২০১৯-২০২০ চক্রের ভিজিডি সঞ্চয় ফেরতে অনিয়মের অভিযোগ, তদন্তে উপজেলা প্রশাসন

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৫:০৫ পিএম, বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল ২০২১ | ৭১১

প্রতিকী ছবি

শরণখোলা উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ২০১৯-২০২০ চক্রের ভিজিডি (ভারনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট) কর্মসূচির দুই হাজার ৯০৫ জন উপকারভোগীর জমাকৃত সঞ্চয় ফেরতে অনিয়ম হয়েছে কি না তা যাচাইয়ে মাঠে নেমেছে উপজেলা প্রশাসন। সম্প্রতি রায়েন্দা ইউনিয়নের ৮৫৩জন উপকারভোগীর পাঁচ মাসের সঞ্চয় ফেরত নিয়ে জটিলতা তৈরী হওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ গ্রহন করা হয়।

জানা গেছে, গত ৫এপ্রিল রায়েন্দা ইউনিয়নের ৩নম্বর দক্ষিণ রাজাপুর ওয়ার্ডের কয়েকজন ভিজিডি কার্ডধারী চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলনের বিরুদ্ধে তাদের সঞ্চয় ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চারটি ইউনিয়নের গত চক্রের (২০১৯-২০২০) সঞ্চয় ফেরতের স্বচ্ছতা যাচাইয়ে ওইদিন (৫এপ্রিল) চার সদস্য বিশিষ্ট পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেন তিনি।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন, রায়েন্দা ইউনিয়নের দায়িদ্বে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পারভেজ, খোন্তাকাটায় সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রতন কুমার বল, ধানসাগরে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম এবং সাউথখালীতে পল্লী দারিদ্র বিমোচন কর্মকর্তা শিশির কুমার। তারা চারটি ইউনিয়নেই আলাদা আলাদাভাবে তাদের তদন্ত কার্য পরিচালনা করবেন। এই কমিটিকে ১১এপ্রিলের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে জমা দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, ২০১৯-২০২০ চক্রের ভিজিডি কর্মসূচি শুরুরদিকে ব্যাংকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে বিলম্ব হয়। একারণে প্রথম পাঁচ মাস কার্ডধারীরা সঞ্চয় হিসেবে প্রতিমাসে ২০০টাকা করে পরিষদের তহবিলে জমা দেন। পররবর্তীতে জুলাই মাস থেকে ব্যাংক এশিয়ার সাথে চুক্তি হওয়ার পর একাউন্ট খুলে সেখানে তাদের সঞ্চয় জমা দেন উপকারভোগীরা। কিন্তু এর আগের জমাকৃত পাঁচ মাসের অর্থ ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলেই থেকে যায়।

ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, পরিষদের হতবিলে জমাকৃত ৯টি ওয়ার্ডের ৮৫৩ জন ভিজিডি কার্ডধারীর জমাকৃত সঞ্চয় ইতিমধ্যে পরিষদের সচিবের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঞ্চয় ফেরতও দেওয়া শুরু হয়েছে। মাস্টাররোল করে বুধবার ও বৃহস্পতিবার (৭ও ৮এপ্রিল) দুটি ওয়ার্ডের টাকা দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সমস্ত ওয়ার্ডের টাকাই উপকারভোগীদের ফেরত দেওয়া হবে। এই টাকা আত্মসাৎ বা মেরে খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অথচ গ্রামের সহজ-সরল দুঃস্থ নারীদের কেউ ভুল বুঝিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আমার বিরুদ্ধে সঞ্চয় ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ করিয়েছেন। এটা খুবই দুঃখজনক।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় ২০১৯-২০২০ চক্রে শরণখোলার চারটি ইউনিয়নে ভিজিডি উপকারভোগীর সংখ্যা মোট দুই হাজার ৯০৫জন। এর মধ্যে রায়েন্দাতে ৮৫৩, খোন্তাকাটায় ৮১১, ধানসাগরে ৫৫৭ এবং সাউথখালীতে ৬৮৪জন।


মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই জানান, গত মেয়াদে ব্যাংকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে দেরি হয়। যার কারণে প্রথমদিকে সঞ্চয় জমা দেওয়া নিয়ে একটু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। চারটির মধ্যে শুধুমাত্র রায়েন্দা ইউনিয়নের উপকারভোগীরা তাদের পাঁচ মাসের সঞ্চয় চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেন। ইতিমধ্যে সেই সঞ্চয় ফেরত দেওয়া শুরু হয়েছে।


শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, রায়েন্দা ইউনিয়নের ৩নম্বর দক্ষিণ রাজাপুর ওয়ার্ডের কয়েকজন ভিজিডি উপকারভোগী মেয়াদ শেষে তাদের জমাকৃত পাঁচ মাসের সঞ্চয় ফেরত না পাওয়ার অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে শুধু রায়েন্দা ইউনিয়নই নয়, উপজেলার চারটি ইউনিয়নের কোথাও এধরণের অসঙ্গতি থাকলে তা যাচাই করার জন্য পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বড় ধরণের কোনো অনিয়ম প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত