‘সারাদিন বৃষ্টি, রাত পোহালেই কিস্তি’-বৃষ্টিতে নাকাল নিম্ন আয়ের মানুষ

এস এস সাগর

আপডেট : ০৩:২৭ পিএম, রোববার, ২০ জুন ২০২১ | ১১৭৮

একদিকে করোনার ক্রান্তিকাল। অন্যদিকে কয়দিনের বৃষ্টিতে আমরা নাকাল। ঝুপঝাপ বৃষ্টিতে ভিজে ঘর থেকে বের হইছি। দু’চার টাকা আয়ের জন্য। খাই বা না খাই, ঝামেলা তো আছে। বাজারে আসার পর সারাদিন বৃষ্টি। একটি টাকাও আয় হয়নি। কিন্তু রাত পোহালেই এনজিওর কিস্তি। তাই মহা দুশ্চিন্তায় পড়েছি। রবিবার (২০ জুন) বিকেলে এমনটাই বলছিলেন বাগেরহাটের চিতলমারী সদর বাজারের ছাতার মেকার সাধন বৈরাগী (৪৫)।

তিনি আরও জানান, স্ত্রী লতিতা বৈরাগী ও দুই ছেলেকে নিয়ে চার সদস্যর পরিবার তার। বাস করেন ওয়াপদা পাড়ার বস্তিতে। সংসারের প্রয়োজনে দুটি এনজিও থেকে লোন তুলেছেন। প্রতি সোমবারে একটি এনজিওর ৮০ হাজার টাকার বিপরীতে ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং অন্য এনজিওটির ৬০ হাজার টাকার বিপরীতে ১ হাজার ২০০ টাকা কিস্তি দিতে হয়। এমনিতেই করোনার পর থেকেই বাজার মন্দা। আর এই কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তারা নাকাল হয়ে পড়েছেন। তাই সারাদিনের বৃষ্টির পর রাত পোহালেই যে কিস্তি তা নিয়েই তিনি বিপাকে পড়েছেন।

দূর্গাপুর গ্রামের চা বিক্রেতা সনে সরকার (৪০)। মা, স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে ৫ সদস্যর পরিবার তার। উপজেলা সদর বাজারে ব্যবসা করেন। ব্যবসার জন্য একটি এনজিও থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। মাসে কিস্তি ৮ হাজার টাকা। তাই মুষলধারের বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে কিছু আয়ের জন্য দোকার খুলেছেন।

সনে সরকার জানান, কিস্তি প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু তবুও চাপে থাকতে হয়। কারণ ছোটখাট ব্যবসায়ীদের কিস্তি দেওয়াও শেষ হাতের টাকাও শেষ।

সুরশাইল গ্রামের ভ্যান চালক মোঃ আকবর আলী (৫৭)। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে ৬ সদস্যর পরিবার তার। কিছুদিন আগে বড়ির সামনে থেকে ভ্যানটি চুরি হয়ে যায়। তাই পুনরায় ভ্যান কিনতে একটি এনজিও থেকে লোন তোলেন। প্রতি সোমবার কিস্তি। তাই সব কিছুকে উপেক্ষা করে কিস্তির টাকার ধান্ধায় বেরিয়েছেন রাস্তায়।


পাটরপাড়া গ্রামের সবজি বিক্রেতা মাসুদ মোল্লা (৪২)। মা, স্ত্রী ও ছেলে মেয়েকে নিয়ে ৫ সদস্যর পরিবার তার। ব্যবসা করেন উপজেলা সদর বাজারে। ব্যবসার কাজে তিনটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই তাকে কিস্তি দিতে হয়। তাইতো সব কিছুকে দূরেঠেলে বাজারে এসে দোকান খোলা।

এ ব্যাপারে চিতলমারী বাজারের ব্যবসায়ী মিঠু বিশ্বাস, গণমাধ্যম কর্মি দেবাষিশ বিশ্বাস ও টিটব বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, শুধু সাধন বৈরাগী, সনে সরকার, মোঃ আকবর আলী ও মাসুদ মোল্লা নয়। এ উপজেলার নি¤œআয়ের কয়েক হাজার মানুষ বিভিন্ন এনজিওর ঋণের জালে আবদ্ধ। তাই তারা একদিকে করোনার ক্রান্তিকাল। অন্যদিকে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নাকাল হয়ে পড়েছে।


তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোন এনজিওর শাখা ব্যাবস্থাপক (ম্যানেজার) কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত