রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনও করিলি ওরে বাঙ্গালি, ঢাকা শহর রক্তে ভাসাইলি গানের রচয়িতা

ছয় দশকেও চারণ কবি শামসুদ্দিনের স্বীকৃতি মেলেনি

আলী আকবর টুটুল

আপডেট : ০২:৩৪ পিএম, বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | ২৪০৮

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে যখন সারাদেশ উত্তাল, মায়ের ভাষার স্বীকৃতি পেতে বাংলার দামাল ছেলে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ভাষার জন্য রাজপথে অকাতরে প্রাণ দিচ্ছে তখন অজোপাড়াগাঁর গরীব কৃষকের ছেলে স্বশিক্ষিত শামসুদ্দিনও অশান্ত হয়ে ওঠেন। তিনিও আর ঘরে বসে থাকতে পারেননি। তিনি বাগেরহাটে রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য রাজপথে নেমে পড়েন। এই অশান্ত স্বশিক্ষিত শামসুদ্দিন নিজে নিজে রচনা করেন বিদ্রোহের গান। তার লেখা গান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনও করিলিরে বাঙ্গালি, ঢাকা শহর রক্তে ভাসাইলি এই গানটি তিনি গেয়ে গেয়ে প্রতিবাদ শুরু করেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শেষে তার রচনা করা গানটি আমাদের দেশের গুণি শিল্পীদের কন্ঠে পরিবেশিত হয়েছে। এই গানটি এখনো সবার মুখেমুখে ফেরে। তিনি বেঁচে থাকতে তো দুরের কথা, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ছয় দশক পার হলেও সেভাবে মেলেনি তার কোন স্বীকৃতি। ১৯৭৪ সালে চারণ কবি শামসুদ্দিনের জীবনাসন হয়। স্মৃতি হিসেবে চারণ কবি শামসুদ্দিনের ব্যব‎হ্নত একটি একতারা রয়েছে।

এদিকে ভাষার মাসে ভাষা আন্দোলনের কবি শেখ মোঃ সামসুদ্দিন আহমেদ কে স্মরণ করেছে জেলা প্রশ্সান। সোমবার সকাল ১১টায় বাগেরহাটের বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুরে কবির বাড়িতে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এক স্মরণ সভা হয়।

বাগেরহাট-পিরোজপুর সড়কের পাশে বাগেরহাটের ফতেপুর গ্রামে শামসুদ্দিনের বাড়ি। শামসুদ্দিনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছোট ছেলে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় এবং বড় ছেলে, পুত্রবধু ও নাতিরা বসবাস করছেন। অভাবের সংসারে ছেলেমেয়েরাও পড়ালেখা শিখতে পারেনি।

কবি শামসুদ্দিনের বড় ছেলে শেখ দেলোয়ার হোসেন খোকন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘আমার বাবা রাষ্ট্রভাষার একজন সংগ্রামী সিপাহী ছিলেন। ভাষা আন্দোলন নিয়ে তার রচনা করা গান সবার মুখেমুখে। ভাষা আন্দোলনে তার যে অবদান ছিল তার স্বীকৃতি সেভাবে মেলেনি। বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের দাবি আমার বাবা যেন রাস্ট্রীয় স্বীকৃতি পান’।


জানা গেছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে দরিদ্র কৃষক পরিবারে শামসুদ্দিনের বেড়ে ওঠা। তিনি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে কিছুদিন পড়ালেখা করেছেন। কিন্তু দারিদ্রতার কারনে তা আর বেশিদুর এগোয়নি। তাই তাকে নেমে পড়তে হয় উপার্জনের পথে। ড. শেখ গাউস মিয়ার মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতাযুদ্ধ বাগেরহাট নামে লেখা বইতে শামসুদ্দিনের রচনা করা গানটি স্থান পেয়েছে। এই গানটির কথা উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের খ্যাত লেখক ও সংষ্কৃতি ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীও। যা গাউস মিয়ার বইয়ে উল্লেখ করেছেন। স্থানীয় প্রশাসন স্বীকৃতি হিসেবে গ্রামের বাড়িতে যেখানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে সেই কবরটি সংরক্ষিত করে তা বাধিয়ে দিয়েছে। ভাষা আন্দোলনে তার অবদানের জন্য বাগেরহাট ফাউন্ডেশন ও মোবাইলফোন অপারেটরনামে একটি সংগঠন মরণোত্তর সনদ ও ক্রেষ্ট দিয়েছে তার পরিবারকে।


চারণ কবি শামসুদ্দিনকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বাগেরহাট -২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, কবি শামসুদ্দিনের পরিবারের প্রত্যাশা এই কালজয়ী সংঙ্গীত রচনা এবং আন্দোলনকে বেগবান করার যে ভুমিকা সেটি যাতে রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃতি পায় সেটাই তাদের একান্ত দাবী। আমি তাদের দাবীর সাথে একমত পোষন করছি। সারাদেশে ভাষা সৈনিকদের সম্মানিত করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ভাবে যে ভাবে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে, তেমনি ভাবে এই গানের রচয়িতা কালজয়ী কবিকে একই ভাবে স্বীকৃতি দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আমরা বাগেরহাট বাসি তাকে নিয়ে গর্বিত। আমি আশাকরি ভাষা আন্দোলন মাসে তার প্রতি যেন সরকার আন্তরিক হয়ে তার কর্মের স্বীকৃতি দেয়। এটাই আমি দাবী করছি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত