মোংলার বিনামূল্যের বই বিতরন ও নতুন শ্রেনীতে ভর্তিতে টাকা নেয়ার অভিযোগ

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ০৫:০৭ পিএম, রোববার, ৫ জানুয়ারী ২০২০ | ৫৮১

মোংলার বৈদ্দ্যমারী দক্ষিন হলদিবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিনামূল্যের বই বিতরন ও নতুন শ্রেনীতে ভর্তিতে টাকা নেয়ার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে ও নতুন বই বিতরনে দু’শ টাকা করে নিচ্ছেন শিক্ষকরা। আর এতে ছাত্র/ছাত্রীর অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে। সরজমিনে ঘুরে শিক্ষকদের অনিয়মের এ সকল তথ্য পাওয়া গেছে এলাকাবাসীর কাছ থেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন বছরের ১ জানুয়ারীতে উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন শ্রেনীতে ভর্তি ও বিনামূল্যের বই বিতরন শুরু হয়। অন্য সকল স্কুলের ন্যায় মোংলার বৈদ্যমারী দক্ষিন হলদিবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়ল একই নিয়মে ভর্তি ও বই বিতরনের কথা থাকলেও উল্টো পথে এগুচ্ছে স্কুলটির শিক্ষকরা। নতুন শ্রেনীতে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১শ’ করে ভর্তি ফি আদায় করা হচ্ছে। আর বই নেয়ার ক্ষেত্রেও নেয়া হচ্ছে আরও ১শ’ টাকা।

ওই স্কুলের ৪র্থ শ্রেনীতে ভর্তি ও বই নিতে আসা শিক্ষার্থী সিয়াম ফকির এর মা সেলিনা বেগম জানান, টাকা ছাড়া বই দেয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন শ্রেনীর অনেক শিক্ষার্থীরা নতুন বই নিতে এসে টাকা না দিতে পেরে মন খারাপ করে চলে যাচ্ছে। তৃতীয় শ্রেনীতে ভর্তি হওয়া রাসেল শেখ এর মা অপর এক অভিভাবক জানান, শিক্ষকরা বিভিন্ন পন্থায় অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে, ছেলের বাবা নাই, অভারে সংসার তাই টাকা দিতে না পাড়ায় বই আনতে পারছেনা।

সরকারের নিদের্শনা, পহেলা জানুয়ারী থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রথম দু’দিন শিক্ষার্থী শুন্য ছিল স্কুলটি। গত ২ জানুয়ারী সকাল সাড়ে ১১ টায় স্কুলের শ্রেণী কক্ষ ঘুরেও কোন শিক্ষার্থীর দেখা মেলেনি। স্কুলের দ্বিতীয় তলায় উঠতেই প্রথমে প্রধান শিক্ষিকার অফিস কক্ষে বই নিতে আসা কমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক সহকারী শিক্ষিকা কর্তৃক জনপ্রতি ১শ’টাকা গ্রহনের দৃশ্য প্রকাশ্য চোখে পড়ে। এ ছাড়া স্কুলটির ৫ জন শিক্ষক ও শিক্ষিকার মধ্যে ৪ জনেরই উপস্থিতি ছিল না।

দুপুর দেড়টার দিকে একে একে অফিস কক্ষে প্রবেশ করে সকল শিক্ষক ও শিক্ষিকা। দুপুর ২ টার দিকে কমলেশ সাহা নামের এক সহকারী শিক্ষক উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর করেন। এরই মধ্যে অফিস কক্ষে উপস্থিত হন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিহির মন্ডল। এ সময় তিনি শিক্ষকদের কাছে বিভিন্ন বিষয় খোঁজ খবর নেন। এ ছাড়া স্কুলটি সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এরই মধ্যে শিক্ষকদের অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন পাঞ্জেরী পাবলিকেশনের নোট বই ও গাইড এবং ওই পাবরিকেশনের ক্যালেন্ডার নিয়ে উৎপল নামের এক বিক্রয় প্রতিনিধি। তিনি বিভিন্ন শ্রেনীর সৌজন্য নোট ও গাইট বইয়ের একাধিক কপি শিক্ষকদের টেবিলে রাখেন।

একই সঙ্গে শিক্ষকদের নোট ও গাইট বই বিকিকিনিতে উদ্ধুদ্ধ করেন। এক পর্যায় সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে সটকে পড়েন ওই নোট ও গাইট বই বিক্রয় প্রতিনিধি। এ সময় বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় জানতে চাইলে-স্কুলের সহকারী শিক্ষক গোলাম মোস্তফা উপস্থিত সংবাদকর্মীদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। অনুরোধ জানান এ সকল বিষয় খবরের কাগজে কিছু না লেখার।

এ বিষয় দক্ষিন হলদিবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা চারুলতা মন্ডল জানান, তিনি নোট ও গাইড পুস্তক বিক্রতাকে আগে কখনও দেখেনি,চেনেও না। এ ছাড়াও নতুন শ্রেনীতে ভর্তি ও বই বিতরনে ২শ’ টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। তবে বই বিতরণের সময়ই বাৎসরিক পিকনিকের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১শ’ টাকা করে নেয়ার কথা স্বীকার করেন। আর নতুন শ্রেণীতে ভর্তি ফি নেয়া হয় না বলেও দাবী তার। তবে কবে নাগাদ বাৎসরিক পিকনিক আয়জোন করা হবে সেই সময়সীমা এখনও নির্ধারন করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান প্রধান শিক্ষিকা।

এ প্রসঙ্গে মোংলা উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ক্লাস্টার) গুরুদাস বিশ্বাস জানান, সরকারি বিধান অনুযায়ী বিনামুল্যের বই বিতরনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে অর্থকড়ি লেনদেনের নিয়ম নেই। এ ছাড়া নতুন শ্রেনীতে ভর্তির ক্ষেত্রেও কোন টাকা গ্রহন করা যাবে না। যদি কোন স্কুলের শিক্ষকরা টাকা পয়সা লেনদেন করে থাকে আর এ বিষয় অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও তিনি জানান এ কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত