সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার চেয়ে বন্দর চেয়ারম্যানসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মচারীদের আবেদন

মোংলায় সিবিএ ’র সম্পাদকের বিরুদ্ধে দূর্ণীতির অভিযোগ

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ০৮:৫২ পিএম, সোমবার, ১৬ নভেম্বর ২০২০ | ৭১৯

মোংলা বন্দর কর্মচারী সংঘ (সিবিএ)’র খুলনা শাখা কমিটি গঠন নিয়ে চলমান দ¦ন্ধে বেরিয়ে আসচ্ছে সাধারন সম্পাদকের নানা অনিয়মের তথ্য। তার দূর্ণীতি, সেচ্ছাচারীতা ও ক্ষমতা অপব্যাবহারে নিয়ে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছি বন্দর সংশ্লিষ্ট সাধারন কর্মচারীদের মধ্যে। সাধারন সম্পাদক ফিরোজের কর্মকান্ডে কার্যনির্বাহী কমিটির বাকি ১১ সদস্যও ঐক্যবদ্ধ হয়ে অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বন্দর চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিয়েছে। এছাড়াও সম্পাদক ফিরোজের দূর্ণীতি আর সেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে বন্দর চেয়ারম্যানসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন রফিকুল ইসলাম নামের বন্দরের এক কর্মচারী।


মোংলা বন্দর সিবিএর সাধারেন সম্পাদক ফিরোজের বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগে বলা হয়, বর্তমান মোংলা বন্দর কর্মচারী সংঘের সাধারন সম্পাদক মোঃ ফিরোজ কর্মচারী ইউনিয়ন ও ব্যবস্থাপনা নির্ভরশীল চুক্তি ভঙ্গ করে মোংলা বন্দরে চাকুরীতে প্রবেশ করেন। বন্দরের নিয়ম নিতীকে তোয়াক্কা না করে বিধি বহিঃভুত ভাবে তার আরো এক ভাই মোঃ শাহিনকে গ্রীজার পদে চাকুরীতে অন্তরভুক্ত করান। তবে আবেদনে তার ভাই শাহিন কে নির্ভরশীল কোটা দেখানো হলেও ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করানো হয় জেলা কোটায়। তখন সাতক্ষিরা এলাকার কোন জেলা কোটা ছিলোনা বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। চাকুরীর বয়সের সীমাকে ধামাচাপা দিয়ে জাল সনদ তৈরী করে চাকুরীতে প্রবেশ করানো হয় শাহিন কে। ফিরোজ ও শাহিনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম স্বপন পূর্ব থেকে বন্দরে কর্মরত থাকায় তৎকালীন নিয়ম অনুযায়ায়ী দুইজনের চাকুরী নিয়মানুসারে অবৈধ ভাবে চাকরী নিয়েছে বলে দাবী করা হয়।

এছাড়া ২০০২-২০০৩ সালে ক্লিনহার্ট অভিযানের সময় ৬/৭ মাস ছুটি না নিয়ে আত্বগোপনে থাকেন ফিরোজ। পরে বন্দরের কয়েকজন দুর্ণীতিবাজ কর্মকর্তার সহায়তায় ভুয়া মেডিকেল দিয়ে চাকুরীতে বহাল হন। সিবিএর সাধারন সম্পাদক ফিরোজ বন্দরের হারবার বিভাগে লাইসেন্স ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন। সেই সুবাধে বন্দর সীমানায় চলাচলকারী সকল নৌযানের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত ভয়ভীতি দেখিয়ে বিপুল পরিমান নগদ অর্থ আদায় করে আসছেন বলে অভিযোগে রয়েছে তার বিরুদ্ধে।


কিছু দিন পূর্বে বন্দরের কিছু কর্মচারীর পদোন্নতি হয়। সিবিএর সাধারন সম্পাদক হয়ে যেখানে ক্ষমতা অপব্যাবহার করে একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে ফিরোজ বহু টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে দাবি করা হয়। সাধারন সম্পাদকের পদ ব্যবহার করে বন্দর কর্তৃপক্ষের গাড়ী রিকুইজিশনের মাধ্যমে তার বিভিন্ন আত্বীয় স্বজনদের চলাচল করতে দেয়া হয়েছিলো বলে অভিযোগে উল্ল্যেখ আছে। একই সাথে ২০১০ সালে তিনি জাহাজ চলাচল সহকারী পদে পদোন্নতী গ্রহন করেন। কিন্ত ওই পদের কোন কাজ না করে ফিরোজ পোষ্টিং নেন ভান্ডার রক্ষক পদে। সেখানে থাকা অবস্থায় আবারও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে লাইসেন্স পরিদর্শক পদে পদন্নোতি নেয় তিনি। নিয়ম অনুযায়ী তিন বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকার কথা থাকলেও সে নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগে দাবি করেন রফিকুল। সাধারন সম্পাদক ফিরোজ এর ভায়রার লাইসেন্স ব্যবহার করে বন্দরের হিরন পয়েন্ট নীল কমল খালের ড্রেজিং কাজ করান। সেখানে মাটি বা পলি নিয়মানুসারে খনন না করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। নদী খনন কাজে ব্যস্ত থাকায় অফিসে দীর্ঘ দিন অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। হাজিরা খাতায় পরে এসে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন ফিরোজ। এভাবে সিবিএর সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ক্ষমতা দেখিয়ে অবৈধ অর্থ উপর্জন করে অল্প দিনেই কোটি টাকা দিয়ে বিলাশ বহুল বাড়ী ও গাড়ীর মালিক হয়েছেন ফিরোজ।


সিবিএর সাধারন সম্পাদক ফিরোজের এমন কর্মকান্ডে সংগঠনটির সভাপতি সাইজদ্দিন মাষ্টার প্রতিবাদ করায় গত ৩ নভেম্বর তার হাতে লাঞ্চিত হতে হয়েছে। এব্যাপারে কার্য নির্বাহী পরিষদের অন্য ১১ সদস্য একত্রিত হয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দাখিল করে।


এব্যাপারে অভিযুক্ত মোংলা বন্দর কর্মচারী সংঘের সাধারন সম্পাদক মোঃ ফিরোজ কিছুটা সত্যতা স্বীকার করে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, সংগঠনের কাজ করতে গেলে একটু সমস্যা হতেই পারে, তবে তিনি কোন অনিয়মের সাথে জড়িত নয়। আর এনিয়ে লেখা-লেখী হলে তার কিছুই যায়-আসে না বলে মন্তব্য করেন সম্পাদক ফিরোজ


সিবিএর সভাপতি সাইজুদ্দিন মাস্টার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, সংগঠনের নিয়ম বহিঃভুত কাজের প্রতিবাদ করায় সম্পাদকের সাথে মতবিরোধ হয়েছে। বন্দর চেয়ারম্যানকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে, তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। যেহেতু আমরা বন্দরে কর্মচারী তাই চেয়ারম্যনের নিদেশনা পেলেই সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে সম্পাদক ফিরোজ’র বিরুদ্ধে।


মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বন্দর কর্মচারী সংঘের নের্তৃবৃন্দের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবঝি নিয়ে সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে একটু বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, বিষয়টি আমার অবগত। এছাড়া সম্পাদক ফিরোজের বিরুদ্ধে অন্য এক কর্মচারী একটি লিখিত অভিযোগ করেছে, এব্যাপারেও খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত