সুন্দরবন থেকে পাচারের সময় ৩৪ পেডি শুটকি মাছ উদ্ধার

মো.মাসুদ রানা, মোংলা

আপডেট : ০৮:৩৭ পিএম, বুধবার, ১২ আগস্ট ২০২০ | ৬৭৮

সুন্দরবনের বিষ দিয়ে মাছ শিকারের অভিনব কৌশল হাতে নিয়েছে চোরা শিকারীরা। বন বিভাগের চোখ ফাঁকী দিয়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে মাছ শিকার করে এবার লোকালয়ে না এনে বনের মধ্যেই শুকিয়ে শুটকি তৈরী করার পদ্ধতি বানিয়ে তা ট্রলার বোঝাই করে বাজারজাত করছে বনের মৎস্য সম্পদ ধ্বংসকারী জেলে নামের দুর্বৃত্তরা। বনের গহীন থেকে ট্রলার বোঝাই করে শুটকি মাছ নিয়ে পাচারের সময় ৩৪ পেডি মাছসহ একটি ট্রলার আটক করে বনরক্ষিরা। মঙ্গলবার রাতে পশুর নদীতে টহলরত অবস্থায় অভিযান চালালে বনরক্ষিদের উপস্থিতি বুজতে পেরে ট্রলারটি নদীর কিনারায় রেখে সংশ্লিষ্ট চোরা শিকারীরা বনের মধ্যে পালিয়ে যায়। যার ফলে বিষ সন্ত্রাসীদের কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানায় ঢাংমারীর ফরেষ্ট ষ্টেশন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন খানঁ।

ষ্টেশন কর্মকর্তা বলেন, বেশ আগে এক সময় মোংলাসহ এর আশপাশ উপজেলার কিছু জেলে নামধারী দুর্বৃত্তরা বনের ভিতরে গিয়ে খালে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করতো। এছাড়া বনের মুল্যবান গাছ পাচারের প্রবনতাও ছিল অনেক বেশী। সরকারের প্রচেষ্টায় এবং বন বিভাগসহ আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা তৎপর থাকায় বনের গাছ পাচার প্রায়ই বন্ধ হয়েছে। আর বনের বিভিন্ন খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকারও কমে এসেছে, তার পরেও এলাকার কিছু অসাধু ব্যাবসায়ী ও প্রভাবশালীদের সহায়তায় বন বিভাগের চোখ ফাঁকী দিয়ে মাছ শিকার করছে। বর্তমানে সরকারের নির্দেশনায় গত ১ জুলাই থেকে সুন্দরবনের সকল প্রকার পাশ-পারমিট বন্ধ, যা চলবে আগামী ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত। যেহেতু সুন্দবনের মানুষের যাতায়াত কম, এই সুযোগে বনরক্ষিদের চোখ ফাকিঁ দিয়ে গোপনে বনের মধ্যে প্রবেশ করে মাছ শিকার করছে চোরা শিকারীরা। আর তা দিয়ে বনের কাঠ পুড়িয়ে শুটকি তৈরী করছে একদল বিষ সন্ত্রাসীরা। ইতোমধ্যে বন বিভাগ. কোষ্টগার্ড, নৌকাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা বনজুড়ে দস্যুদমনসহ বিষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। আটকও হয়েছে বেশ কয়েকজন জেলে বেশধারী বিষ প্রয়োকারীদের, হরিণ শিকারীসহ উদ্ধারও করা হয়েছে জাল নৌকা ও মুল্যবান বোতলজাত (কিটনাশক) বিষ।

এছাড়া বহুদিন থেকে খবর আসছে বনে বিষ দিয়ে একদল মাছ শিকারীরা বনরক্ষিদের চোখ ফাকি দিয়ে গোপনে নতুন পদ্ধতি তৈরী করে বনের গহীনে সুন্দরবনের মুল্যবান কাঠ পুড়িয়ে মাছের শুটকি তৈরী করছে। তা ট্রলার বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করছে জেলে নামের এসকল বিষ সন্ত্রাসীরা। মঙ্গলবার রাতে রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ বন বিভাগের পৃথক দল বেধে পশুর নদীতে অভিযান দিচ্ছিল। এসময় পশুর নদী দিয়ে একটি ট্রলার বোঝাই অবস্থায় নিচ থেকে উঠে আসছিল। ট্রলারটি চ্যালেন্স করে থামাতে বলে ঢাংমারীর ফরেষ্ট অফিসের বনরক্ষিরা। অভিযানে বন বিভাগের উপস্থিতি বুঝতে পেরে সাথে সাথে করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের পাশে নদীর চরে ট্রলারটি ফেলে পালিয়ে যায় পাচারকারী দলটি। ট্রলারে তল্লাশী চালিয়ে ৩৪ পেডি শুটকি মাছ উদ্ধার করে এবং ইঞ্জিন চালিত ট্রলারটিকেও জব্ধ করা হয়। বুধবার বিকালে উদ্ধারকৃত শুটকি মাছ ঢাংমারী ফরেষ্ট অফিসে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। বনে অবৈধ প্রবেশের দায়ে জব্দকরা ট্রলারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পুর্ব সুন্দবনের মোংলার চাদঁপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা এনামুল হক বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, রাতে অভিযান চালিয়ে ট্রলারসহ শুটকি মাছগুলো উদ্ধার করা হয়েছে কিন্ত কোন দুর্বৃত্তকে আটক করা সম্ভব হয়নি। বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাংমারী ষ্টেশনের পাশে মাছগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া ট্রলারটির বিরুদ্ধে অজ্ঞাতনামা বন আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। তবে কারা অবৈধভাবে বনের মধ্যে মাছ শিকার করে কাঠ পুড়িয়ে শুটকি তৈরী করছে তা অনুসন্ধানের জন্য অভিযান চলছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত