অন্যের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেতে মরিয়া প্রতারক চক্র!

স্টাফ রির্পোটার

আপডেট : ০৫:১২ পিএম, রোববার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ | ৬৬২

বাগেরহাটে প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সেজে ভাতা ভোগ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন হাওয়া বিবি ও তার পরিবার। নিজের স্বামীর নাম ও গেজেটভুক্ত একজন মুক্তিযোদ্ধার এক হওয়ায় এই সুযোগ নিয়েছে ওই পরিবারটি।

জেলার মোল্লাহাট উপজেলার নগরকান্দি গ্রামের মৃত মোমিন উদ্দিন মোল্লার ছেলে মমতাজ উদ্দিন মোল্লা ওরফে মোন্তাছের মোল্লা ওরফে মোন্তাছের সর্দারের স্ত্রী হাওয়া বেগম। ৫ পুত্র ও চার কন্যার জনক তিনি।১৯৮৭ সালে তার স্বামী মমতাজ উদ্দিন মোল্লা মারা যায়। একই গ্রামে মোন্তাছের শেখ নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। যিনি ১৯৯৬ সালে মারা যান।

২০১৪ সালে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ওয়ারিশদের ভাতা প্রদান শুরু করেন। তখন নিজের স্বামীর নামেও মোন্তাছের থাকায় তিনি মুক্তিযোদ্ধা মোন্তাছের শেখের স্ত্রী দাবি করেন। বিভিন্ন কলা কৌশলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা মোন্তাছেরের স্ত্রী হিসেবে প্রমানিত হন। হাওয়া বিবি ও তার সন্তানরা মুক্তিযোদ্ধা মোন্তাছের শেখের ভাতা ভোগ করতে থাকেন।

জানা যায়, প্রতারণার মাধ্যমে হাওয়া বিবি ও তার পরিবার ভাতা পাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা মোন্তাছেরের বৈধ উত্তরাধীকারিগণ তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হন। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্দা মোন্তাছের শেখের ছেলে মবজেল শেখ ও তার তিন ভাই, এক বোন তাদের ন্যায্য পাওনা পেতে এবং হাওয়া বিবির ভাতা বন্ধ করতে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর বরাবরে আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী বিষয়টি যাচাইবাচাই করে মোল্লাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে রিপোর্ট দিতে বলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেন।

সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোঃ নজরুল ইসলাম প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা মোন্তাছের শেখের বৈধ উত্তরাধিকারিদের ভাতা প্রদান ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ যাবত গৃহিত সমুদয় সুযোগ সুবিধথা ফেরত আনায়নসহ হাওয়া বেগমের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের পূর্বক মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে নির্দেশ দেন।এই চিঠির প্রেক্ষিতে তৎকালীন মোল্লাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শামীম হাসান হাওয়া বিবির ভাতা বন্ধ করে দেন। মোন্তাছেরের বৈধ উত্তরাধীকারি মবজেল শেখসহ তার ভাইবোনদের অনুকূলে ভাতা চালু করে দেন।

কিন্তু তারপরেও হাওয়া বিবি ও তার সন্তানরা বিভিন্ন ভাবে মুক্তিযোদ্ধা মোন্তাছের শেখের ভাতা ভোগ করার চেষ্টা করছে। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা মোন্তাছের শেখের বৈধ উত্তরাধিকারিদের ভয়ভিতিসহ বিভিন্ন সমস্যায় ফেলার চেষ্টা করছে।
মুক্তিযোদ্ধা মোন্তাছেরের ছেলে মবজেল শেখ বাগেরহাট২৪কে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লাল মুক্তিবার্তা মুক্তিযোদ্ধার তথ্য অনুযায়ী আমার পিতা মোন্তাছের শেখের পিতার নাম মৃত রাহেন উদ্দিন শেখ, গ্রাম নগর কান্দি, উপজেলা মোল্লাহাট, জেলা বাগেরহাট। মুক্তিযোদ্ধার ক্রমিক নং ৪০৩০৩০৮৪৮। গাংনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিকদার উজির আলী প্রদত্ত উত্তরাধিকার প্রমান পত্রের সনদ (ওয়ারেশ কায়েম সার্টিফিকেট) অনুযায়ীও তার নাম ও ঠিকানা সঠিক রয়েছে।

এদিকে হাওয়া বিবির জাতীয় পরিচয় পত্রে তার স্বামীর নাম দেখা যায় মোন্তাছের সরদার। ইউনিয়ন পরিষদের উত্তরাধিকার প্রমান পত্রের সনদে মৃত মমতাজ উদ্দিন মোল্লা ওরফে মোন্তাছের মোল্লা ওরফে মোন্তাছের সর্দার। তার বড় ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মোল্লা শহিদুল ইসলামের জাতীয় পরিচয়পত্রে তার পিতার নাম মোল্লা মমতাজ উদ্দিন। জমিজমার কাগজপত্রেও হাওয়াবিবির স্বামীর নাম মমতাজ উদ্দিন মোল্লা। এরপরেও তারা কিভাবে আমার পিতার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দাবি করেন তা আমার বোধগম্য নয়। আমি আমার পিতার ন্যায্য পাওনা পাওয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

হাওয়া বিবির বড় ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মোল্লা সহিদুল ইসলাম বাগেরহাট২৪কে বলেন আমার পিতার নাম মোন্তাছের শেখ। আমার পিতাই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ওরা মিথ্যে দাবি করছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ ফিরোজ শেখ বাগেরহাট২৪কে বলেন, মোন্তাছের শেখের উত্তরাধিকারি হচ্ছেন মবজেল শেখসহ ৫জন। আর হাওয়া বিবির স্বামীর নাম মমতাজ উদ্দিন মোল্লা ওরফে মোন্তাছের মোল্লা। কে আসল মুক্তিযোদ্ধা এ বিষয়ে আমার জানা নেই।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত