পিঠা দেখেই জিবে জল এসে যায়

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা প্রতিনিধি

আপডেট : ০৪:২৭ পিএম, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২০ | ১৩৮৮

পিঠা, পায়েস দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন গ্রাম-বাংলার বহুকালের পুরনো রীতি হলেও এখন আর তেমনটা চোখে পড়েনা। একান্নবর্তী বাঙালি পরিবারের চিরায়ত এই ঐতিহ্য প্রায় বিলুপ্ত। আধুনিক যুগের এই ব্যস্ত সময়ে এসবে সময়ও দিতে চায়না মানুষ। আবার অতি আধুনিকতার আগ্রাসনে পিঠা কি? তাও চেনেনা বর্তমান প্রজন্মের অনেকে। চর্চা না থাকায় পুরনোরাও ভুলতে বসেছে বাঙালি পিঠার সাদ-নাম-গন্ধ।

তাই বাঙালির সেই পিঠাপুলির ঐতিহ্য ধরে রাখতে ব্যাতিক্রমি এক পিঠা উৎসবের আয়োজন করে বাগেরহাটের শরণখোলা সরকারি কলেজ। মঙ্গলবার কলেজ ক্যাম্পাসে ১৪টি স্টলে শোভিত হয় হরেক রকম পিঠা, পায়েস। সকাল থেকে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে তৈরী হয় বাঙালি আবহ। ম ম গন্ধে ফুটে ওঠে বাঙালিয়ানা।

দুরদুরান্ত থেকে আসা মানুষের ঢল নামে এই পিঠা উৎসবে। জমজমাট বিক্রিও হয় স্টলগুলোতে। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে পরিচালিত এই পিঠা আয়োজনে শত শত দর্শনার্থী ও ক্রেতার ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হয় আয়োজকদের।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ফিতা কেটে পিঠা উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন। এসময় অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ, পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল এম মনিরুজ্জামান, শরণখোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ইসমাইল হোসেন লিটন প্রমূখ।

পিঠা উৎসবে মায়ের সঙ্গে আসে শরণখোলা আইডিয়াল ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সুলতান (৮)। পিঠা কিনেছো? জিজ্ঞেস করতেই মুচকি হেসে বলে পিঠা কিনবো কি, দেখেই জিবে জল এসে গেছে। তার মা মরিয়ম বেগম অনুভুতি প্রকাশ করে বলেন, কাজের ব্যবস্তায় ঘরে পিঠা বানানো হয়না। তাই উৎসবের কথা শুনে ছেলেকে নিয়ে চলে এলাম। এখনকার ছেলেমেয়েরা অনেক পিঠার নাম জানেনা। এধরণের আয়োজন হলে বর্তমান প্রজন্ম বাঙালির ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে।

উৎসবের প্রথম স্থানে থাকা স্টল ‘বাঙালি পিঠা ঘর’ পরিচালক ও কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক সারমিন সুলতানা বলেন, আমরা শুধু ব্যবসা বা উৎসব পালনের জন্য এই আয়োজন করিনি। বিলুপ্তপ্রায় বাঙালি ঐতিহ্যকে ফেরাতে এবং বর্তমান প্রজন্মের কাছে গ্রাম-বাংলার পিঠাপুলির পরিচিতি ঘটাতেই এই আয়োজন করেছি।

দ্বিতীয় স্থানে থাকা হৈমন্তী পিঠা ঘরের পরিচালক ও রাস্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক জেবুন্নেছাও একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।

তারা জানান, শাহী পাটিসাপটা, পুলি, দুধ চিতই, পায়েস, লবঙ্গ লতিকা, জামাই রাজা, গোলাপ পিঠা, চালতা ফুল, হৃদয় হরণসহ গ্রামীন ও শহুরে মিলে ২৫ থেতে ৩০ পদের পিঠাপুলি দিয়ে স্টলগুলো সাজানো হয়। এছাড়া শাহী পান ও বিভিন্ন ধরণের চাটনিও রয়েছে। পিঠার এতো চাহিদা হবে তা আগে বুঝতে পারেনি তারা। দুপুরের মধ্যেই স্টলগুলো খালি হয়ে গেছে।


পিঠা উৎসব থেকে গোলাম মোস্তফা মধু দুই হাজার, বাবুল দাস দেড় হাজার এবং আক্তারুজ্জামান তালুকদার এক হাজার টাকার পিঠা কিনেছেন। এই উৎসবে তারা সর্বাধিক পিঠাক্রেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তারা তিনজনই ওই কলেজের শিক্ষক।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. নূরুল আলম ফকির বলেন, মূলত বাঙালির ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই এই পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। সারা রাত জেগে নানান পদের পিঠার সমারোহ তৈরী করেছেন শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা। প্রথমবার এই আয়োজনে এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসেছে। পিঠা কেনার পাশাপাশি অনেক আনন্দ উপভোগ করেছে সবাই। কলেজের পক্ষ হতে প্রতিবছর এই পিঠা উৎসব করা হবে।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, বাঙালি কালচার ধরে রাখতে পিঠা উৎসব একটি ভালো উদ্যোগ। পাশাপাশি গ্রাম-বাংলার আরো যেসব পার্বন আছে সবই আমাদের পালন করা উচিৎ। এ আয়োজনের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত