ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ৩০০একর জমির ফসল, ৪৫০ঘেরের মাছ ভেসে গেছে

শরণখোলায় বেড়িবাঁধ বিলিন, পানিবন্দী ২হাজার পরিবার, ১হাজার কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৮:০৪ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২১ মে ২০২০ | ৭৫৮

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে বাগেরহাটের শরণখোলার সাউথখালীতে দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলিন হয়ে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ উপজেলার চারটি ইউনিয়নে সহস্রাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত এবং অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ৩০০একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত ও ৪৫০ ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। সাউথখালী, রায়েন্দা ও রাজৈর এলাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় দুই হাজার পরিবার। বগী-গাবতলা এলাকার বহু মানুষ এখনো আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গত মানুষের মাঝে প্রাথমিকভাবে ত্রাণ ও ঢেউটিন বিতরণ করেছেন। এসময় শরণখোলা ইউএনও সরদার মোস্তফা শাহিন, মোরেলগঞ্জ সার্কেলের এএসপি রিয়াজুল ইসলাম, শরণখোলা থানার ওসি এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন মুক্তা, সাউথখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো.মোজাম্মেল হোসেন, রায়েন্দা ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন ও পিআইও রনজিৎ সরকার উপস্থিত ছিলেন। এসময় জেলা প্রশাসক সাউথখালীর প্লাবিত হওয়া চারটি গ্রাম বগী, গাবতলা, চালিতাবুনিয়া, দক্ষিণ খুড়িয়াখালীর দুর্গত মানুষের জন্য ২০মেট্রিকটনসহ এ উপজেলায় মোট ৩০মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়ার কথা ঘোষনা দেন।

এদিকে, সরেজমিন সাউথখালী বাঁধভাঙা বগী ও গাবতলা এলাকা গিয়ে দেখা যায়, দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধের প্রায় ৯০ভাগ ভেঙে নদীর সঙ্গে মিশে গেছে। তখনও ভাঙা বাঁধদিয়ে বলেশ্বরের পানি ঢুকছে। চরম দুর্ভোগে রয়েছে পানিবন্দী মানুষ। তাদের বসতঘরের মধ্যে হাঁটু পানি। আশপাশ এলাকায় পানি থৈ থৈ করছে। অনেকের ঘরের টিন উড়ে গেছে। গাছ পড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে বহু ঘর।

এসময় বগী গ্রামের মজিদ তালুকদারের স্ত্রী আকলিমা বেগম (৪৫) বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ঝড়ের দুই দিন আগে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ায় তারা বেঁচে গেছেন। ঘরের যা অবস্থা তাতে বসবাস করার কোনো উপায় নেই। আরো একসপ্তাহ তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে থাকতে হবে।

গাবতলা গ্রামের মো. সোবাহান হাওলাদার, ফুলমিয়া হাওলাদার, কালাম হাওলাদার, বগী গ্রামের আ. সোবাহান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বলেশ্বরের নোনা পানি ঢুকে তাদের পুকুর, ঘের ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। তাদের একেক জনের ৫০-৬০ হাজার টাকার মাছ ভেসে গেছে। তাদের তিন গ্রামের প্রায় ১০০০ পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। চার-পাঁচ দিনের আগে কেউ ঘরে ফিরতে পারবে না বলে তারা জানান।

খুঁড়িয়াখালী গ্রামের জালাল মোল্লা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, তার ঘেরের প্রায় তিন লাখ টাকা মাছ ভেসে গেছে। এভাবে তাদের এলাকার কমপক্ষে ১০-১২টি ঘেরে জোয়ারের নোনা পানি ঢুকে মৎস্য চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শরণখোলায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তান্ডব

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধসহ চার ইউনিয়নে প্রায় এক হাজার কাঁচা ঘর, ৪৫০টি মাছের ঘের, ৩০০একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রাথমিক হিসাব পাওয়া গেছে। অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের জরিপ চলছে।


ইউএনও জানান, জেলা প্রশাসন থেকে সাউথখালীর বগী, গাবতলা, চালিতাবুনিয়া ও দক্ষিণ খুড়িয়াখালী গ্রামের বাঁধভাঙা দুর্গত মানুষের জন্য আলাদাভাবে ২০মেট্রিকটনসহ উপজেলায় মোট ৩০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত