মোংলা বন্দরে শ্রমিক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ, খালাস-বোঝাই বন্ধ

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ০৮:২৫ পিএম, বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৬৯৯

মোংলা সমুদ্র বন্দর জেটিতে শ্রমিকরা বিশেষ পোষাক না পরায় শ্রমিককে জেটির ভিতর থেকে বের করে দিয়েছে বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তুচ্ছ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের উপর গুলি করার হুমকি দেয় বন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মেহেদী।

খবর পেয়ে সিএ্যান্ডএফ’র মালিক ও তাদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা তৎক্ষনিক মোংলা বন্দরে এসে শ্রমিকদের সাথে একাত্নতা ঘোষনা করে জেটি এলাকার সকল পন্য খালাস-বোঝাইয়ের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন শ্রমিকদের। ঘটনার পর পরই জেটির অভ্যান্তরে বিভিন্ন কন্টেইনারে খালাস-বোঝাই কাজ বন্ধ করে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার গেটের সামনে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। এছাড়া আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার অপসারন ও কেন শ্রমিকদের গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছে তদন্ত করে তার সুষ্ঠ বিচারের দাবী জানিয়েছেন তারা। উদ্ধুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বন্দর এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের ও নৌ কন্টিনজেন্ট সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এরপর বিক্ষুদ্ধ কর্মচারীরা তার কার্যালয় ছেড়ে বাহিরে গিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ করতে থাকেন।

মোংলা বন্দর সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুলতান হোসেন খাঁন বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, প্রতিদিনের মত তাদের জেটি সরকার শ্রমিকদের নিয়ে মোংলা বন্দর জেটিতে খালাস-বোঝাইয়ের কাজে প্রবেশ করতে চাইলে এতে বাধা দেন বন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা। কাজে আসা শ্রমিক কর্মচারীরা এ্যাপ্রোন (বিশেষ পোশাক) পরে না আসায় এসকল শ্রমিকদের বন্দরের জেটিতে প্রবেশের বাধা দেয় তারা বলে অভিযোগ করে তিনি। এ সময় কর্মচারীরা এমন নিয়ম শুনে আপত্তি করলে তাতে গুলি করার হুমকি দেয় প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মেহেদী বলেও অভিযোগ করে সভাপতি সুলতান হোসেন।

এ ঘটনার পর পরই ক্ষুদ্ধ হয়ে জেটি এলাকার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় এবং তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মেহেদী তার কার্যালয়ের ভিতরে অবস্থান করছিলেন। শ্রমিকরা তাদের গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়ায় ভীত সন্তষ্ট হয়ে পরায় শ্রমিকদের মালিকরাও তাদের সাথে একত্নতা ঘোষনা করে তার অপসারনের দাবী জানায়।

মোংলা বন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মেহেদী বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, শ্রমিকরা কখন জেটি এলাকায় প্রবেশ করছে এবং কার গায়ে বিশেষ পোষাক (এ্যাপ্রোন) নেই তা আমি কিছুই জানিনা। আর আমিতো জেটির ভিতরে প্রবেশও করিনি, তা হলে শ্রমিকদের গুলি করার প্রশ্নই ওঠেনা। তবে যারা আমার কথা বলেছে তারা প্রকৃত শ্রমিক নয়, কারণ শ্রমিকদের দেখভাল করার দায়িত্বে নিরাপত্তাকর্মীরা ও নৌ-বাহিনীর সদস্যরা রয়েছে।

মোংলা বন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের (কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং) সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, মোংলা বন্দর যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হচ্ছে সেখানে আমরা এখন কাজ করতে পারছিনা। আমরা চাই সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বন্দরকে সচল রাখতে এবং অর্থনৈতিক ভাবে বন্দরের রাজস্ব বৃদ্ধি করতে আর বন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা এ বন্দরকে অচল করার চেষ্টা করছে বলে আমি মনে করি বলে জানায় এ্যাসেশিয়েশনের এ নেতা। সামান্য পোষাক না পরায় আমাদের দুইজন শ্রমিক কর্মচারীকে গুলি করে মেরে ফেলার নির্দেশের ঘটনার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তার অপসারন ও সুষ্ঠ বিচার না হওয়া পর্যন্ত মোংলা বন্দরের জেটি এলাকায় সকল প্রকার কাজ বন্ধ থাকবে। তিনি আরো বলেন, আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে এ ঘটনার সুরাহা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দেয় সিএ্যান্ড এফ নেতা।

মোংলা বন্দরের হারবার মাষ্টার কমান্ডার শেখ ফকর উদ্দিন বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানায়, আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের পালায় বন্দরের জেটিতে কিছু শ্রমিক পিপিই (পার্সোনাল প্রটেক্ট ইকুপমেন্ট) পোষাক পরে প্রবেশের নিয়ম থাকলেও তারা সেগুলো না পরে জোর পুর্বক জেটিতে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এসময় নিরাপত্তা কর্মীরা বাধা দিলে তাদের সাথে কথা কাটাকাটি হয় এবং প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার অফিস কার্যালয় নিয়ে যায় এবং সেখানে আলি হোসেন ও ইরাত হোসেন’র জেটি সরকারের লাইসেন্স রেখে দেয়। যার কারনে ক্ষুব্ধ হয়ে অফিস থেকে শ্রমিকরা বের হয়ে আন্দোলনের চেষ্টা করে এবং প্রধান নিরাপত্তা অফিস ও নিরাপত্তা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। তবে বন্দরের চেয়ারম্যান বা অন্যান্য কর্মকর্তার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ না করে বন্দরের সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করছে কিছু সিএ্যান্ডএফ মালিক ও শ্রমিক কর্মচারীরা যা একেবারেই অনাকাংঙ্খিত।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত