কমিটি বাগিয়ে নিতে চলছে জোড় তদবীর

দীর্ঘ ১৮ বছর পর হচ্ছে মোংলা থানা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি

মাসুদ রানা,মোংলা

আপডেট : ০৬:৫৩ পিএম, সোমবার, ২৫ অক্টোবর ২০২১ | ৮৪৭

প্রতিকী ছবি

মোংলায় বিএনপি সহ তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে হাইকমান্ড । গতানুগতিক পদ্ধতিতে না গিয়ে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি করে ত্যাগী এবং সিন্ডিকেট মুক্ত নেতাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব নির্বাচনের চিন্তা করছে দলের হাইকমান্ড সহ বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। এরই মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলকে গোছানোর প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছে জেলা সেচ্ছাসেবক দল। ২/১ দিনের মধ্যে ঘোষণা করা হতে পারে মোংলা সহ বাগেরহাট জেলার সকল ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি বলে বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে নিশ্চিত করেন বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক।


মোংলা স্বেচ্ছাসেবক দলের তৃনমূল কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে প্রভাব বিস্তারের জন্য সিনিয়র নেতারা দৌড় ঝাপ করছেন ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে স্ব-শরীরে দেখা করে এবং তা তৃনমূল কর্মীদের বুঝিয়ে দেয়ার জন্য তাদের সাথে তোলা ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় আপ করছেন। এখনে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে তাদের মন্তব্য। তারা মোংলায় কোন নেতার চাকুরীজীবী কর্মচারীদের স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে স্থান না দেয়ার জন্য জোর দাবী জানান।

সর্বশেষ ২০০৪ সালের কেন্দ্রীয় কমিটি সহ বাগেরহাট জেলা কমিটির মাধ্যমে মোংলা থানা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট পুনাঙ্গ কমিটি করা হয়েছিল।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশা প্রকাশ করে বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে কয়েকজন নেতা বলেন, মোংলা থানা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের বিষয়ে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যুবদল যেখানে সাংগঠনিক কার্যক্রম চূড়ান্ত করছে, সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের কাজ হয়েছে মাত্র কয়েক শতাংশ। সেজন্য স্বেচ্ছাসেবক দল পুনর্গঠন করবেন তারেক রহমান। নতুন কমিটিতে প্রাধান্য পাবেন ছাত্রদলের সাবেক নেতারা। তবে কমিটি গঠনে এবার থাকবে না ‘সিন্ডিকেট’র প্রভাব। যারা প্রভাব বিস্তার করবেন তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যাবস্থা।


সম্প্রতি যে মোংলা যুবদল ও ছাত্রদলের কমিটি গঠিত হয়েছে, তা থেকেই এমন ইঙ্গিত মিলছে। বলা হচ্ছে, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্বে এগিয়ে থাকবেন তারাই, যারা আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়, যাদের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ, যারা যোগ্য ও ত্যাগী নেতা এবং কর্মীদের সঙ্গে যাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন বিএনপির হাইকমান্ড সহ জেলার নেতারা । কার্যক্রমে গতি আনতে ত্যাগী ও যোগ্যদের হাতেই নেতৃত্বের ভার তুলে দিতে চান বাগেরহাট জেলা নেতৃবৃন্দ ।


স্বেচ্ছাসেবক দল সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের তদারকিতে বিশেষ টিমের তত্ত্বাবধানে সারাদেশে (উপজেলা-থানা-পৌর) কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সংগঠনটির কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা পড়েছে অনেকগুলো খসড়া কমিটি।

মোংলা থানা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেউ কেউ কমিটি করার পক্ষে। তাদের যুক্তি, দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করলেও অনেকে বিশেষ করে ছাত্রদলের সাবেক নেতারা এখনো পদ-পদবি পাননি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে পদায়নের মধ্য দিয়ে তাদের অনেকের কাজের মূল্যায়ন ও সাংগঠনিক পরিচয় নিশ্চিত হবে, যা তাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথ সুন্দর করবে।


কারও কারও মতে, মোংলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি যেহেতু মেয়াদোত্তীর্ণ। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করলে আরও সময়ক্ষেপণ হবে। তার চেয়ে নতুন কমিটি হলে সেটা সংগঠনের জন্য ইতিবাচক। এতে সংগঠনে আসবে প্রাণচাঞ্চল্য, নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হবে চাঙ্গাভাব।স্বেচ্ছাসেবক দলের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের আশা, তাদের সাংগঠনিক পরিচয় নিশ্চিতে বর্তমান এ কমিটি গ্রহনযোগ্য হবে।

এদিকে মোংলা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্বে আসার আলোচনায় রয়েছেন- মৃধা ফারুকুল ইসলাম, পলাশ, জুয়েল, লালন সহ অনেকের নাম। অপর দিকে পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্বে আসার আলোচনায় রয়েছে শাহজালাল সাব্বির, মোহন উদ্দিন, সোলিম রেজা,হেলাল ও দিদারের নাম।

স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান পৌর শাখার আহবায়ক বাবলু ভূইয়া বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, কমিটি গঠন বা পুনর্গঠন একটি সংগঠনের উন্নতির জন্য চলমান এবং কার্যকর পদক্ষেপ। দলের হাইকমান্ড সহ জেলার নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে সংগঠনকে আরও গতিশীল করাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য।

বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম ভুইয়া তানু বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, দীর্ঘ ১৮ বছর পর আমরা স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ২/১ দিনের মধ্যে ঘোষনা করবো। কমিটি নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। দীর্ঘদিন ধরে যারা রাজপথে আছেন, দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন, কর্মসূচিতে আছেন, তাদের পদায়ন হওয়া, রাজনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন।


নতুন কমিটি প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, কমিটি গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে দলের হাইকমান্ড চাইলে যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য তারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাকেই স্বাগত জানাবো আমরা জেলা নেতৃবৃন্দ। তবে কমিটি গঠনে কোন নেতাদের প্রভাব আছে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, আমি ও আমার সভাপতি সহ বর্তমান যারা বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্বে রয়েছি আমাদের কে কেউ এমন ভাবে প্রভাহিত করতে পারবে না।

বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম শান্ত বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, কমিটির ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কমিটি যেদিন প্রকাশ করবে সেই দিনই আমরা সবাই জানতে পারবো। তবে তার কাছেও অভিযোগ রয়েছে কালো টাকা দিয়ে মোংলা থানা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি বাগিয়ে নেয়া সহ প্রভাব বিস্তারের জন্য কিছু নেতারা ঢাকায় রয়েছেন। তবে তিনি এ বিষয়ে ভালো ভাবে জেনে এ প্রতিবেদককে পরে জানাবেন বলে মন্তব্য করেন।

আগামী পর্বে আসছে....
মোংলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি বাগিয়ে নিতে কারা নেমেছে তদবীরে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত