জন দূর্ভোগ চরমে, ড্রেজার জব্দ

চিতলমারীতে খাল থেকে বালু উত্তোলনে সড়কে ধ্বস

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ০৫:৪৪ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ | ৬৮৬

বাগেরহাটের চিতলমারীতে খাল থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নালুয়া-ভোলা সড়কের কয়েকশ ফুট ধ্বসে গেছে। ঝুকিতে রয়েছে আরও অর্ধ কিলোমিটার সড়ক। চিতলমারী উপজেলার গুরুত্বপূর্ন এই সড়ক ধ্বসে যাওয়ায় জন দূর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। ঝুকি নিয়ে ভ্যান, অটো, বাইসাকেল ও মটর সাইকেল চললে বন্ধ রয়েছে বড় যানবাহন চলাচল।

স্থানীয়দের দাবি ইউপি চেয়ারম্যান সরদার মাসুদুর রহমান খাল থেকে বালু উত্তোলনের ফলে রাস্তার এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান বলছেন বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে বালু উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন। বালু উত্তোলনকারীদের শনাক্ত ও অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটিকে চলাচলের উপযোগী করার আশ^াস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মারুফুল আলম।


স্থানীয়রা জানান, ৪ কিলোমিটারের নালুয়া-ভোলা সড়কটির পাশে রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ ফুট চওড়া হক ক্যানেল (কাটাখাল)। এই ক্যানেলের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয়ভাবে তৈরি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। বালু উত্তোলনের ফলে ক্যানেলের গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে সড়কের বড়বাড়িয়া মোহাম্মাদ আলীর বাড়ির সামনের রাস্তায় ফাটল দেখা দেয়। সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) নাগাদ রাস্তার অর্ধেক জুড়ে প্রায় দেড়শ থেকে দু‘শ ফুট ক্যানেলের পাশ থেকে ধ্বসে গেছে। এতে ওই স্থান থেকে বড় যান বাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঝুকির মধ্যে রয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক। যা যেকোন সময় ধ্বসে পড়তে পারে। অন্যদিকে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড খালটি স্কাভেটর দিয়ে খনন করেছে। সড়কের কোল ঘেষে স্কাভেটর চালনা করে খাল খননেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ন এই সড়কটি। এভাবে কয়েকদিন চলতে থাকলে এবং খালের পানি আরও কমলে সম্পূর্ণ রাস্তা ধ্বসে যাওয়ার সঙ্কা রয়েছে। যেকোন মূল্যে সড়কটিকে চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন তারা।


সড়ক সংলগ্ন গোলা এলাকার লিটন শেখ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমার বাড়ির সামনের খাল থেকে ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদ সরদার মাসুদ সরদার বালু উত্তোলন করে সাড়ে চার লাখ বালু বিক্রি করেছেন। গোলা কবর স্থান, রবিউলসহ বিভিন্ন জায়গায় এই বালু বিক্রি করেছেন চেয়ারম্যান। বালু উত্তোলন করায় রাস্তায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। রাস্তা ভেঙ্গে গেলে আমার বাড়িও বিলীন হবে এই খালে।


স্থানীয় পারুল বেগম, মোঃ আল আমিন খান, বুলবুল শিকদারসহ কয়েক জন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান সরদার মাসুদুর রহমান এই খালে ড্রেজার বসিয়ে বালু উঠিয়ে বিভিন্ন লোক ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেছেন। চেয়ারম্যানকে বারবার নিষেধ করা হলেও তিনি কোন তোয়াক্কা করেননি। এখন জনগুরুত্বপূর্ন এই রাস্তাটি খালে বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। মোহাম্মাদ আলীর বাড়ির সামনে থেকে ধ্বসের ফলে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে। ভ্যান ও অটোতে যারা চলছে তারাও এক ধরণের ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে। গত রাতেও একটি অটো উল্টে এক শিশু ও তার মা আহত হয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলেও আরও বড় দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এক ধরণের জোড় জবরদস্তি করে খালের বালু খনন করে যারা এত বড় ক্ষতি করল আমাদের তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু কাটার জন্য এই রাস্তা ভেঙ্গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য কায়েম আলী।


চিতলমারী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলেনা পারভীন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, রাস্তাটি ধ্বসের ফলে জনগন মারাত্মক দূর্ভোগে পড়েছে। যাদের বালু উত্তোলনের ফলে সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।


চিতলমারী উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবেরা কামাল স্বপ্না বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমরা সড়কটি পরিদর্শণ করেছি। এখানে চলাচলে মানুষের দূর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।


বালু উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান সরদার মাসুদুর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ায় আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এই ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত না। যারা বালু উত্তোলন করেছেন তাদেরকে খূজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।


চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মারুফুল আলম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বিভিন্ন সময় স্থানীয় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন ও খাল খননের ফলে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমি সড়কটি পরিদর্শণ করেছি। ঘটনাস্থল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত স্থানীয়ভাবে তৈরি দুটি ড্রেজার মেশিন ও আনুসঙ্গিক মালামাল জব্দ করেছি। কিন্তু ওই ড্রেজার মেশিনের কোন মালিক পাওয়া যায়নি। জব্দ করার পরে কেউ ড্রেজারের মালিকানাও দাবি করেননি। সড়কটি চলাচলের উপযোগী করতে আমরা এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছি। যত দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব সড়কটিকে চলাচলের উপযোগী করা হবে।


তিনি আরও বলেন, রাস্তা ধ্বসের বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায়ও কথা বলব। রাস্তার ধ্বসের প্রকৃত কারণ উদঘাটন ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত