অর্ধশতাধিক মৎস্য ঘের ভেসে কোটি টাকার ক্ষতি

রামপালে আম্পানের তান্ডবে সপ্তাহ ধরে ২ শ পরিবার পানি বন্দি

রামপাল প্রতিনিধি

আপডেট : ০৮:২১ পিএম, মঙ্গলবার, ২৬ মে ২০২০ | ১০৪৯

পানি আসে, তুফান আসে, আসে প্রলয়ংকরী ঝড়-জলোচ্ছাস। উপকূলের মানুষ মরে। ফসলহানী ঘটে। তীব্র লবনাক্ত পানিতে জনপদের পর জনপদ সয়লাব হয়ে যায়। ভাঙ্গে বেঁড়ী বাঁধ-ভাঙ্গে উপকূল। এভাবেই প্রতিবছরই উপকূলের কোন না কোন জনপদের মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

সরকার আসে-সরকার যায়। গাল ভরা আশ্বাস মেলে কিন্তু উপকূলের মানুষ ভেসেই যায়-মরে, এমনটাই আক্ষেপের সাথে জানান ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার সাধারন মানুষ। ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, বুলবুল ও আম্পানের আঘাতে বিপর্যস্ত উপকূলের জনপদের একটি নাম রামপাল। আইলার পর তীব্র লবনাক্ততার করাল গ্রাসে বাগেরহাটের এই এলাকার শত শত হেক্টর জমিতে এখন আর আমন ফসল ফলেনা। চিংড়ি চাষ ও অথৈবচ ! আম্পানের আঘাতে এ উপজেলার শত শত চিংড়ি ঘের ভেসে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এক সপ্তাহ পূর্বে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়নের রোমজাইপুর গ্রামের পূর্বপাশ দিয়ে গ্রাম রক্ষা বাঁধ ও সরকারি রাস্তা ভেঙ্গে অর্ধশত চিৎড়ি ঘের ভেসে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া দুইশত বাড়ি জোয়ার আসলে তলিয়ে যাচ্ছে এবং ভাটা আসলে জেগে উঠছে। জলোচ্ছাসের তান্ডবে গবাদি পশু হাঁস, মুরগী মারা গেছে ও ভেসে গেছে। কয়েকটি মুরগীর খামার ভেসে গেছে। শাকসব্জির ক্ষেত তীব্র লবনাক্ত পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ওই এলাকার শিশুদের সর্দি কাশি ও পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে তীব্র সুপেয় পানির সংকট।

ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে পরিবারের সদস্যরা নির্ঘুম রাত পার করছে। প্রতি পরিবারের পায়খানাগুলো ভেসে যাওয়ায় রোগের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেখা দিয়েছে পশু খাদ্যের সংকট। ব্যাংক, এনজিও থেকে ঋণ করে মৎস্য চাষ করেছেন চাষীরা। চিংড়ি আহরণের ভরা মৌসুমে মাছ ভেসে যাওয়ায় সর্বশান্ত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষীরা।

গত এক সপ্তারের মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা গতানুগতিকভাবে পরিদর্শন করে আসলেও (২৬/৫/২০২০) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরূপন করা হয়নি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকাল জনপ্রতিনিধিদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা দিতে বলা হলেও সেটিও এখনও পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের দপ্তরে পৌছেছে কিনা তাও জানা যায়নি।

মৎস্য চাষী ও ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ির মালিক তুহিন মোল্যা, ওহাব আলী শেখ, গৃহবধু খায়রুন নেছাসহ অনেকেই বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এক সপ্তাহ ধরে পানি বন্দি অবস্থায় আছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রান সহায়তা তো দুরের কথা কেউ খবরও নেয়নি, দেখতে ও আসেনি। এভাবে প্রতিদিন পানি ওঠানামা করতে থাকলে দুইশত পরিবার এখান থেকে অন্যাত্র চলে যেতে হবে। দূর্গতরা দ্রুত ত্রান সহায়তাসহ গ্রাম রক্ষা বাঁধ মেরামতের দাবী জানান।

রামপাল উপজেলা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাংগাঠনিক সম্পাদক এম.এ. সবুর রানা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে দুইশ পরিবার পানি বন্দি হয়ে আছে। অর্ধশত মৎস্য খামার ভেসে গেছে কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি যা খুবই দুঃখজনক। তিনি দূর্গতদের খাদ্য সহায়তাসহ জরুরীভাবে গ্রাম রক্ষা বাঁধ মেরামতের দাবি জানান।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শেখ আসাদুল্লাহ মুঠোফোনে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তাকে দূর্গত এলাকায় পাঠানো হয়েছিল। তিনি নিরূপন করে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করছেন। তবে কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে সেটা তিনি বলতে পারেননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কুমার পাল এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্ব স্ব এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষয়ক্ষতি ও দূর্গতদের তথ্য চাওয়া হলেও কেন সেটি এখনও তারা দেয়নি সেটা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি আরও বলেন, বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করে দূর্গতদের সহযোগীতাসহ গ্রাম রক্ষা বাঁধ যাতে দ্রুত মেরামত করা সম্ভব হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবকিছু করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত