চিতলমারীতে রোজার শুরুতেই বাজার চড়া

এস.এস.সাগর

আপডেট : ০৬:৫৬ পিএম, রোববার, ২৬ এপ্রিল ২০২০ | ৭৬০

বাগেরহাটের চিতলমারীতে রোজার শুরুতেই বাজার চড়া হয়ে উঠেছে। এমন কোন পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। কিন্তু বাড়েনি সাধারণ মানুষের আয়। বরঞ্চ করোনার কারণে খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। তবুও পবিত্র রমজান মাসকে ঘিরে কয়েক দিন ধরে বাজারে কেনাকাটা বেড়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যে’র দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা তুলছেন। এতে পণ্য কিনতে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। তাই বাড়ছে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ।


রোববার চিতলমারী উপজেলা সদর বাজার ঘুরে জানা গেছে, অস্বাভাবিক বেড়েছে গরিবের আমিষ খ্যাত মসুর ডালের দাম। প্রতি কেজি মোটা মসুর ডাল কিছুদিন আগে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। গত কয়েক দিনে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে এখন ১০০ টাকা হয়েছে। ছোট দানা মসুর ডাল ১৩০ টাকা।

চিতলমারী বাজারের খুচরা বিক্রেতা বিমান গুহ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, হঠাৎ করে পাইকারি বাজারে বেড়েছে মসুর ডালের দাম। পাইকারিতেই মোটা মসুর ডাল ৯৫ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। রমজানে পেঁয়াজু তৈরিতে মোটা মসুর ডালের ব্যবহার বেড়ে যায়। এই সুযোগ নিয়ে কম আয়ের মানুষের এ ডালের দাম বাড়িয়েছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা। গত মাসেও এই ডাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে খুচরায় বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি। শুধু মসুর ডাল নয়, খেসারি ডালের দামও বেড়েছে। ছোলা ৮০ থেকে ৯০, মুগডাল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেল কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা।


করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে বেড়েই চলছে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম। ডাল ছাড়াও হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দামও অনেক বেড়েছে। রোজার কেনাকাটা বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে চিনির দামও। এখন চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ৬০ টাকা ছিল। আর পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০, দেশি রসুন ১১০ থেকে ১৩০ ও আমদানি রসুন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। অস্বাভাবিক দাম বেড়ে আদা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে বাজারের ব্যবসায়ী বিকাশ বালা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, মোকামে দাম বেড়েছে এটা যেমন ঠিক। তেমনি বিক্রি বেশি হলে খুচরা ব্যবসায়ীরাও একটু বেশি দামে বিক্রি করে থাকেন। তাছাড়া মিল ও আমদানি পর্যায়ে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাইকারিতেও দাম কিছুটা বেড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এ ছাড়া চিড়া, মুড়ি ও গুড়ের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। এখন প্রতি কেজি চিড়া ৬০, মুড়ি ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং গুড়ের কেজি ১২০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে খেজুর ২৫০ থেকে প্রকার ভেদে ৫০০ টাকা হয়েছে। ফলের মধ্যে মাল্টার দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকা হয়েছে। চাহিদা বেশি থাকায় লেবুর হালি গড়ে ৪০-৫০ টাকা হয়েছে। শসা প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বেগুন, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, করলা, কাঁচামরিচসহ বেশিরভাগ সবজির কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় উঠেছে। ব্রয়লার মুরগি দাম বেড়ে ১৩০ ও লেয়ার মুরগি ১৯০, সোনালি ২২০ টাকা হয়েছে। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৫০-৪০০ টাকা। গরুর মাংস ৫৫০-৬০০ ও খাসির মাংস ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

সমান তালে বেড়েছে চাল ও আটার দামও। এখানে স্বর্না বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪০-৪৫ টাকা, মিনিকেট ৫৫ টাকা, মোটা চাল ৪১ টাকা ও বাসমতি ৬০ টাকা। আটা ২৮ থেকে ৩৫ দরে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।

চিতলমারী বাজারের চাল ব্যবসায়ী পরিতোষ সাহা, নাজমুল শেখ তুহিন মোল্লা সন্তোষ মহন্ত ও স্বাগতম সাহা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, মিলে ও আড়তে আগের তুলনায় দাম অনেক বেশী।

এ ব্যাপারে চিতলমারী পাটরপাড়া গ্রামের খ্যান চালক শাহিনুর শেখ, শহর আলী, আজিজুল বিশ্বাস, আড়–য়াবর্নির সোনা শেখ ও শিবপুরের পাঁচু শেখসহ অনেকে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, স্বাভাবিক সময়েই বাজার খরচ জোগাতে তারা হিমশিম খেতেন। করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে আয় আরও কমেছে। এ অবস্থায় রমজানের আগেই প্রতিটি পণ্যের দামই বেড়েছে। ফলে তাদের এখন নাভিশ্বাস অবস্থা।

তারা বলেন, এক মাস ধরে তাদের বেশিরভাগ দিন কাটে অনেকটা অনাহারে অর্ধাহারে। দিনে এখন যা আয় হয়, তা দিয়ে মোটা চাল, তেল, হলুদ মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। একটি কিনলে অন্য পণ্য থাকছে বাকি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত