পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন

বাংলাদেশের সকল নদীভাঙন রক্ষায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৪:৩৫ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২৮ মে ২০২০ | ৪৩২

জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে দেশ অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বি হতে শুরু করেছে। যার জন্য আমরা এখন ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত এবং নতুন নতুন বাঁধ তৈরী করার সাহস করি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে, যেখানেই নদী ভাঙন আছে সেই এলাকাগুলো দ্রুত মেরামত এবং নদীভাঙনরোধ করতে হবে। পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক বুধবার (২৭মে) রাতে বাগেরহাটের শরণখোলার পাউবোর ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধের ভাঙনকবলিত সাউথখালী এলাকা পরিদর্শনকালে দুর্গত মানুষের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।

সাউথখালীবাসীর উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কষ্টটা আমি হাঁড়ে হাঁড়ে উপলব্ধি করি। কারণ আমার বাড়িও বরিশালের নদীভাঙন এলাকা বামনাতে। আমাদের বাপ-দাদাদের সমস্ত জমি নদীগর্ভে বিলীণ হয়ে গেছে। শুধু মাত্র আমার দাদার কবরের জমিটুকু অবশিষ্ট আছে। তাই যাদের জমি যায় তাদের মনে যে কি কষ্ট সেটা আমি অনুধাবন করতে পারি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনাদের হতাশ হবার কোনো কারণ নেই, এখানে নদী শাসন ব্যবস্থা এবং জমি অধিগ্রহন সম্পন্ন হলে স্থায়ী টেকসই বাঁধ নির্মান হবে। আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা যে জমি অধিগ্রহন করবো তার বাজার দরের চেয়ে তিন গুণ বেশি দাম দিচ্ছে সরকার। শেখ হাসিনা আপনাদের কষ্ট বুঝে বলেই তাকে মানবতার মা বলা হয়। আপাতত ঝুঁকিপূর্ণ দুই কিলোমিটার এলাকায় সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে দ্রুত রিংবেড়িবাঁধ নির্মান করে আপনাদের বসবাসের উপযোগী করা হবে।

তিনি বলেন, আগে আমরা নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত ছিলাম। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আজকে মধ্যম আয়ের দেশে এসে পৌঁছেছি। ২০৪০সালের মধ্যে আমরা উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে পৌঁঁছাবো। আগের মতো সেই অর্থনৈতিক কষ্ট আমাদের নাই। আমাদের মনে সাহস আছে আমরা কাজ করতে পারবো। ইতিমধ্যে আমরা ৬২কিলোমিটার বাঁধ নির্মানের জন্য ৯০০কোটি টাকা করে দুুইটা এবং ১২০০কোটি টাকার একটাসহ মোট তিনটা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই এলাকাসহ বাংলাদেশে যতোগুলো নদীভাঙন আছে সেগুলোকে আমরা রক্ষা করতে পারবো। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে এই এলাকার দুঃখ আর থাকবে না। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।

প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, আমাদের একটা জিনি মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। যেদিকেই তাকাবেন সেদিকেই নদী ভাঙন। একদিকে নদী ভাঙছে, আরেকদিকে চর পড়তেছে। বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙন হয় এমনকি শুষ্ক মৌসুমেও ভাঙছে। বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া এবং জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। আজকে সেই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশেও সেই ক্ষতির শিকার হচ্ছে। আপনারা শুনেছেন বাংলাদেশে এপর্যন্ত নাম করা ৩২টি ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ ঘূর্ণিঝড় শুধু বঙ্গোপসাগরেই সৃষ্টি হয়েছে। তাই বলছি, আমরা এমন জায়গায় বসবাস করি, এই বন্যা, ঘূণিঝড়, জলোচ্ছাস এটা মেনে নিয়েই আমাদেরকে বসবাস করতে হবে। আপনাদের পূর্ব পুরুষরাও এটা দেখেছে।

আপনারা খুব সাহসী মানুষ। আপনারা সারাজীবন ঝড়-জলোচ্ছাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে আসছেন। আপনারা পারবেন এটাকে জয় করতে। এজন্য আপনাদের যে সহযোগীতা দরকার, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে এক সাথে কাজ করবো। অদুর ভবিষ্যতে এই এলাকায় নদী ভাঙন হবে না সেটা আমরা নিশ্চিত করবো।

প্রতিমন্ত্রী এলাকাবাসীকে অনুরোধ জানিয়ে আরো বলেন, নদীর পাড়ে যেসমস্ত গাছপালা আছে সেগুলো দয়া করে কাটবেন না। পারলে এখানে আরো গাছ লাগান। নদীর পারে যতোবেশি গাছ লাগাবেন এই এলাকার ক্ষতি ততো কম হবে। আমাদের সরকারের পরিকল্পনা আছে বাংলাদেশের সব জায়গায় নদীর পাড়ে ম্যানগ্রোভ বন তৈরী করবো।

তিনি বলেন, আপনারা একটা জিনিস মনে রাখবেন, আমরা হলাম ভাটির দেশের লোক। উজান হলো প্রতিবেশীর দেশ ভারত,নেপাল ভুটান। হিমালয় থেকে যখন বর্ষার পানি নেমে আসে তার সঙ্গে পলি মাটি নেমে এসে আমাদের নদ-নদী ভরাট হয়। প্রতিবছর বর্ষাকালে দ্ইু মিলিয়ন মেট্রিকটন বালু বাংলাদেশের নদী থেকে প্রবাহিত হয়। ড্রেজিং করার পরও আমাদের নদীর তলদেশটা উচু হয়ে আসে। তাই বর্ষার পানি নদী ধরে রাখতে পারেনা। যার ফলে দুই পারে উপছে পড়ে প্লাবিত হয়, ভাঙনের সৃষ্টি হয়। তারপরও আমরা প্রকল্প নিয়েছি। আমাদের বেশ কিছু ড্রেজার কেনা হয়েছে, আরো কিনবো। নদীর ডুবো চর ড্রেজিং করা হবে। যাতে নদীর পানির গতিবিধি সোজা থাকে। যাতে নদীর পাড় না ভাঙে। সেসব প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি।

আপনারা সরকারের প্রতি আস্থা রাখুন। আমরা সকলে মিলে ভালো থাকবো এটাই জননেত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা, এটাই হলো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। জাতির পিতার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যা যা করা প্রয়োজন আমরা সেটা করবো।


প্রতিমন্ত্রীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শনকালে বাগেরহাট-৪ (শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ) আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. মাহামুদুল ইসলাম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক হাবিবুল রহমান, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, সিইআইপির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম, পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদুজ্জামান, শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শহিন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন মুক্তা, আওয়ামীলীগ নেতা এম এ রশিদ আকন, এম সাইফুল ইসলাম কোকন, আব্দুল হক হায়দার, সাউথখালী ইউপির চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন, রায়েন্দা ইউপির চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন, শ্রমিকলীগের সভাপতি মেজবা উদ্দিন খোকনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রতিমন্ত্রী আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত পার্শবর্তী মোরেলগঞ্জ ও মঠবাড়িয়া উপজেলার নির্মানাধীন বেড়িবাঁধ ও ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত