মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের সাহায্যে

ঘাস চাষে আগ্রহী হচ্ছে পিলজংগ গ্রামের চাষীরা

জিএম মিজানুর রহমান

আপডেট : ১১:১৬ পিএম, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০১৮ | ১৭৬৮

মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের মাধ্যমে এলাকাবাসীর আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপশি চাষীরা ঘাস চাষে উৎসাহিত হচ্ছে। বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার পিলজংগ গ্রামে ৮০ একর জমির উপর ১৯৮৪-৮৫ অর্থ-বছরে কয়েকটি মুখ্য উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশের একমাত্র মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারটি স্থাপিত হয়। প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে এ খামারটির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল শংকর জাতের মহিষ উৎপাদনের মাধ্যমে জনসাধারনকে মহিষ চাষে উদ্বুদ্ধ করা। যার ফলে এলাকাবাসী মহিষ দিয়ে জমি চাষ সহ মাংস ও দুধের চাহিদা পূরণ করতে পারবে।


সময়ের বিবর্তনে ও কৃষি কাজে আধুনিক প্রযুক্তির ছোয়ায় লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ উঠে গেছে। মহিষ পালন ও মহিষ দিয়ে জমি চাষ এক সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের আভিজাত্যের পরিচয় বহন করলেও যুগের পরিবর্তনে উন্মুক্ত খালবিলের অভাবে এ অঞ্চলের মানুষ মহিষ চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তারপরও এই মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারটি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মহিষ প্রজনের কাজটি অব্যাহত রেখেছে। নিলা রাভী, মেডিটেরিয়ান মুরাহ সহ বিভিন্ন উন্নত শংকর জাতের মহিষের বাচ্চা উৎপাদনের মাধ্যমে বড় আকারের এড়ে মহিষ ও ১০-১৫ কেজি দুধ উৎপাদনকারী গাভী পালন হচ্ছে।

মহিষের সংখ্যা কমাতে বা বার্ধক্য অথবা অসুস্থ্য মহিষ টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করে এলাকায় আমিষের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ২০০ লিটার মহিষের দুধ এলাকাবাসীর মাঝে বিক্রি করে এলাকাবাসীর দুধের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। খামারটির অন্য আরেকটি উদ্দেশ্যের মধ্যে ছিল ঘাস উৎপাদন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম এবং জৈব সার উৎপাদন। খামারটি স্থাপনের পর থেকে উন্নতজাতের ঘাসের মাদার ষ্টক তৈরি করে ঘাসের কাটিং ও বীজ জনসাধারনের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণ করে গবাদি পশুর খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে আসছে। বিভিন্ন স্থানের চাষীরা এখান থেকে ঘাসের বীজ নিয়ে ঘাস উৎপাদনের মাধ্যমে গবাদি পশুর খাদ্য যোগায়। খামারটিতে প্রায় ৫০ একর জমিতে পারা, নেপিয়ার, জার্মান, গহমা সহ বিভিন্ন জাতের ঘাস চাষ করা হয়েছে।

পিলজংগ গ্রামের সাইফুল নামের একজন কৃষক বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, তিনি খামার থেকে বিনা মূল্যে ঘাসের বীজ নিয়ে ঘাষ উৎপাদনের মাধ্যমে ৩ টি গরু উৎপাদন করছেন। তিনি কয়েক বছর থেকে ঘাষ চাষ করে আসছেন। খামারটিতে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ১০০ ভাগ অগ্রগতি ও অর্জন হয়েছে বলে অফিস সূত্র জানায়। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে গাভী উৎপাদেনের লক্ষমাত্রা ছিল ১১০টি, উৎপাদিত হয়েছে ১১০ টি। দুধ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিল ৯০০০০ লিটার, উৎপাদিত হয়েছে ৯৫৫৯৩ লিটার। বাচ্চা উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিল ১১০ টি, উৎপাদিত হয়েছে ১১০ টি। ষাড় উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিল ৪০ টি, উৎপাদিত হয়েছে ৪২ টি। বকনা উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিল ১০০ টি, উৎপাদিত হয়েছে ১৭১ টি। ঘাস উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিল ৫০ একর, ঘাষ উৎপাদিত হয়েছে ৫০ একর।

খামারটির ব্যবস্থাপক ডা: মো: লুৎফর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, খামারটিতে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের শতভাগ অর্জন হলেও একটি আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি ল্যাবলেটরী স্থাপন করা হলে দীর্ঘ মেয়াদী কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম পরিচালনা ও হিমায়িত সিমেন তৈরি করা সম্ভব হতো। তিনি আরও বলেন ২০ লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ২০০ টি গাভী মহিষ আমদানী করা সম্ভব হলে দৈনিক ২০০০ থেকে ২৫০০ লিটার দুধ উৎপাদন সম্ভব হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় এক লক্ষ টাকা। খামারটিকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিতে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান। তিনি ঘাস চাষের সম্প্রসারণ সম্পর্কে বলেন, দিনে দিনে এলাকায় ঘাস চাষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। শুধু এলাকার চাষী নয়, অন্যান্য জেলার চাষীরাও এখান থেকে ঘাসের বীজ সংগ্রহ করে থাকেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত