সোশ্যাল মিডিয়া ও বাস্তবতা!

সুমন কর্মকার

আপডেট : ১০:২২ পিএম, রোববার, ১ আগস্ট ২০২১ | ৯২৫

প্রতিকী ছবি

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি বড় অংশ দখল করে নিয়েছে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’ নামক শব্দটি। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়াতে যুক্ত নেই এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই দেখুন, প্রতিটি মানুষ ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ইমো, ভাইবার, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার কোন না কোন প্লাটফর্মে যুক্ত আছে। আর এসব নিয়েই মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে ভার্চুয়াল জীবন।



তবে সোশ্যাল মিডিয়াকে অন্যভাবেও সংজ্ঞায়িত করা যায়; একজন ব্যক্তি যেকোনো একটি এপ্লিকেশন ব্যবহার করে তাৎক্ষনিকভাবে অন্যদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করছে। এছাড়া সামাজিক, রাজনৈতিক, ব্যাবসা-বানিজ্য সহ মানুষের বাস্তব জীবনে গুরুতপূর্ণ ভূমিকাও রাখে।


কিন্তু বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি মানুষের আসক্তি এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে বাস্তব জীবনের চেয়ে ভার্চুয়াল জীবনের গুরুত্বটাই প্রাধান্য পাচ্ছে। মানুষের আবেগ, অনুভূতি, ভালোলাগা, মন্দলাগা, কি করছে, কোথায় যাচ্ছে, কি খাচ্ছে এগুলো তাৎক্ষনিকভাবে অন্যদের মাঝে বিভিন্ন কন্টেন্ট, ফটো বা ভিডিওর মাধ্যমে শেয়ার করতে না পারলে যেন পেটের ভাত হজমই হয় না। এ যেন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত অবস্থা। এগুলোই যেন বাস্তব জীবন থেকে সরে এসে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া মানুষের মূল লক্ষ্যে পরিনত হয়েছে। আবার অনেকেই এসব করতে যেয়ে কুচক্রের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। যা বাস্তব জীবনের উপর খারাপ প্রভাবও পড়ছে।


উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, বর্তমানে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে ‘ফেসবুক’ জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া হিসেবে পরিচিত হয়েছে। আজকাল ফেসবুকে ঢুকলেই দেখা যায় মা-বাবা কে নিয়ে কত শত আবেগী পোষ্ট। নারীর রুপ, অধিকার, সম্মান নিয়ে প্রতিটা স্টাটাস যেন আন্দোলনের স্বরুপ। কুকুর, বিড়াল নিয়ে হাজার হাজার ছবি। তাদের ড্রিম প্লেস থাকে গয়া, কাশি, বৃন্দাবন, মক্কা, মদিনা কেদারনাথ সহ দুনিয়ার সকল তীর্থ স্থান। এখানে যেন সবাই ধোয়া তুলসীপাতা।



বাস্তবিক উদাহরন দিয়ে যদি একটু ব্যাখ্যা করে বলি, ‘মা-বাবা’ কে নিয়ে লেখা থাকে কিছুটা এরকম...‘প্রতি মুহূর্তে যদি তোমায় নিয়ে কেউ চিন্তা করে তাহলে জানবে সে শুধুই তোমার মা-বাবা! পৃথিবীর কোন কিছুর সাথে মায়ের তুলনা করা যায় না। বাবা নামটা উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার এক অনুভব জাগে। সারা জীবন পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যে পরিশ্রম করেন বাবা। মা-বাবা কে দেখলেই স্বর্গীয় অনুভূতি তৈরি হয়। মা-বাবার যতœ নিলে পৃথিবীর কোন মন্দির, মসজিদ, গির্জায় আর ঘুরতে হবে না তোমায়। আমার মা-বাবা আমার পৃথিবী, আমার স্বর্গ। আরো আরো কত আবেগী কথা প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়ায় ফেসবুকের নিউজ ফিডে। কিন্তু বাস্তবে এর সাথে কতটুকু মিল আছে? যদি বাবা-মায়ের প্রতি এতটাই শ্রদ্ধা, ভালোবাসা প্রতিটা মানুষের মধ্যে তাহলে পৃথিবীতে কেন এত বৃদ্ধাশ্রম? কেন একমুঠো খাবারের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করতে হয় সেই সব বৃদ্ধ বাবা-মা দের? কেন তাদের বৃদ্ধাবস্থায় চোখের জল ফেলতে হয়?


প্রতিটা নারীর রুপ, অধিকার, সম্মান নিয়েই এত এত স্টাটাস দেওয়ার পরও কেন আজও নারী ধর্ষন, নির্যাতনের শিকার হয়? কেন একটা কালো মেয়ে অন্যের ভালোবাসার পাত্রী হয় না? কিন্তু ফেসবুকে কালো মেয়েই জগতের আলো। এইতো কয়েকদিন আগের কথা..একটা কালো মেয়ের ছবি নিয়ে এত এত পোষ্ট, লেখা আরো কত্ত যে ঢং দেখলাম। এ বিষয়ে আর কথা না বলি..


কুকুর, বিড়ালের প্রতি এত ভালোবাসা নিয়ে হাজার হাজার ছবি আপলোড করে, একটা ক্ষুধার্ত বানরের খাবারের আশায় নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা একটা ছবি নিয়ে রীতিমত আবেগে কেঁদে দেওয়ার মতো পোষ্ট করার পরও রাস্তার কুকুর, বিড়াল গুলো কেন আজও অনাহারে। বন থেকে লোকালয়ে চলে আশা বানরের দল ক্ষুধার যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে মারা যায় একের পর এক। সামান্য একটু খাবার নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসে না সেই সব ফেসবুকে পোষ্ট করা ঐসব দয়ালু ব্যক্তিরা।


প্রতিটা ব্যক্তির ড্রিম প্লেস তীর্থ স্থান হয়ে থাকা সত্ত্বেও হোটেল বা পার্কে যেয়ে অশ্লীল, অনৈতিক কর্মকান্ডে সাথে লিপ্ত হয় তারা। আসলে এগুলো ¯্রফে নাটক। সৎ মানুষ সাজার ধান্দা মাত্র।


ফেসবুকের প্রতিটা ছেলে মেয়েই সিঙ্গেল, তবুও তারা সব সময় ডিপ্রেশনে ভোগে। কিন্তু কেন? তাদের পোষ্ট গুলো দেখলে মনে হয় তারা প্রেম-ভালোবাসা করে দুনিয়া উল্টিয়ে ফেলছে। অথচ তারা সিঙ্গেল..ভাবা যায়! যাইহোক এই প্রেম ভালোবাসা নিয়ে এখন বেশি কথা নাইবা বলি, পরে না হয় অন্য কোন একটি লেখায় এই প্রেম ভালোবাসার কথা বলবো।



আসলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা যা কিছু দেখি তার সাথে বেশিরভাগ সময়েই বাস্তবের কোন মিল নেই। এখানে সবাই উদার চিত্তের মানুষ, সবাই ভালো, সবাই সৎ, সবাই ধোয়া তুলসীপাতা। অথচ করুন বাস্তবতা...

সোশ্যাল মিডিয়ার এত এত সৎ উদার চিত্তের মানুষের মধ্যে ১০ শতাংশ মানুষ যদি সমাজে থাকতো তাহলে সমাজের আরো অনেক উন্নতি হত।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত