বাংলাদেশ-ভারত-থাইল্যান্ডে একই সময় অবরোধ দেওয়ার দাবি বিশেষজ্ঞ ও মৎস্যজীবিদের

অবরোধের পর প্রথম ট্রিপে ইলিশ পড়েনি,লোকসানে জেলে-মহাজন

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৬:০২ পিএম, শুক্রবার, ৭ আগস্ট ২০২০ | ৬৪৩

৬৫দিনের অবরোধ শেষে সাগরে গিয়ে অনেকেই ফিরেছেন ইলিশ শূণ্য ট্রলার নিয়ে। প্রথম ট্রিপে প্রত্যেক মহাজনকে এক লাখ থেকে দেড়লাখ টাকা করে লোকসান গুণতে হয়েছে। আবার দ্বিতীয় ট্রিপের প্রস্তুতি নিতেই শুরু হয় নি¤œচাপ। বৈরী আবহাওয়ায় সমস্ত ফিশিং ট্রলার অবস্থান করছে উপকূলে। বর্তমানে দ্বিমুখী সংকটে পড়ে ভালো নেই বাগেরহাটের শরণখোলার ইলিশের জেলে-মহাজনরা। এদিকে, বেশ কয়েকজন ট্রলার মালিক লোকসানে পড়ে সাগরে যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই বলেও হতাশা প্রকাশ করেছেন।

সাগরে ইলিশ না পাওয়ার ব্যাপারে জেল-মহাজনদের অভিযোগ এবং যে যুক্তি, তা হলো বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সময়ে ভারতে মাছ ধরা অব্যাহত থাকে। এসময় ভারতের জেলেরা অবাধে এদেশের জলসীমায় ঢুকে অবাধে ইলিশ শিকার করে নিয়ে যায়। একারণে অবরোধ শেষ হলেও বাংলাদেশ সীমানা ইলিশ শূণ্য হয়ে পড়ে। তাদের দাবি উভয় দেশ একই সময়ে অবরোধ দিলে এককভাবে কোনো দেশ ইলিশ সংকটে পড়বে না। বিশেষজ্ঞরাও মৎসজীবিদের এই যুক্তির সঙ্গে অনেকটা একমত পোষন করেছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রায়েন্দা-রাজৈর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শত শত ফিশিং ট্রলার নোঙর করে আছে। বাজারঘাট করে সাগরে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছেন জেলেরা। সাগর উত্তাল তাই ট্রলারেই অলস সময় পার করছেন তারা।

রায়েন্দা বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী এফবি আরিফুল ইসলাম ট্রলারের মালিক মো. আলামীন ঘরামী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, অবরোধ শেষে দাদন ও ধারদেনা করে দুই লাখ টাকা খরচ করে ট্রলার পাঠিয়েছিলেন সাগরে। মাত্র ৫০০ইলিশ নিয়ে ট্রলার ঘাটে ফেরার পর ওই মাছ বিক্রি করেছেন এক লাখ ২০হাজার টাকায়। প্রথম চালানেই তার ৮০হাজার টাকা লোকসান। তাই টাকার অভাবে দ্বিতীয়বার ট্রলার সাগরে পাঠাতে পারবেন না বলে হতাশা ব্যক্ত করেন।

এফবি সাগর-১ ট্রলারের মালিক বিলাশ রায় কালু বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, তার সোয়া দুই লাখ টাকা খরচ হয় প্রথম ট্রিপে। মাছ পেয়েছেন ৩০০। বিক্রিতে নেমেছে মাত্র ৮০হাজার টাকা। তার লোকসান হয়েছে এক লাখ ৪৫হাজার টাকা। মো. ইউনুচ হাওলাদারের এফবি মাছরাঙ্গা ট্রলারে দুই লাখ টাকা খরচ করে মাছ বিক্রিতে নেমেছে এক লাখ ২০হাজার টাকা। খাদা গ্রামের রহমান মৃধার খরচ হয় দুই লাখ। তার জালে মোটেই ইলিশ ধরা দেয়নি। কিছু অন্য সামুদ্রিক মাছ নিয়ে ট্রলার ঘাটে ফেরার পর বিক্রি করেছেন মাত্র ৩০হাজার টাকায়।

শরণখোলা মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সভাপতি মো. দেলোয়ার ফরাজী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, তার এফবি রূপসা ট্রলারে খরচ হয় দুই লাখ টাকা। কিন্তু গোন শেষে সামান্য কিছু ইলিশ ও বাজে মাছ নিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসে জেলেরা। সেই মাছ বিক্রি করেছেন মাত্র ৬০হাজার টাকায়। প্রথম গোনে (ট্রিপে) তার মতো সব মহাজনেরই লোকসান হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় মৎস্য সমিতির শরণখোলা উপজেলা শাখার সভাপতি মো. আবুল হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, প্রথম গোনে আমার এফবি মুন্না-১ ও এফবি জিসান-১ নামের দুটি ট্রলার সাগরে পাঠাতে খরচ হয় সাড়ে চার লাখ টাকা। দুটি ট্রলারে ইলিশ ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ মিলিয়ে বিক্রি হয়েছে দুই লাখ ৭৮হাজার টাকা। আমার লোকসান গুণতে হয়েছে এক লাখ ৭২হাজার টাকা।

অনেকেতো টাকার অভাবে সাগরে যেতেই পারবেনা। তার ওপর দ্বিতীয় ট্রিপে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেই সাগরে নি¤œচাপ দেখা দেয়। সাগরে প্রচন্ড ঢেউ হচ্ছে। এ অবস্থা শরণখোলা উপজেলা থেকে গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণকারী প্রায় ৬০০ফিশিং ট্রলার বিভিন্ন ছোট ছোট নদী-খালে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতি আরো কয়েকদিন থাকলে দ্বিতীয় ট্রিপেও চরম লোকসানে পড়তে হবে। বর্তমানে জেলে-মহাজনরা দাদন ও ধারের টাকা কিভাবে শোধ করবেন সেই চিন্তায় রয়েছেন।

মৎস্যজীবি নেতা আবুল হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ৬৫দিনের অবরোধ শেষে সাগরে প্রচুর ইলিশ পাওয়ার কথা। কিন্তু সাগর একেবারেই ইলিশ শূন্য হয়ে পড়েছে। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে, আমাদের জলসীমায় ঢুকে ভারতের জেলেদের অবাধে মাছ শিকার। তাই দুই দেশে একই সময় অবরোধ দিলে আমাদের এই সংকটে পড়তে হতো না।

এব্যাপারে বাগেরহাটের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ডক্টর মো. খালেদ কনক মৎস্যজীবিদের যুক্তিকে সমর্থন জানিয়ে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, যেহেতু বিষয় একই। তাই বাংলাদেশ, ভারত এবং থাইল্যান্ডের নীতিনির্ধারকরা বসে একই সময়ে ইলিশের অবরোধের সময় নির্ধারণ করলে এককভাবে কোনো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তাছাড়া, অনেক সময় ইলিশের বিচরণের গতিপথও পরিবর্তন হয়। ইলিশ না পাওয়ার এটাও একটা কারণ হতে পারে। আবার, বর্তমানে সাগরে পানির প্রবাহ বেশি। যার ফলে, জেলেরা গভীরে যেতে না পারায় জালে ইলিশ ধরা পড়ছে না বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত