খুলনা বিভাগে ৮০ শতাংশ ধান সংগ্রহের লক্ষক্ষ্যত্রা পূরণ হয়নি

খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে ধান বিক্রি করতে পারেননি প্রান্তিক চাষিরা

বাবুল সরদার

আপডেট : ১২:৩৯ এএম, শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৬২১

বোরো ধান সংগ্রহের সরকারি লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে বাগেরহাটে। অর্থাৎ বাগেরহাট খাদ্য বিভাগ লক্ষ্যমাত্রার ৯৩ ভাগের অধিক পূরণ করতে পারেনি। গোটা খুলনা বিভাগে পূরণ হয়নি প্রায় ৮০ শতাংশ। এ অবস্থায় সংগ্রহের সময় আরও ১৫ দিন বৃদ্ধি করা হয়েছে।

খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: মাহবুবুর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, খাদ্য অধিদপ্তরের আওতায় এবার খুলনা বিভাগে এখনও পর্যন্ত সর্বমোট ২১ শতাংশ ধান সংগ্রহ করা গেছে। আর চাল সংগ্রহিত হয়েছে ৬০ শতাংশ। এবছর ধানের উৎপাদন ভাল হবার পরেও কেন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, করোনা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ-সহ নানা কারনে স্থানীয় বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় সরকারি মূল্যে ধান বিক্রিতে উৎসাহ দেখায়নি কৃষকরা। ফলে শত চেষ্টা করেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় সংগ্রহের সময়সীমা আরও ১৫ দিন বৃদ্ধি করে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে, এসময়ে লক্ষ্যপূরণে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সরকারি লক্ষ্যমাত্রার অনেক কম ধান সংগ্রহ হলেও এবার ধানের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন, সিন্ডিকেট আর বিভিন্ন নিয়মকানুনের প্যাচে পড়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যে খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে ধান বিক্রি করতে পারেননি প্রান্তিক চাষিরা। বাধ্য হয়ে কম মূল্যে স্থানীয় বাজারে ধান বিক্রি করতে হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে বাগেরহাট থেকে সরকার নির্ধারিত ২৬ টাকা কেজি দরে ৬ হাজার ৪১৮ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ধান সংগ্রহের সময়সীমা ছিল ২৬ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে বাগেরহাটের ৯টি উপজেলায় ৪৩৯ দশমিক ৪ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করেছে খাদ্য বিভাগ। শতকরা হিসেবে অর্জনের পরিমাণ মাত্র ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। একই সময়ে সিদ্ধ চাল ও আতপ চালও সংগ্রহ করেছে খাদ্য বিভাগ। ধান সংগ্রহ না হলেও ২৭ আগস্ট পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৪ হাজার ৭৯২ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৪৪৪ টন সংগ্রহ করা হয়েছে। ৪৮৮ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রায় অর্জিত হয়েছে ৪২৬ টন।

তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাগেরহাট জেলায় এবার ৫২ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭০ টন বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে এত ধান উৎপাদন হওয়ার পরেও মাত্র ৬ হাজার ৪১৮ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। বিভিন্ন গুদামের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা, অসহযোগিতা ও খাদ্য বিভাগের নানা নিয়ম কানুনের কারণে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারেননি এমন অভিযোগ রয়েছেন অনেক কৃষকের। খাদ্য বিভাগ স্থানীয় বাজারে দাম বেশি থাকার কথা বললেও কৃষক ও ধান ব্যবসায়ীদের দাবি স্থানীয় বাজারে ধানের দাম অনেক কম ছিল।

বাধাল বাজারের ধান ব্যবসায়ী ও কৃষক মোহাম্মাদ আলী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, মে মাসের প্রথম থেকে জুন মাস পর্যন্ত ধানের দাম ছিল সাড়ে ৬শ থেকে ৭৮০ টাকা। পরে ৯শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কিন্তু সরকারি দাম তো ১ হাজার ৪০ টাকা মণ। সরকারি ধান ক্রয়ের পদ্ধতি সহজ করা হলে এবং সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ করা গেলে খাদ্য বিভাগের কাছে কৃষকরা ধান বিক্রি করতে আগ্রহী হবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কচুয়া উপজেলার এক কৃষক বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমার কৃষি কার্ড রয়েছে। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বললেন আপনারা ধান বিক্রি করতে চাইলে কৃষি কার্ড দিয়ে আবেদন করেন। আমি উপ-সহকারী স্যারের কাছ থেকে ফরম সংগ্রহ করে আবেদন করলাম। কিন্তু পরে খাদ্য গুদামে খোঁজ নিতে গেলাম। সেখানে জানতে চাইলে বলল আমার নাম লটারিতে বাধে নাই। পরে অনেক কষ্টের উৎপাদিত ধান বাজারে ৭৮০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। আমার বাড়ির আশপাশের কোনো কৃষকও ১ হাজার ৪০ টাকা মনে সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে পেরেছে বলে আমার জানা নেই।’ সদর ও চিতলমারী উপজেলার একাধিক কৃষক একই কথা বলেন।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার সিরাজ ও শহিদুল বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ধান বিক্রি করার জন্য কয়েকবার খাদ্য গুদামে গেছি। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে ধান কেনেননি তারা। তাঁর মনে হয়েছে কারসাজির কারনে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেননি খাদ্য বিভাগ।

বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল হাকিম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, সরকারের চাওয়া হচ্ছে কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। সেটা খোলা বাজারে পেলে কোনো সমস্যা নেই। কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে আমরা চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অনেক ক্ষেত্রে অর্জন করতে পেরেছি। ধান সংগ্রহের মেয়াদ আরও ১৫ দিন বৃদ্ধি পেয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত