নোট ও গাইড বন্ধে কঠোর অবস্থান

নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পুস্তক ব্যবসায়ীরা মরিয়া

চিতলমারী প্রতিনিধি

আপডেট : ০৬:১৯ পিএম, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০ | ৪৬৬

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নোট ও গাইড বইসহ অতিরিক্ত বই ব্যবহার বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর মনিটরিং জোরদারসহ সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাস্তবে এ সব উপেক্ষা করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নোট এবং গাইড নির্ভর হয়ে পড়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর ২১ জানুয়ারি নোট এবং গাইড বইসহ কারিকুলামের বাইরের অতিরিক্ত বই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না পড়ানোর জন্য নির্দেশনা জারি করেছেন। কিন্তু সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাগেরহাটের চিতলমারীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন প্রকাশনীর প্রতিনিধিরা। তারা নোট-গাইডের নাম দিয়েছেন এখন সহায়ক বই। তাই ব্যবসাকে চাঙ্গা করতে মরিয়া স্থানীয় পুস্তক ব্যবসায়ীরা।

তারা শিক্ষার্থীদের পূঁজি করে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও শ্রেণী শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন নগদ টাকাসহ নানা উপঢৌকন। তাদের কর্মকান্ডে বিপাকে পড়ছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১১ টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩১ টি, নিম্ন মাধ্যমিক ১ টি, কলেজ ৪ টি ও মাদ্রাসা ৭ টি। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত রয়েছে। আর এদের ঘিরে এ উপজেলায় ১৫-২০ টি নোট ও গাইড বই বিক্রির দোকান রয়েছে। বছরের শুরুতে এই ব্যবসায়ী ও প্রকাশনীর প্রতিনিধিরা মরিয়া হয়ে ওঠেন কে কোন প্রকাশনীর নোট-গাইড বিক্রি করবেন এবং কে কোন স্কুল দখল করবেন।

এ নিয়ে রীতিমত শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতার মাশুল গুনতে হয় শিক্ষার্থী অভিভাবকদের। শিক্ষকদের নির্ধরিত নোট ও গাইড কিনতে তাদের গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় লেকচার পাবলিকেশন, পাঞ্জেরী, অনুপম, অগ্রযাত্রা ও প্রগতি প্রকাশনীর নোট ও গাইড বই চলে। এরমধ্যে চিতলমারী সরকারি এস এম মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেকচার, বড়বাড়িয়া, সন্তোষপুর, ত্রিপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঞ্জেরী ও বাকি স্কুল গুলোতে প্রগতি, অগ্রযাত্রা ও অনুপম প্রকাশনীর বই নিধারন করেছেন সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সকল স্কুলের প্রধান শিক্ষকগন।

সরেজমিনে জানা গেছে চিতলমারী সরকারি এস এম মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের গেটের পাশেই ভাই ভাই লাইব্রেরী। এখানে প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত নোট ও গাইড বইয়ে ঠাসা। নাম না প্রকাশ করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের মালিক তাপস বাড়ৈ ও লেকচার পাবলিকেশনের বশির আহম্মেদ মোটা অংকের টাকায় প্রধান শিক্ষককে রাজি করান তার স্কুলে ওই পাবলিকেশনের গাইড ও নোট বই পড়ানোর জন্য।

কিন্তু কোম্পানী থেকে ওই টাকা আনলেও প্রধান শিক্ষককে দেওয়া হয় ২ লাখ টাকা। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক, বশির, তাপস ও শ্রেনী শিক্ষকদের মধ্যে চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে বলে ওই সূত্রটি জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে লেকচার পাবলিকেশনের স্থানীয় প্রতিনিধি বশির আহম্মেদ বাগেরহাট২৪কে বলেন, এ ধরনের কোন লেনদেন হয়নি। প্রতিপক্ষ একটি মহল তার পাবলিকেশনের নামে বদনাম ছড়ানোর জন্য এ ধরণের কথা বলছে।

চিতলমারী ভাই ভাই লাইব্রেরীর মালিক তাপস বাড়ৈ অভিযোগ অস্বীকার করে বাগেরহাট২৪কে বলেন, কেউ কি তাকে টাকা নিতে বা দিতে দেখেছে ?

চিতলমারী সরকারি এস এম মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমেন্দ্র নাথ মল্লিক বাগেরহাট২৪কে বলেন, বিগত বছর গুলোতে স্কুলের কয়েকজন শ্রেণী শিক্ষক বিভিন্ন প্রকাশনীর লোকের কাছ থেকে টাকা নিত। এ বছর এটা নিষেধ করায় ওই শিক্ষকেরা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

চিতলমারী হসিনা বেগম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শৈলেন্দ্র নাথ বাড়ৈ বাগেরহাট২৪কে বলেন, তার স্কুলে কোন গাইড বা নোট নির্ধারণ করা হয়নি।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চিতলমারী শাখার সভাপতি অবনী মোহন বসু বাগেরহাট২৪কে বলেন, সমিতি কখনো এগুলো নির্ধারন করে না। এগুলো স্ব-স্ব স্কুলের প্রধান শিক্ষক, শ্রেণী শিক্ষক, পুস্তক ব্যবসায়ী ও প্রকাশনীর প্রতিনিধিরাই নির্ধারণ করে থাকেন।

চিতলমারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মফিজুর রহমান বাগেরহাট২৪কে বলেন, নোট ও গাইড বই নিষিদ্ধ থাকলেও তাদের কাছে কোন অভিযোগ নেই। তাই তারা কোন ব্যবস্থা নিতে পারেন না।

এ ব্যাপারে চিতলমারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম বাগেরহাট২৪কে বলেন, সরকার নোট ও গাইড বইসহ অতিরিক্ত বই ব্যবহার বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যদি এরকম হয়ে থাকে তাহলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মারুফুল আলম মুঠোফোনে বাগেরহাট২৪কে বলেন, এ বিষয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত