নানা সংকটে বিভাগীয় মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট

আলী আকবর টুটুল

আপডেট : ০২:২৩ পিএম, সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | ১৭৩২

গ্রামীণ জনপদের পিছিয়ে পড়া নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের লে দেড় যুগ আগে চালু হওয়া খুলনা বিভাগের একমাত্র মহিলা কৃষি প্রশিক্ষন ইনস্টিটিউট নানা সংকটে পড়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। ২০০০ সালে বাগেরহাট জেলা শহর ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত অঞ্চল মোরেলগঞ্জ উপজেলার তুলাতলা নামক স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয় বিভাগীয় মহিলা কৃষি প্রশিক্ষন ইনস্টিটিউট।

জানাগেছে, ২০০৫ সালে কৃষি, পশু পালন, পোল্ট্রি ও মৎস্য চাষ এই ৪টি ট্রেড নিয়ে প্রশিক্ষন কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৬ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ৫ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১০ সালে জুলাই মাসে মৌয়াল চাষ বিষয়ে সাতরিা জেলার আশাশুনি উপজেলার ২০ জন মুন্ডা উপজাতি নিয়ে প্রশিন কার্যক্রম শুরু হয়। নতুন করে ২০১১ সাল থেকে কম্পিউটার, বিউটিফিকেশন, ড্রেস মেকিং এন্ড টেইলারিং প্রশিন শুরু হয়। যা এখনও চলছে। তবে শুরুর চারটি ট্রেড ও মৌচাষ প্রকল্প বাতিল করা হলে পরে সেগুলো আর চালু করা সম্ভব হয়নি। এসব ট্রেডের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকা স্বত্ত্বেও প্রশিন কার্যক্রম নাই। যে ৪টি ট্রেডে প্রশিন চালু আছে সেগুলোতেও প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি নাই। সম্পূর্ণ আবাসিক এ প্রতিষ্ঠানটির ২১টি পদের মধ্যে ১৪টি পদ গত ১৪ বছর ধরে শূন্য।১৪টি পদের মধ্যে প্রশিক, হোস্টেল সুপার, হিসাব রন কর্মকর্তার মত গুরুত্বপূর্ণ পদও রয়েছে। হোস্টেলে নিম্ন মানের খাবার, ল্যাবে কম্পিউটার, বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। বিদুতের সমস্যায় সঠিকভাবে প্রশিণ নিতে পারেন না প্রশিণার্থীরা।


মোরশেদা আক্তার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমরা তিনমাস প্রশিক্ষনের জন্য এসেছি। একটি কম্পিউটারে একত্রে চারজন প্রশিক্ষনার্থীকে শিখতে হয়। কম্পিউটারে কাজের সময় প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যায়। সকালে গেলে বিকালে বিদ্যুৎ আসে। ঐদিন আমরা প্রশিন নিতে পারি না। আমাদের জন্য যদি সৗর বিদ্যুৎ বা জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমরা ভালভাবে শিখতে পারতাম।একজন স্যার নয়টা থেকে পাচটা পর্যন্ত কাস নেয়। আমরা বোরিং ফিল করি, অনেক সময় স্যারও বিরক্তবোধ করেন। একাধিক স্যার থাকলে আমরা ভাল ভাবে শিক্ষা অর্জন করতে পারতাম।

জোসনা আক্তার, আসমা আক্তার, আফরোজা আক্তার সহ বেশ কয়েকজন শিার্থী বলেন, এখানে যারা আছেন তারা খুবই আন্তরিকতার সাথে আমাদের প্রশিন দেয়। এখানে নিরাপত্তা জনিত কোন সমস্যা নাই। তবে হোস্টেলে খুবই নিম্ন মানের খাবার খাওয়ানো হয়। হোস্টেলে স্থায়ী কোন বাবুর্চি নাই। অস্থায়ী ভাবে নিয়োগকৃত যে আছে তাকে রান্নার কাজে আমাদের সহযোগিতা করতে হয়। যে কারণে প্রশিনের তি হয়। এছাড়াও খাবার পানির জন্য একটি পুকুর আছে, যা শীত মৌসুমে শুকিয়ে যায়। খাবার পানির জন্য বিকল্প ব্যবস্থার দাবি করেন শিার্থীরা।

কম্পিউটার প্রশিক মোঃ আসাদুজ্জামান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, মেয়েদেরকে যথেষ্ট আন্তরিকভাবে প্রশিন দেই। প্রশিক ও কম্পিউটার সংকটের কারণে কিছু সমস্যা হয়ে থাকে।

প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক প্রশিন ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোহাঃ মোখলেচুর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বিভিন্ন জটিলতার কারণে প্রশিনার্থীদের সব ধরণের সুযোগ সুবিধা দিতে পারছি না। প্রতিষ্ঠান শুরুর সময় যে উপকরণ ছিল এখনও সেই উপকরণে চলছে। এখন পর্যন্ত নতুন কোন প্রশিন উপকরণ পাইনি। বর্তমানে ৪ টি ট্রেডে আটজন প্রশিক্ষক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৩ জন। ল্যাবে ১২টি কম্পিউটারের মধ্যে ৫টিই নষ্ট। আর ৭টি জোড়াতালি দিয়ে কোনমতে চলছে। ১৫টি কম্পিউটার প্রয়োজন। বর্তমানে ৭০ জন প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষক দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় এসব উপকরণ না থাকার কারণে শিার্থীরা পিছিয়ে যাচ্ছে। এ ধরণের একটা ইনস্টিটিউটে হোস্টেল সুপার নাই, হিসাব রন কর্মকর্তাসহ অনেক পদই শুন্য রয়েছে। যার কারণে মূল কাজ ব্যহত হচ্ছে।


তিনি আরও বলেন, একজন শিার্থীর ৯০ টাকায় একদিন খেতে হয় এটা কষ্টকর। এটা ১৭ বছরের আগের বাজেট এখনও চলমান। যার কারণে প্রনার্থীদের মানসম্মত খাবার সরবরাহ করতে পারি না।

তিনি বলেন, এখান থেকে ১ হাজার ৫‘শ ৭৪ জন নারী প্রশিন নিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে নিজে প্রতিষ্ঠান করে কাজ করছে। আবার অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছে।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বিভাগীয় মহিলা কৃষি প্রশিন ইনস্টিটিউট এর প্রধানের সাথে কথা বলে সংকটের বিষয়ে কর্তৃপকে অবহিত করে সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত