম রোপন করেছেন তাতে কয়েক ল টাকার সিম বিক্রয় করতে পারবেন বলেও তিনি আশাবাদী। এছাড়াও তার ঘেরের ভেড়ির উপর মরিচ বেগুন ও টমেটোর চাষ করেছেন।


সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ৫বিঘার জমি যেন সূর্যের আলোই আলোকিত হয়েছে। উল্লেখিত সবজি চাষ ছাড়াও তার প্রকল্পে ১টি ডেইরী ফার্ম রয়েছে। এতে ১৮টি দেশি বিদেশী গরু রয়েছে। এরমধ্যে ১২টি বিদেশী এবং ৬টি দেশী জাতের। সমন্বিত পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ করে কৃষক ইনছান উদ্দিন এখন অনেক স্বাবলম্বী হয়েছেন।

শুধু তিনি একাই স্বাবলম্বী হননি, তার দেখাদেখি ধনপোতা গ্রামের আনন্দ পাল, আসলাম শেখ, অনিমেষ পাল, ৬০তলা গ্রামের সুমন দাশ ও বিঘা গ্রামের অনন্ত হালদার সহ অনেকেই ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ শুরু করেছেন।

এব্যাপারে বেতাগা ইউনিয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার প্রদিপ কুমার মন্ডল ও উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মোতাহার হোসেন এর সাথে আলাপ করা হলে তারা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বিভিন্ন স্থানে মৎস্য ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ হচ্ছে। কিন্তু ইনছান উদ্দিনের যে প্রকল্প তা একটু ভিন্ন। কারন সমন্বিত পদ্ধতিতে বিষমুক্ত পরিবেশে সবজি চাষ করা খুবই কঠিন ব্যাপার। তার উপর অন্যান্য ফসল যেমন ঘি-কাঞ্চন সিম বেগুন মরিচ টমেটো ও ডেইরী ফার্ম যা বিরল। সমন্বিত পদ্ধতিতে বিষমুক্ত পরিবেশে সবজি উৎপাদন ও বাজারজাত করনে সকল কৃষকদেরকে এগিয়ে আসার জন্য আহবানও জানান তিনি।

এব্যাপারে স্বশাসিত ইউনিয়ন পরিষদ এ্যাডভোকেসি গ্রুপ অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও বেতাগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জন করতে পারলেও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করনে তেমন একটা সফলতা আনতে পারেনি। সেই সফলতা আনায়ন করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের মৎস্য ও কৃষি সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের একটা অর্থনৈতিক সহযোগীতা দিচ্ছি। আমরা আশা করছি অর্গানিক বেতাগার মত সারা ইউনিয়নে অর্গানিক পল্লী গড়ে তুলতে পারবো। আর সেটি যদি করতে পারি তাহলে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করনে আমাদের সফলতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত